গ্রিনকার্ডধারীদের যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অবস্থান প্রসঙ্গে

মোহাম্মদ এন মজুমদার

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রিনকার্ডধারীরা শাব্দিক অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা। স্থায়ী বাসিন্দারা যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের অঙ্গীকার করেই গ্রিনকার্ড পেয়ে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি ও আইন মোতাবেক অভিবাসী তথা গ্রিনকার্ডধারীকে নিয়মিত ও স্থায়ীভাবে যুক্তরাষ্ট্রেই বসবাস করতে হয়। তবে, সাময়িক অনুপস্থিতি, স্বদেশে গমনাগমন ও ছুটিতে বেড়ানো ইত্যাদি আইনগত বটে। আবার বারবার যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অবস্থান ও গমনাগমন বিশেষ করে এক বছরের অধিক সময় বিনা অনুমতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকাটা আইনের পরিপন্থী।
যারা বিনা অনুমতিতে বৎসরাধিককাল যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকেন, উদাহরণ স্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ডধারী বাংলাদেশিরা বাংলাদেশে অবস্থানকাল এক বছরের অধিক হলে যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপ্রবেশে বাধার সম্মুখিন হতে পারেন।
এছাড়া যারা ঘন ঘন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গমনাগমন করতে চান, তাদেরকেও বিমানবন্দরে গমনাগমনের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখিন হতে হয়।
তবে সব আইনের ক্ষেত্রেই যেমন সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম ধর্মী কিছু কিছু রুল বা ব্যতিক্রম রয়েছে, ইমিগ্রেশন বিভাগও অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যতিক্রমকে গ্রহণ করেন।
যেমন : কোন বাংলাদেশি অভিবাসী যিনি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনকার্ডধারী, তিনি বাংলাদেশে এক বছরের অধিককাল, ধরে নিন, ২০ বছর বা ততোধিক সময় বিনা অনুমতিতে বাংলাদেশে অবস্থান করেও পুনর্বার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পেতে পারেন, যদি উক্ত ব্যক্তি প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে, যে অবস্থার তিনি বাংলাদেশে অবস্থান করতে বাধ্য হয়েছিলেন, তা ছিলো তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছিলো যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অবস্থান করতে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় : গুরুতর অসুস্থতা, পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু, ডির্ভোসসহ যে কোন গুরুতর পরিস্থিতি, যা অভিবাসীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিলো, সেই কারণেই অভিবাসী ইচ্ছা থাকা স্বত্ত্বেও যথা সময়ে, তথা এক বছরের মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে পুনঃপ্রবেশে ব্যর্থ হয়েছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে পুণঃপ্রবেশ করে স্থায়ী বসবাসের স্ট্যাটাস পুনরুদ্ধার করতে পারেন। তবে সেই জন্য ও-১৩১ পূরণ করে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের টঝ ঊসনধংংু থেকে অনুমতি নিতে হয়। ও-১৩১ আবেদনের সাথে আবেদনকারীর ফটো, গ্রিনকার্ড কপি, কী কারণে আবেদনকারী যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিনা অনুমতিতে এক বছরের অধিককাল অবস্থান করেছেনÑ তার বিশদ ব্যাখ্য এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়।
এছাড়া আবেদনকারীকে প্রমাণ করতে হয় যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে তার স্থায়ী বসবাস অনড়হফড়হ বা পরিত্যক্ত করেননি। আবেদনকারীর নামে যুক্তরাষ্ট্রে অঢ়ধৎঃসবহঃ খবধংব রয়েছে, আবেদনকারী ট্যাক্স রিটার্ন ফাইল করেছেন, ব্যাংক অপপড়ঁহঃ রয়েছে।
সবশেষে গ্রিনকার্ডধারীরা আইন মেনে চলবেন। নৈতিক অধঃপতন, গুরুতর অপরাধ ও বড় ধরনের চুরি বা জালিয়াতির অভিযোগে আপনার গ্রিনকার্ড বাতিল হতে পারে। আর গ্রিনকার্ডধারীরা সিটিজেন হোন, ভোটার হিসাবে রেজিস্ট্রি করুন- এ হোক আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক পরিচিতি : এই প্রবন্ধটির লেখক মোহাম্মদ এন মজুমদার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং নিউইয়র্কস্থ টরো ল সেন্টার থেকে আইনে এলএলএম ডিগ্রিধারী, তিনি নিউইয়র্কস্থ একটি ল ফার্মে ১৯৯৯ সাল থেকে কর্মরত আছেন। এ ছাড়াও তিনি নিউইয়র্কের বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকা-ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি বিজ্ঞ প্লানিং বোর্ড-৯ এর সদস্য ফাস্ট ভাইস চেয়ারম্যান এবং ল্যান্ড এন্ড জোনিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ১৯১০ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। উপরোক্ত লিখাটি লেখকের সুদীর্ঘকালের ল ফার্মে কর্ম অভিজ্ঞতা ও ল স্কুলের শিক্ষা থেকেই লিখা। এটিকে লিগ্যাল এডভাইজ হিসেবে গ্রহণ না করে আপনাদের নিজ নিজ আইনজীবীর সহযোগিতা নিন। তিনি এখন থেকে নিয়মিত ঠিকানার পাঠকদের জন্য লিখবেন।