পাবনা : বীর মুক্তিযোদ্ধা তাহেজ উদ্দিন সরকারকে জাতীয় পতাকার পরিবর্তে বাঁশের চাঁটাইয়ে জড়িয়ে গার্ড অব অনার প্রদান করায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে। এ ঘটনায় বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার পাশাপাশি মুক্তিযেদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। গত ১৯ মে বিকেলে বেড়া পৌর এলাকার শহীদ আব্দুল খালেক স্টেডিয়ামে এই গার্ড অব অনার দেয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধার বাড়ি বেড়া পৌর সদরের সম্ভুপুর গ্রামে।
জানা গেছে, বেড়া সাবরেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক মুক্তিযোদ্ধা তাহেজ উদ্দিন সরকার গত ১৮ মে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান। এ দিন উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় আব্দুল খালেক স্টেডিয়ামে মুক্তিযোদ্ধা তাহেজ উদ্দিন সরকারকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। গার্ড অব অনার প্রদান অনুষ্ঠানে উপজেলা প্রশাসন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গার্ড অব অনার জানানোর সময় মৃত মুক্তিযোদ্ধাকে জাতীয় পতাকায় না মুড়ে চাঁটাই দিয়ে মুড়া হয়। সরকারি আইনে মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় পতাকায় মুড়ে বিউগল বাজিয়ে গার্ড অব অনার দেয়ার নিয়ম থাকলেও উপজেলা প্রশাসন তা পালন করেননি। চাঁটাইমুড়া তাহেজ উদ্দিন সরকারের গার্ড অব অনারের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে গেলে তা ভাইরাল হয়ে উঠে। বিভিন্ন ব্যক্তি এ ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের দায়ী কর্মকর্তার কঠিন শাস্তি দাবি করেন। অনেকে এ ঘটনা প্রশাসনের মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান ও ধৃষ্টতাপূর্ণ বলে দাবি করেছেন।
এ সময় উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসানসহ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল পর্যায়ের লোকজন উপস্থিত ছিলেন। বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব হাসান ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের উপর দায়িত্ব দেয়া ছিল মরহুমের গোসল করানোসহ যাবতীয় কাজকর্মের। মুক্তিযোদ্ধারা কফিনে কোনো ধরনের জাতীয় পতাকা দিয়ে মোড়ানো ছাড়াই গার্ড অব অনার প্রদানের জন্য প্রস্তুত করেন। পরে আমরা প্রশাসনের লোকজন গিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মান জানানো হয়। অথচ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় আমি নিজেও বিষয়টি লক্ষ্য করিনি। পরে যখন বিষয়টি লক্ষ্য করে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি ইসহাক আলীর কাছে কারণ জানতে চাইলে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন। আসলে ওই সময় কিছুই করার ছিল না বলে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। বেড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি ইসহাক আলী বলেন, মরহুমের পরিবার এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা পতাকা না জড়ানোর বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো সামান্য বিষয়, আপনাদের এত মাথা ব্যথা কেন। একটা ভুল হয়েছে তাই বলে এটা নিয়ে এত মাতামাতি কেন। মৃত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মিলন হোসেন জানান, আমার বাবা একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তার ভারত এবং বাংলাদেশের দুটি সনদ আছে। বেড়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি ইসহাক আলী ইচ্ছাকৃতভাবে বাবাকে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেয়নি। ইসহাক আলী শুধু আমার বাবার সঙ্গেই করেননি, দেশের সব মুক্তিযোদ্ধাদের অমর্যাদা করেছে। এই ঘটনার বিচার হওয়া প্রয়োজন বলেও তিনি মন্তব্য করেন।