বরগুনা : বরগুনার বামনায় বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট রিপ্রেজেনটেটিভ এ্যাসোসিয়েশনের (ফারিয়া) বার্ষিক বনভোজনের চাঁদা আদায়ের নোটিশ দিলেন বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো: জামাল হোসেন। বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব চিকিৎসক ও কর্মচারীদের বনভোজনে যাওয়ার জন্য চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্রে চাঁদা আদায়ের নোটিশ টাঙিয়ে দেন মো. জামাল হোসেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয় চিকিৎসক ও কর্মচারীদের মধ্যে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে নিয়মিত অফিস না করা, রোগীদের কাছ থেকে হাসপাতালে বসে চিকিৎসাপত্র বাবদ অর্থ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসক ও কর্মচারীরা অভিযোগ করেন, ডা. জামাল হোসেন বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত বছরের ১৮ জুন যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে হাসতালের নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নিজের ইচ্ছেমতো অফিস করতেন। হাসপাতাল চলাকালীন বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা দেয়ার কথা থাকলেও তিনি সাধারণ রোগীর নিকট থেকে চিকিৎসা দেয়ার বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা নিতেন। এ ছাড়াও হাসপাতালের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ তাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করতেন। তারা আরও বলেন, ডাক্তার সাহেব হাসপাতালের কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও জিপি ফান্ডের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ ছাড়াও তিনি স্থানীয় ওষুধ বিক্রয় প্রতিনিধিদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ব্যবস্থাপত্র দেন এবং অফিস চলাকালীন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের অবাধ যাতায়াতের সুযোগ করে দেন। তার খামখেয়ালিপনা ও অনিয়মের বিরুদ্ধে হাসপাতালের কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তবে এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে বলেও তারা জানান।
বামনা উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় স্থানীয় ৪ ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয় সাংবাদিকরা তার বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। এতে উল্লেখ করা হয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার অনিয়ম ও খামখেয়ালিপনায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হতে সাধারণ জনগণ কাক্সিক্ষত চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে সরকারিসেবা গ্রহণ না করে জনসাধারণ প্রাইভেট ক্লিনিক/হাসপাতালে সেবা নিতে বাধ্য হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা বেশির ভাগ সময় মঠবাড়িয়ায় অবস্থান করেন এবং অফিস চলাকালীন রোগীদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা হারে ভিজিট নিয়ে রোগী দেখেন। এ ছাড়া রোগীদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবহার সন্তোষজনক নয়।
সাধারণ জনগণ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে যাতে কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় ওই সভায়। হাসপাতাল চলাকালীন রোগীদের কাছ থেকে ভিজিট গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই উল্লেখ করে অভিযুক্ত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জামাল হোসেনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিতে সভার কার্যবিবরণী মহাপরিচালক ও স্বাস্থ্য অধিদফতর বরাবরে প্রেরণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত ডা. জামাল হোসেনের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে রোগীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি দেখতে পাওয়া যায়। এ সময় চিকিৎসা নিতে আসা বামনা উপজেলার আমতলী গ্রামের মোস্তফা দফাদারের স্ত্রী সুরমা বেগম বলেন, আমার সন্তানের জ্বর হয়েছে তাই হাসপাতালে এসেছিলাম বিনামূল্যে চিকিৎসা নিতে কিন্তু ডাক্তার সাহেব বললেন তিনি চিকিৎসাপত্র লিখে দিচ্ছেন আর ওষুধ হাসপাতালের বাইরের ফার্মেসি থেকে নিতে হবে। চিকিৎসাপত্রের জন্য আমার কাছ থেকে দেড় শ টাকা নিয়েছেন উনি। সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত সংবাদকর্মীরা টাকা নেয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি তাৎক্ষণিক রোগীর কাছ থেকে নেয়া টাকা ফেরত দিয়ে দেন। প্রসঙ্গত ডা. জামাল হোসেন পাশের মঠবাড়িয়া উপজেলায় কর্মরত থাকা অবস্থায় এক নারী রোগীর সঙ্গে অসামাজিক আচরণের দায়ে অর্থদ- দিয়ে কর্মস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। বর্তমানে তিনি বামনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে কর্মরত আছেন। হাসপাতালের একাধিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জানান, ডা. জামাল হোসেন সপ্তাহে এক দিন কর্মস্থলে এসে হাজিরা খাতায় বাকি ছয় দিনের স্বাক্ষর দেন।
বামনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হাজিরা চালু থাকলেও তিনি কখনও ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে হাজিরা দেন না। উপজেলার পশ্চিম সফিপুর গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. নাসির মোল্লা অভিযোগ করে বলেন, আমি টিউমার আক্রান্ত এক রোগীকে নিয়ে ডা. জামাল হোসেনের শরণাপন্ন হই। এ সময় তিনি আমার কাছে ওই রোগীর টিউমার অপারেশন করার জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে অপারেশন করলে নানান অজুহাতে তিনি ওই রোগীর নিকট থেকে মোট ২৪ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. জামাল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে স্পেশাল কেউ দেখাতে চাইলে তাদের কাছ থেকে নামমাত্র ভিজিট গ্রহণ করি। আপনারা যদি চান তাহলে দাফতরিক কাজ ছাড়া আমি কোন রোগী দেখব না। হাসপাতালের নোটিশ বোর্ডে রোগীদের জন্য ব্যবহƒত তার চিকিৎসাপত্রে চাদা আদায়ের নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি পিকনিকের সময় পরিবর্তন করা হয়েছে বলে আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বামনা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সাইতুল ইসলাম লিটু বলেন, ডা. জামাল হোসেন যোগদানের পরে বেশ ভালোই দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু এখন তার বিরুদ্ধে অর্থ নেয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় অভিযোগ করেন ইউপি চেয়ারম্যান ও সাংবাদিকেরা। ওই সভার রেজুলেশন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আশা করছি শিগগিরই তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।