চট্টগ্রামে প্রতিদিন ভাঙছে শতাধিক সংসার

চট্টগ্রাম : নিজের পছন্দে বিয়ে করে দীর্ঘদিন সংসার করেছেন। ব্যবসায়ী স্বামী ও সন্তান নিয়ে বেশ সুখেরই ছিল তার সংসার। কিন্তু ফেসবুকে এক যুবকের সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন ওই নারী। শেষ পর্যন্ত স্বামী-সংসার এমনকি কোলের সন্তানকে ফেলে ওই যুবকের হাত ধরে ঘর থেকে পালিয়ে যান মধ্যবয়সী ওই নারী। মুহূর্তেই তছনছ হয়ে যায় একটি সুখের সংসার।

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এমন ঘটনা এখন অহরহ ঘটছে। ফেসবুকসহ নানা কারণে বাড়ছে পরকীয়ার ঘটনা। সেইসঙ্গে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা। পরকীয়া, পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাসসহ বিভিন্ন কারণে চট্টগ্রামে এখন প্রতিদিনই ভাঙছে শতাধিক সংসার। ঘটছে আত্মহত্যার ঘটনাও। গত ৩১ জানুয়ারি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে চট্টগ্রামের তরুণ চিকিৎসক আকাশের আত্মহত্যার ঘটনায় বেশ তোলপাড় সৃষ্টি হয়। স্ত্রী মিতু পরকীয়ায় জড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর সহ্য করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত আত্মহননের পথ বেছে নেন আকাশ।

ডা. আকাশের আলোচিত ওই আত্মহত্যার ঘটনার পরপরই গত ১ ফেব্রæয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় পরকীয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্বামীর সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করেন এক গৃহবধূ। পরকীয়া ও বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বৃদ্ধির জন্য নৈতিক অবক্ষয় ও মূল্যবোধের অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, নারী কিংবা পুরুষ যে-ই বিয়ে বিচ্ছেদ করতে চান, মেয়র হিসেবে আমার মাধ্যমেই তা করতে হয়। ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে এটি কার্যকর হয়। বর্তমানে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আমাকে প্রতিদিনই ৭০, ৮০, ৯০ এমনকি ১০০ থেকে দেড়শ পর্যন্ত বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য স্বাক্ষর করতে হয়।

আমার অনেক খারাপ লাগে। আসলে আমি যদি মেয়র না হতাম, তাহলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না, কত আশঙ্কাজনকভাবে তালাকের সংখ্যা দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিবাহ বিচ্ছেদের মূল কারণ হচ্ছে পরকীয়া। এই পরকীয়া শুধু কম বয়সের মানুষের মধ্যেই যে হচ্ছে তা নয়, বিভিন্ন বয়সের মানুষের এই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ার কারণে বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে। এটা সমাজের জন্য অশনিসংকেত। বিবেকের তাড়নায় অনেক দম্পতিকে ডেকে এনে বোঝানোর চেষ্টা করি।

যেমন সেদিন চুয়েটের তরুণী এক শিক্ষিকা এসে আমার কাছে কান্নাকাটি করে বলেছেন, তার এখনও বিয়ে হয়নি। অথচ তার বাবা ও মা বিয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওই শিক্ষিকা আমাকে অনুরোধ করেন, তার বিয়ে হওয়ার আগ পর্যন্ত বাবা-মা যেন ওই সিদ্ধান্ত না নেন। আমি ওই দম্পতিকে বুঝিয়ে বলেছি। ওই শিক্ষিকার বাবার বয়স ৬৫ বছরেরও বেশি। এ বয়সে তিনি স্ত্রীকে তালাক দিতে চাচ্ছেন।

তাদের ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। সামাজিক অবক্ষয়, মূল্যবোধের অভাব ও পারস্পরিক অবিশ্বাসের কারণে তালাকের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। আমি মনে করি, বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনা কমিয়ে আনার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক মূল্যবোধের শিক্ষা দিতে হবে।