আটলান্টিক সিটি থেকে সুব্রত চৌধুরি : ২০ জুন বুধবার। দিনটি ছিল আটলান্টিক সিটি ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বসবাসরত বিভিন্ন গ্রেডের বাংলাদেশী আমেরিকান শিক্ষার্থীদের জন্য স্বপ্নপূরণের দিন। এদিন কেউবা অষ্টম গ্রেড আবার কেউ দ¦াদশ গ্রেডের সমাপ্তি টেনেছেন।
আটলান্টিক সিটি হাই স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণীতে অধ্যয়নরত প্রায় পাঁচশতাধিক শিক্ষার্থীর গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল জিম হুইলান বোর্ডওয়াক হলে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। সকাল থেকেই বাংলাদেশী আমেরিকান শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েশন গাউন পরে পরিবারের সদস্যদের সাথে অনুষ্ঠানস্থলে সমবেত হতে থাকে। তাদের সবার শরীরি ভাষায় চার বছরের কঠোর পরিশ্রম শেষে প্রাপ্তির পূর্ণতা, চোখে-মুখে খুশির আনন্দ ঝিলিক। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার পর কৃতি শিক্ষার্থীদের নাম ঘোষণার সাথে সাথে তুমুল করতালিতে গমগম করে ওঠে বিশাল মিলনায়তন। পূর্বসূরি বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এবারও উত্তরসূরী বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জয়জয়কার।
সমাবর্তন শেষে কৃতি শিক্ষার্থীরা জিম হুইলান বোর্ডওয়াক হল থেকে বেড়িয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে শুভেচ্ছা বিনিময় ও ফটো সেশনে।
বোর্ডওয়াক এর সুবিশাল চত্বর তখন গ্র্যাজুয়েটদের কলকাকলিতে মুখরিত।
বোর্ডওয়াক লাগোয়া আটলান্টিক মহাসাগরের সফেদ নীল ঢেউয়ের গর্জনকে ছাপিয়ে যায় গ্র্যাজুয়েটদের উল্লাস ধ্বনি। সমাবর্তন এর সুমধুর স্মৃতি নিয়ে গ্র্যাজুয়েটরা যখন নীড়মুখো হয় তখন মাথার ওপর সূর্যটাও বেশ তেতে উঠেছে।
আর এই জয়-জয়কার অবস্থার মধ্যে আপন আলোয় উদ্ভাসিত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত দুই কৃতি শিক্ষার্থী। তারা তাদের মেধার স্বীকৃতি হিসাবে সেরা দশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এই কৃতি শিক্ষার্থীদের সাথে আলাপচারিতার চৌম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলো-
মমতা মিলি- বাংলাদেশের সিলেট এর বালাগঞ্জের মেয়ে মমতা মিলির জন্ম বাংলাদেশে,২৫ জানুয়ারি,২০০০ সালে।মা-বাবার সাথে আমেরিকায় পাড়ি জমায় সাত মাস বয়সে। বাবা মনসুর মিয়া আর মা রীনা বেগম এর চার সন্তানের মধ্যে মমতা মিলি দ্বিতীয়।মেধা তালিকার সেরা দশে তার স্থান ষষ্ঠ।ছোটবেলা থেকেই মেধাবী মমতা মিলি লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সৃষ্টিশীল কাজে নিজেকে ব্যাপৃত রেখেছিল।তার অবসর কাটে ভলান্টিয়ার কাজে আর বই পড়ে।তার প্রিয় ব্যক্তিত্ব হযরত মুহাম্মদ(সঃ)। তার অসামান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ সে ষ্টকটন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ পেয়েছে।পেশাগত জীবনে তার ইচ্ছা ডাক্তার হওয়ার ,আর তা হতে পারলে তার অদম্য বাসনা বাংলাদেশের গরীব-দুঃখী মানুষদের ফ্রি চিকিৎসা সেবা দেওয়া।তার অসামান্য কৃতিত্বের পেছনে তার বাবা-মার অবদানই সবচেয়ে বেশি। উত্তরসূরীদের উদ্দেশ্যে তার আহবান- সেরাটা দাও,সেরাটা পাবে। আটলান্টিক সিটির ১ ফেয়ারমাউণ্ট টেরেসে বসবাসকারী সদালাপী,বন্ধুভাবাপন্ন,মিষ্টিমুখের মমতা মিলি তার ভবিষ্যত সাফল্যের জন্য সবার দোয়াপ্রার্থী।
এদিকে আটলান্টিক কাউন্টিতে বসবাসরত বাংলাদেশী-আমেরিকান শিক্ষার্থীরা অষ্টম গ্রেডের সমাপনী পরীক্ষায় অসামান্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে। আপন আলোয় উদ্ভাসিত এসব শিক্ষার্থীদের কৃতিত্বের কাহিনী নিচে তুলে ধরা হলো-
সালমা বেগম- ২৪ আগস্ট, ২০০০ সালে বাবা আবুল কালাম ও মা রোকেয়া বেগম এর কোল আলো করে এই ধরাধামে আসে সালমা বেগম।আমেরিকায় জন্ম নেওয়া সালমা বেগম চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট।তার পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের সন্দ্বীপে।মা রোকেয়া বেগমের স্নেহমাখা শাসনে বেড়ে ওঠা সালমার চলার পথে পাথেয় তার বড় আপা।তার কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ সে ছিনিয়ে নিয়েছে সেরা দশের দশম স্থানটি। নিয়মিত পড়ালেখার পাশাপাশি তার অবসর কাটে বই পড়ে,কমপিউটারে গেম খেলে।সালমা বেগম নিউজার্সির স্টকটন বিশ্ববিদ্যালয়ে কমম্পিটার প্রকৌশলে উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেয়েছে। পেশায় সালমা বেগম কমপিউটার প্রকৌশলী হতে চায়।সালমা বেগম সদা হাস্যোজ্জল, বন্ধুবৎসল, প্রিয়ংবদা। নবীনদের প্রতি তার উপদেশ সময়ানুবর্তী হওয়ার ও বড়দের উপদেশ মেনে চলার।আটলান্টিক সিটির ডোভার এভিনিউতে বসবাসকারী সালমা বেগম তার ভবিষ্যত পথ চলা যাতে মসৃন হয় সেজন্য সবার দোয়া কামনা করেছে।
এরিকা শবনম-আটলান্টিক সিটিতে বসবাসরত ইকবাল হাফিজ ও শবনম সুলতানার কনিষ্ঠ কণ্যা এরিকা শবনম ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় বেশ মেধাবী। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহনকারী এরিকা শবনম আটলান্টিক সিটির চেলসি হাইটস স্কুল থেকে অষ্টম গ্রেডের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। মেধাবী শিক্ষার্থী এরিকা শবনম অবসরে ছবি আঁকে,বেহালা বাজায়।এরিকা শবনম বন্ধুবৎসল,সদালাপী। অবসরে সে কমিউনিটির সেবামূলক কার্যক্রমে অংশ নেয়। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সে আটলান্টিক সিটি হাই স্কুলে নবম গ্রেডের ক্লাস শুরু করবে।এরিকা শবনমের পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের ঢাকা জেলায়।
তার সাফল্যের পিছনে বাবা-মা, বড় ভাই ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিক সহযোগিতা বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতে এরিকা শবনম ডাক্তার হতে চায় এবং মানব কল্যাণই তার ব্রত বলে জানায়। অষ্টম গ্রেডের পরীক্ষায় ”স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার” হওয়ায় সে কংগ্রেসম্যান, সিনেটর, এসেম্বলিম্যান, আটলান্টিক কাউন্টি শেরিফ প্রমুখের কাছ থেকে প্রশংসাসূচক সনদ লাভ করেছে। এছাড়া সে স্কুলের ‘স্পেল বি’ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেছে। ভবিষ্যত সাফল্যের জন্য সে সবার দোয়া প্রার্থী।
ওয়াসির আহমেদ লাবিব- হ্যামিলটন টাউনশীপে বসবাসরত জসিমউদদীন আহমেদ ও আরেফিন এস আহমেদ এর জ্যেষ্ঠ্য পুত্র ওয়াসির আহমেদ লাবিব বাল্যকাল থেকেই পড়ালেখায় খুব মেধাবী।২০০৩ সালে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণকারী লাবিব হ্যামিলটন টাউনশীপের উইলিয়াম ডেভিড মিডল স্কুল থেকে অষ্টম গ্রেডের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। মেধাবী ছাত্র লাবিব অবসরে বই পড়ে,কমিউনিটির সেবামূলক কার্যক্রমে অংশ নেয়। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সে ফ্লোরিডায় নবম গ্রেডের ক্লাস শুরু করবে।লাবিব এর পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায়।
তার সাফল্যের পিছনে বাবা-মা ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিক সহযোগিতা বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে। ভবিষ্যতে লাবিব ডাক্তার হয়ে মানব কল্যাণে অবদান রাখতে চায়।অষ্টম গ্রেডের পরীক্ষায় ”স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার” হওয়ায় সে কংগ্রেসম্যান,সিনেট্র,এসেম্বলিম্যান, আটলান্টিক কাউনটি শেরিফ প্রমুখের কাছ থেকে প্রশংসাসূচক সনদ লাভ করেছে।ভবিষ্যত সাফল্যের জন্য সে সবার দোয়া প্রার্থী।
সাদিয়া নিহি-আটলান্টিক সিটিতে বসবাসরত আবদুল সোবহান ও লিপি বেগমের মেজো কণ্যা সাদিয়া নিহি ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় বেশ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে আসছে।২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহনকারী সাদিয়া নিহি আটলান্টিক সিটির টেক্সাস এভিনিউ স্কুল থেকে অষ্টম গ্রেডের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে।শিশুকাল থেকে মেধাবী ছাত্রী সাদিয়া নিহি অবসরে ছবি আঁকে,বই পড়ে।চিএাংকণে সে বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছে।সাদিয়া নিহি বন্ধুভাবাপন্ন ও আমুদে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সে আটলান্টিক সিটি হাই স্কুলে নবম গ্রেডের ক্লাস শুরু করবে।সাদিয়া নিহির পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের সিলেট জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায়।
তার সাফল্যের পিছনে বাবা-মা,বড় বোন ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিক সহযোগিতা বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে।ভবিষ্যতে সাদিয়া নিহি ডাক্তার হতে চায় এবং মানব কল্যাণই তার ব্রত বলে জানায়।অষ্টম গ্রেডের পরীক্ষায় ”স্টুডেন্ট অব দ্য ইয়ার” হওয়ায় সে কংগ্রেসম্যান,সিনেট্র,এসেম্বলিম্যান, আটলান্টিক কাউনটি শেরিফ প্রমুখের কাছ থেকে প্রশংসাসূচক সনদ লাভ করেছে। ভবিষ্যত সাফল্যের জন্য সে সবার দোয়া প্রার্থী।
নুজাত রব- আটলান্টিক সিটিতে বসবাসরত রাজু রব ও সাঈদা রবের কনিষ্ঠ কণ্যা নুজাত রব ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় বেশ মেধাবী।২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহনকারী নুজাত রব আটলান্টিক সিটির চেলসি হাইটস স্কুল থেকে অষ্টম গ্রেডের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। মেধাবী ছাত্রী নুজাত রব অবসরে ছবি আঁকে,বই পড়ে।নুজাত রব বন্ধুপ্রিয়, আলাপী। অবসরে তার অনুসন্ধিৎসু মন বিজ্ঞানের বিভিন্ন অজানা বিষয় সম্বন্ধে জানার চেষ্টা করে।তারই ফলস্বরূপ সে বিজ্ঞান মেলায় অসামান্য সাফল্য পেয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সে আটলান্টিক সিটি হাই স্কুলে নবম গ্রেডের ক্লাস শুরু করবে। নুজাত রবের পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের ঢাকা জেলায়।
তার সাফল্যের পিছনে বাবা-মা,বড় ভাই ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিক সহযোগিতা বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে।নুজাত রব বড় হয়ে কমপিউটার প্রকৌশলী হতে চায় ।অষ্টম গ্রেডের পরীক্ষায় নুজাত রব ‘এ অনার রোল’ লাভ করেছে।এছাড়া স্কুলের বিভিন্ন বিষয়ে কৃতিত্বের স্বীকৃতি স্বরূপ সনদপত্র লাভ করেছে। আগামী দিনগুলোতে সাফল্যের জন্য সে সবার দোয়া প্রার্থী।
হিরো দাশ- আটলান্টিক সিটিতে বসবাসরত অমর দাশ ও স্মৃতি দাশের কনিষ্ঠ পুত্র হিরো দাশ ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখায় বেশ মেধাবী। ২০০৪ সালে বাংলাদেশে জন্মগ্রহনকারী হিরো দাশ আটলান্টিক সিটির টেক্সাস এভিনিউ স্কুল থেকে অষ্টম গ্রেডের গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে। মেধাবী ছাএ হিরো দাশ অবসরে খেলাধূলা করে,গান শোনে।হিরো দাশ বন্ধুপ্রিয় ও সময় মেনে চলে।হিরো দাশ পরীক্ষায় ‘এ অনার রোল’ পাওয়ার পাশাপাশি স্কুলে একশত ভাগ উপস্থিতির জন্য বিশেষ পুরষ্কার পেয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসে সে আটলান্টিক সিটি হাই স্কুলে নবম গ্রেডের ক্লাস শুরু করবে। হিরো দাশের পৈতৃক নিবাস বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলায়।
তার সাফল্যের পিছনে বাবা-মা,বড় ভাই ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আন্তরিক সহযোগিতা বেশ বড় ভূমিকা রেখেছে। হিরো দাশ বড় হয়ে ডাক্তার হতে চায় এবং মানুষের কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চায়।ভবিষ্যত সাফল্যের জন্য সে সবার আশীর্বাদ প্রার্থী।