
ঠিকানা রিপোর্ট : কালজয়ী গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের স্মৃতি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীরা। ৫ ডিসেম্বর সোমবার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের জন্মদিনে নিউইয়র্ক কনস্যুলেটের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়।
নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ড. মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের হাতে স্মারক লিপি তুলে দেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার স্মরণ সংসদের সদস্য সচিব গোপাল সান্যাল।
কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলাম বলেন, গৌরীপ্রসন্ন মজুদার একজন বিশিষ্ট গীতিকার। তিনি বাংলাদেশের একজন অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি গানে গানে অকূতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। যথানিয়মে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপিটি দ্রুততম সময়ে পৌঁছে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন কসনাল জেনারেল।
গোপাল সান্যাল বলেন, পাবনা শহর থেকে যে দাবিটি উত্থাপিত হয়েছিল তা আজ দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও প্রবাসীদের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, সুচিত্রা সেনের বাড়িটি উদ্ধার হয়েছিল এ সরকারের আমলেই। তাই প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিলে কালজয়ী এ গীতিকারের স্মৃতি রক্ষাও সম্ভব।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় নিউইয়র্কের ডেপুটি কনসাল জেনারেল নাজমুল হাসান, ফার্স্ট সেক্রেটারি প্রসুন চক্রবর্তী, ভাইস কনসাল আসিব উদ্দিন আহমেদ, সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকী, চিত্রশিল্পী ও সাংবাদিক জাহেদ শরীফ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট শুভ রায়, সাংবাদিক মো. আবদুল হামিদ, সুখেন জোসেফ গমেজ, স্বাধীন মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার স্মরণ সংসদ তাঁর স্মৃতি সংরক্ষণে পৈত্রিক বাড়িটিতে নির্মিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির নামকরণ, হাসপাতালের সামনে স্মৃতিফলক স্থাপন ও পরিত্যাক্ত স্থানে জাদুঘর নির্মানের দাবি জানিয়েছে।
প্রসঙ্গত, গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জোগাতে স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত একাধিক গানের রচয়িতা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে “শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে উঠে রনি” এই কালজয়ী গানটির গীতিকার তিনি। এছাড়াও “মাগো ভাবনা কেন, আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে”, “কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই” এর মতো অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান লিখেছেন।
গৌরী প্রসন্ন মজুমদার ১৯২৫ সালের ৫ ডিসেম্বর পাবনা জেলার ফরিদপুর উপজেলার গোপালনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা স্মারক’ (মরণোত্তর) এ ভূষিত করে।
পাবনায় গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের পৈতৃক বাড়িটি এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্মৃতিচিহ্ন বলতে আছে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি তালগাছ আর একটি ঘাট বাঁধানো পুকুর। মূল বাড়ির ধ্বংসাবশেষে এখন জঙ্গল আর ময়লার স্তূপ। ১৯৭৪-৭৫ সালে গোপালনগর মৌজায় মজুমদার এস্টেটের ৩৩ একর জমি সরকার অধিগ্রহণ করে সেখানে হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে। ৫০ শয্যা হাসপাতালটি বর্তমানে ফরিদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। তখন শেষবারের মতো পৈতৃক ভিটা দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। ভারতে চলে যাওয়ার সময় গোপালনগরে গৌরীপ্রসন্নের বিশাল উঠোনসহ তিনতলা বাড়ি ছিল। ১৯৮০’র দশকে কিছু কিছু স্মৃতিচিহ্ন থাকলেও সেগুলোর কিছুই আর এখন অবশিষ্ট নেই। গোপালনগরে উপজেলা হাসপাতাল গৌরীপ্রসন্নের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হলেও সেখানে তাঁর কোনো স্মৃতিফলক পর্যন্ত নেই। হাসপাতালের পেছনেও অনেক জায়গা অব্যবহৃত পড়ে আছে।