ঘূর্ণিঝড় মিচেলের আঘাতে ফ্লোরিডা লন্ডভন্ড

ঠিকানা ডেস্ক: ঘন্টায় ১৫৫ মাইল বেগে ৪ ক্যাটাগরীর ঘূর্ণিঝড় মিচেলের আঘাতের সথে ৯ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ফ্লোরিডার প্যানহ্যান্ডেল টাউন। কর্তৃপক্ষ ১২ অক্টোবর জানায় যে ইতোমধ্যে ৩ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে এবং ১ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত দৃষ্টিনন্দন টাউনের সারি সারি ঘরবাড়ি মাটির সাথে মিশে যাওয়ায় উদ্ধারকার্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। উদ্ধারকার্যে নিয়োজিত ন্যাশনাল গার্ড ট্রুপসের ধারণা শত শত লোক বিধ্বস্ত বাড়িঘরের নিচে চাপা পড়ে আছে। তবে বাড়িঘর মাটির সাথে মিশে যাওয়ায় এবং ধ্বংসস্তুপ পথঘাট পুরোপুরি ঢেকে ফেলায় উদ্ধারকার্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি ঘূর্ণিঝড় ফ্লোরেন্সের ফলে সৃষ্ট প্রবল বর্ষণ ও প্লাবনের বানে নর্থ ক্যারোলিনা ও ভার্জিনিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হওয়া ছাড়াও ১৭ জনের প্রাণহানি এবং সহায়-সম্পদের অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধিত হয়েছিল। সেই ভয়াবহ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা এবং দগদগে ক্ষত শুকানোর আগেই বিগত ৫০ বছরের মধ্যে ১৫৫ মাইল গতিবেগসম্পন্ন সর্বাধিক ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় মিচেলের প্রলয়ঙ্করী আঘাতে ফ্লোরিডার প্যানহ্যান্ডেলের সহ¯্রাধিক মানুষ পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। ঘূর্ণি উপদ্রুত শহরের জনগণের পক্ষে এই ভয়াবহ ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে কি-না তা ভবিতব্যের বিচার্য। চোখ ঝলসানো দালান-কোঠা, রেস্টুরেন্ট ও বিপণিবিতান সজ্জিত শহরটির সব কিছু চোখের নিমেষে ধূলিসাত হওয়ায় ফ্লোরিডা প্যানহ্যান্ডেলের বাসিন্দারা খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। গভর্নর রিক স্কট বলেন, প্যানহ্যান্ডেলের ধ্বংসযজ্ঞের বর্ণনায় ভাষা হার মানতে বাধ্য। হাজার হাজার মানুষের জীবনপ্রবাহ মুহূর্তে পরিবর্তিত হয়ে গেছে। শহরের পরিবারগুলো সর্বস্ব হারিয়ে পথের ভিখেরী বনে গেছে। ধ্বংসযজ্ঞের কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে পড়ায় উপদ্রুত এলাকায় পৌঁছানো অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হচ্ছে এবং উদ্ধারকার্যে হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষত ইস্ট-ওয়েস্টের মধ্যকার সংযোগ রক্ষাকারী প্রধান রুট ইন্টারস্টেট ১০ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ৮০ মাইল রাস্তায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
জলোচ্ছ্বাসের ফলে উপকূলীয় অঞ্চল পুরোপুরি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে এবং কংক্রিটের স্ল্যাবগুলো বালিতে পরিণত হয়েছে। ১ হাজার জনসংখ্যা অধ্যুষিত শহরটি এখন নিছক বিরাণ ভ’মি এবং ধ্বংসস্তুপের মহাশ্মশান বলে ন্যাশনাল গার্ড ট্রুপস জানান। স্টেট কর্মকর্তাগণ জানান, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই মেক্সিকো বীচের ২৮৫ জন বাসিন্দাকে বাড়িঘর থেকে অন্যত্র সরিয়ে যাওয়ার কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা সত্ত্বেও অনেকেই তা প্রকাশ্যে অমান্য করেছিল বলে জানান কর্তৃপক্ষ। ফলে তাদের করুণ পরিণতি বরণ করতে হয়েছে। মিচেল ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে গালফ কোস্টের উপর নিচের ৩ লাখ ৭৫ হাজার জনগণকে অন্যত্র সরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া কিংবা অনুরোধ জানানো হয়েছিল। ইমার্জেন্সী কর্তৃপক্ষ জানায় যে অনেকে সে অনুরোধ উপেক্ষা করায় এখন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।
ন্যাশনাল গার্ড ট্রুপসইতোমধ্যে ২০ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছেন বলে জানান। এদিকে ১৪ অক্টোবর আরও জানান যে হাজার হাজার নিখোঁজের অনুসন্ধান ও উদ্ধারকার্যে হাজার হাাজর আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য, ফায়ারফাইটার, পাওয়ার ক্রুজ, ন্যাশনাল গার্ড ট্রুপস ও স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত রয়েছেন। হাজার হাজার ছাত্রÑছাত্রীর ভবিষ্যতও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। সাড়ে চার লাখের বেশি বাড়িঘর, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
মিশেলে ম্যাকফারসন এবং তার সাবেক স্বামী তাদের এক বন্ধুর বৃদ্ধা জননীকে ধ্বংসস্তুপের নিচে খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। ন্যাশনাল গার্ড ট্রুপকে তারা জানান যে বৃদ্ধা গালফ থেবে প্রায় ১৫০ ফুট দূরে ছোট সিন্ডার ব্লক হাউজে বাস করতেন। এখন বাড়িটি মাটির সাথে মিশে আছে। অথচ বৃদ্ধার কোন খোঁজ মিলছেনা।