চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানাধীন ল্যান্ডমার্ক আবাসিক এলাকার লায়লা ভবনে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
বুধবার (২৭ জুন) সকালে মেয়েটিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইনহাস বিনতে নাছির নামের ১২ বছর বয়সী মেয়েটি নগরীর মেরন সান স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ত। তার বাবা মোহাম্মদ নাছির সৌদি আরবে থাকেন।
মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, সকালে মেয়েটিকে গলা কাটা অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন এক আত্মীয়।
খবর পেয়ে ঘটনার পরপরই বাকলিয়া থানা পুলিশ, সিআইডি, পিবিআই ও নগর গোয়েন্দা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
মেয়েটির মা নাসরিন আক্তার খুশবু বলেন, তার তিন মেয়ের মধ্যে ইনহাস সবার বড়। সকাল ৮টার দিকে তিনি মেজো মেয়েকে স্কুলে দিতে বাইরে যান। ঘরে তখন ইনহাস আর আড়াই বছরের ছোট মেয়ে ছিল।
খুশবু বলেন, ৯টার দিকে বাসায় ফিরে তিনি ঘরের দরজা চাপানো অবস্থায় পান। পরে ইনহাসের ঘরে গিয়ে তাকে বালিশ চাপা অবস্থায় শোয়ানো দেখতে পান।
তিনি বলেন, ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেয়ে বালিশ তুলে দেখি রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তখন আমি চিৎকার দিলে পাশের বাসা থেকে আমার জা ছুটে আসেন। পরে মেয়েকে মেডিকেলে নেওয়া হয়।
খুশবু আরো জানান, তাদের তিন কক্ষের বাসায় তিন মেয়ে ও শাশুড়িকে নিয়ে তিনি থাকতেন। ঈদে সাতকানিয়ায় গ্রামের বাড়ি যাওয়ার পর এখনও ফেরেননি তার শাশুড়ি।
আর যে ঘরে ইনহাসকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে, তার পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিল তার ছোট বোন।
ওই বাসায় গিয়ে দেখা যায় ঘরের আলমারির কাপড়-চোপড় এলোমেলো অবস্থায় পড়ে আছ, দেখে মনে হয় যেন তছনছ করা হয়েছে।
পরিবারের দাবি, আলমারি থেকে তাদের বেশ কিছু গয়না খোয়া গেছে। তবে শোবার ঘরের ওয়ারড্রব অক্ষত আছে।
খুশবুর বড় জা জেবুন্নেছা বলেন, সকালে খুশবু তার মেয়ের এ পরিস্থিতি দেখে আহাজারি করতে করতে এক পর্যায়ে নিজের ‘হাত কেটে আত্মহত্যা’ করার চেষ্টা করেন। পরে তার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেওয়া হয়।
ছয় তলা লায়লা ভবনের পঞ্চম ও ষষ্ঠতলায় নাছির ও তার তিন ভাইয়ের পরিবার থাকে। নাছিরের পরিবার থাকে পঞ্চম তলার একটি ফ্ল্যাটে। আর নিচ থেকে চতুর্থ তলা পর্যন্ত ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দেওয়া।
বাকলিয়া থানার ওসি প্রণব চৌধুরী বলেন, ওই বাসার আলমারির কাপড় তছনছ করা হলেও বেশকিছু ইমিটেশনের গয়নায় হাত দেওয়া হয়নি। আলমারি ভাঙার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। আলমারির চাবি ঘরের মেঝেতে পড়ে ছিল।
তিনি বলেন, আমরা সবকিছু খতিয়ে দেখছি। সব দিক মাথায় রেখেই পুলিশ তদন্ত করছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আবদুর রউফ বলেন, এর আগেও বাকলিয়া এলকায় এক নারীর গলা কেটে অলঙ্কার ও মোবাইল ফোন লুটের ঘটনা ঘটেছিল। যেহেতু বাড়ির মালিক প্রবাসী, এখানেও তেমন কিছু ঘটেছে কি না- আমরা খতিয়ে দেখব। আবার পারিবারিক কোনো বিষয় আছে কি না তাও দেখা হবে।