ঢাকা : অবশেষে শত বছর পরে হলেও জিনজিরার ঐতিহাসিক প্রাসাদটি উদ্ধার করে গত ১৯ জুলাই বিকেলে সাইনবোর্ড টাঙিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন। এ প্রাসাদে বন্দী ছিলেন পলাশীর যুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ঘসেটি বেগম। বাংলার মোগল সুবেদার দ্বিতীয় ইব্রাহিম ১৭ শতকের শেষার্ধে কেরানীগঞ্জের জিনজিরার হাউলিতে প্রসাদ নির্মাণ করেন। প্রসাদটি মূলত নির্মিত হয়েছিল প্রমোদকেন্দ্র হিসেবে। ১৭৫৪ সালে মোগল সুবেদার মুর্শিদ কুলি খানের হত্যাকা-ের পর জিনজিরা প্রাসাদে বন্দী করে রাখা হয়েছিল ঘসেটি বেগমসহ তার পরিবারকে। পলাশীর যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর আলীবর্দী খানের স্ত্রী শরিফুন্নেসা, নবাব সিরাজউদ্দৌলার মা আমেনা বেগম, স্ত্রী লুতফুন্নেসা বেগম, মেয়ে কুদসিয়া বেগমকে জিনজিরা প্রাসাদে বন্দী করে রাখা হয়। এ পরিবারটির সঙ্গে বন্দী করে রাখা হয় পলাশীর যুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ঘসেটি বেগমকে।
গত ২২ জুলাই সকালে সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকে জিনজিরা প্রাসাদটি দখলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। ঘসেটি বেগমকে যে ঘরটিতে রাখা হয়েছিল, সে ঘরটি ফুচকা তৈরির কারখানা বানানো হয়েছিল। প্রাসাদের মূল ফটকটি এখন হারিয়ে গেছে। কালের বিবর্তনে দখল হয়ে গেছে ঘসেটি বেগমের বন্দিশালা। এ বন্দিশালা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে তেঘরিয়া ইউনিয়নের বাঘৈর এলাকায় আরেকটি প্রাসাদ রয়েছে বারঘরিয়া নামে। সেখানে নবাব সিরাজউদ্দৌলা বেড়াতে আসতেন। প্রাসাদটিতে ১২টি দরজা থাকায় নামকরণ হয় বারঘরিয়া।
জিনজিরা এলাকার বাসিন্দা বলেন, ফুচকা বানানো অবস্থায় ঘসেটি বেগমের প্রাসাদের দৃশ্য এর আগে একটি জাতীয় দৈনিকে একাধিকবার প্রকাশ করা হয়। এরপর থেকে নজরে আসে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের। অবহেলার কারণে ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি রেজাউল কবীর পলের নির্দেশে প্রাসাদটি দখল হয়ে গেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। প্রাসাদের কিছু অংশ দখল করেছেন বিএনপি নেতা রেজাউল কবীর পল। এক অংশ ভাড়া দিতেন জিনজিরা হাউলি গ্রামের মো. সাত্তার মাস্টার নামে এক ব্যক্তি। এ বিষয়ে বিএনপি নেতা রেজাউল কবির পল বলেন, প্রাসাদটি আমার বাড়ির কোল ঘেঁষে। দখলকারী মো. সাত্তার মাস্টার বলেন, প্রাসাদের জায়গা আমাদের নামে রেকর্ড আছে বলে এত দিন ভাড়া দিয়েছি। এ জমি যদি সরকারের হয়, তাহলে তাদের করার কিছু নেই। কেরানীগঞ্জ মডেল থানার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পারভেজুর রহমান বলেন, জিনজিরার ঘসেটি বেগমের প্রাসাদটি দখল করে রেখেছে একটি ভূমিদস্যু চক্র। শুধু ঘসেটি বেগমের প্রাসাদ নয়, কেরানীগঞ্জে যারা সরকারি জমি দখল করে হাউজিং গড়ে তুলছে এসব জমি উদ্ধার করা হবে। সব বাধা অতিক্রম করে সরকারি জমি উদ্ধার করা হবে।