ঠিকানা অনলাইন : সব অনিশ্চয়তা ও শঙ্কা দূর করে পোল্যান্ডকে ২-০ গোলে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে আর্জেন্টিনা। ‘সি’ গ্রুপের সেরা হওয়ায় রাউন্ড অব সিক্সটিনে মেসিদের প্রতিপক্ষ ‘ডি’ গ্রুপের রানার্সআপ অস্ট্রেলিয়া।
হারলে বিদায়, ড্র করলে পড়তে হবে সমীকরণের মারপ্যাঁচে। আর পোল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলে নকআউটে খেলবে আর্জেন্টিনা।
এমন বাঁচা-মরার ম্যাচে চাপ নিয়ে খেলতে নামা ম্যাচে দাপট দেখিয়ে বেড়ায় আর্জেন্টিনা। শুরুতেই কর্নার পায় তারা। ডি মারিয়ার কর্নার থেকে হেড প্রতিহত হয়। পাল্টা ক্রস থেকে ওটামেন্ডির হেড বাইরে। ফলে পাল্টা আক্রমণে যায় পোল্যান্ড। ম্যাচের ১০ মিনিটের সময় মেসির ডান পায়ের দুর্বল শট শেজেনির বাঁচাতে অসুবিধা হয়নি। সামান্য আগে বল পেয়েছিলেন মেসি। তার শট প্রতিহত হলো সতীর্থের গায়ে লেগেই। ফের একটি সুযোগ পেয়েছিলেন। সেটাও বাঁচিয়ে দেন পোলিশ গোলকিপার শেজেনি।
এভাবেই একের পর এক আক্রমণ চালাতে থাকে আর্জেন্টিনা। সেটা প্রতিহত করতে থাকেন শেজেনি। মাঝে তারাও চালায় পাল্টা আক্রমণ। তাতে পর পর ফ্রি কিক ও এক কর্নার পায়। ম্যাচের ২২ মিনিটের সময় পাওয়া দুটির কোনো সুযোগই কাজে লাগাতে পারেনি তারা।
চাপের মাথায় সব যেন গুলিয়ে ফেলেছিলেন রবার্ট লেভানডফস্কিরা। অতি রক্ষণাত্মক মনোভাব নিয়ে খেলতে থাকা পোল্যান্ডকে দেখে তা-ই মনে হয়েছে। তাদের সব ফুটবলারই নিজেদের সীমানার বাইরে গিয়েছেন কমই। যেন পাল্টা আক্রমণের আশায় ক্ষণ গুনছিল পোল্যান্ড। কিছুক্ষণ আগেই মেসির শট গোলকিপার বাঁচান। তার পরই আকুনার শট পোস্টের পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।
একবার মেসি আক্রমণে যান তো পরক্ষণেই আবার ডি মারিয়া। কম যান না জুলিয়ান আলভারেজও। তাদের দাপটে বল যেন পোল্যান্ডের সীমানা ছাড়া করাই যায় না। কিন্তু গোলের দেখা মেলে না। এভাবেই আর্জেন্টিনার একের পর এক আক্রমণে সময় গড়িয়ে যায়। খেলার সময় যখন ৩৭ মিনিট, তখন গোলের মোক্ষম সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা।
আলভারেজের বাড়ানো বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে মেসির মুখে হাত চালিয়ে দেন শেজেনি। ভিএআর চেক করার পর পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেন রেফারি। তাতে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেই সুযোগ নষ্ট করে দেন পোলিশ গোলরক্ষক। মেসির শট বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাঁচান তিনি। গোল মিস করলেও আর্জেন্টিনার আক্রমণের ধার এতটুকুও কমেনি। একের পর এক আক্রমণ চলতেই থাকে। কিন্তু গোল নামক সোনার হরিণের দেখা তবু মেলে না।
মেসি সুযোগ নষ্ট করলেও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন ম্যাক অ্যালিস্টার। ডাউন দ্য লাইন দৌড়েছিলেন মোলিনা। সেখান থেকে তিনি ক্রস করেছিলেন। আর সেটাই পায়ে শুধু টোকা দিয়েছিলেন ম্যাক অ্যালিস্টার। নাগাল পাননি শেজেনি, তাতেই বল জড়ায় জালে। এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
খেলার ৬৮ মিনিটের সময় মাঝমাঠ থেকে এনজ়ো ফের্নান্দেসের পাস পেয়েছিলেন জুলিয়ান আলভারেস। ডান পায়ে নিখুঁত শটে বল জালে জড়ান তিনি। দ্বিতীয়বার এগিয়ে যাওয়ার পর জয়ের ভিত যেন আরও মজবুত হয়। খেলার ৭২ মিনিটের সময় তৃতীয় গোল পেয়ে যেত আর্জেন্টিনা। মেসিও পেয়ে যেতে পারতেন টুর্নামেন্টের চলমান আসরের তৃতীয় গোলের দেখা। বাঁ দিক থেকে সুন্দর পাস পেয়েছিলেন। অনায়াসে গোলে রাখতে পারতেন তিনি। কিন্তু তার শট সোজাসুজি আটকে দিলেন গোলকিপার।
এভাবে আরও বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি আর্জেন্টিনা। গোটা ম্যাচের ৭৪ শতাংশ সময় নিজেদের পায়ে বলের দখল রেখেছিল তারা। তাতে ২৩ বার প্রতিপক্ষের প্রান্তে শট নেয়। যার মধ্যে এক ডজন শট ছিল লক্ষ্য বরাবর। অন্যদিকে মাত্র ২৬ শতাংশ সময় পায়ে বল পাওয়া পোল্যান্ড মাত্র চারবার শট নিতে পেরেছে। যার মধ্যে কোনোটিই লক্ষ্য বরবার ছিল না। ফলে ম্যাচের অধিকাংশ সময় অলসভাবেই কাটিয়েছেন আর্জেন্টনাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজ।
ঠিকানা/এনআই