নিজস্ব প্রতিনিধি : বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়ে চরম অসুস্থ ও বেদনাদায়ক রাজনীতি বিপন্ন-বিস্ময়ে অবলোকন করছে দেশের রাজনীতি সচেতন মানুষসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ। এর পরিণতিতে বয়োবৃদ্ধ বেগম খালেদা জিয়ার জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে।
বিএনপির পক্ষ থেকে পরিস্কার করেই বলা হয়েছে যে, ইউনাইটেড হাসপাতাল ছাড়া দেশের অন্যকোন হাসপাতালে চিকিৎসা করাবেন না তারা। যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় দলই বহন করবে। অপরদিকে সরকার তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়ার প্রবল বিপক্ষে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসার প্রস্তাব দিলে খালেদা জিয়া তাতে অসম্মতি জানান। খালেদা জিয়া তাতে রাজি না হওয়ায় সরকার তাকে সিএমএইচএতে ভর্তি করে সেখানে চিকিৎসার প্রস্তাব করে। বিএনপি এবং খালেদা জিয়া তাতে রাজি হননি। তাদের দাবি একমাত্র ইউনাইটেড।
শারীরিক অসুস্থতা ও চিকিৎসা নিয়েও কি অভাবনীয় রেষারেষি! দেশের সাধারণ মানুষের মনেও প্রশ্ন জেগেছে- কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকারের রোগীর অভিপ্রায় অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আপত্তি কেন? বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির একমাত্র ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করানোর তাগিদই বা কেন?
বিএসএমএমইউ (পিজি) দেশের স্বীকৃতি মানসম্পন্ন শ্রেষ্ঠ হাসপাতাল। এখানকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও নির্ভরযোগ্য। ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা আহামারী উন্নত কিছু নয়।
সমস্যা অন্য জায়গায়। স্থূল রাজনীতি। পিজি হাসপাতালের সমস্ত ডাক্তারই সরকার দলীয়। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানের স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদের সদস্যভুক্ত ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন কর্তৃক সুপারিশকৃত ডাক্তারদের বেছে বেছে পিজিতে আনা হয়। এখানে সরকার দলীয় বা সরকারি মনোভাবাপন্ন এমন একজন ডাক্তারও নেই।
বিএনপি সমর্থিত ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)ভুক্ত কোন একজন চিকিৎসককেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে স্থান দেয়া হয়নি। বরং যারা ছিলেন, তাদের খুঁজে খুঁজে ঢাকার বাইরে পাঠানো হয়েছে। বছরের পর বছর তারা মফস্বলে, জেলা, উপজেলায় পড়ে রয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়াকে পিজি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে ডাক্তার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উপর সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ থাকবে এবং দেশে-বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটবে। অন্যদিকে ইউনাইটেড হাসপাতালে তা সম্ভব হবে না।
ইউনাইটেড হাসপাতাল জোট সরকারের সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। এতে বিনিয়োগকারীরা বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বিশেষজ্ঞ সব পর্যায়ের চিকিৎসকই ড্যাবভুক্ত ও বিএনপির রাজনীতির সাথে কোন না কোনভাবে জড়িত। ডাক্তারের দক্ষতা, চিকিৎসামানের চেয়ে রাজনৈতিক আনুগত্য লাভের নিশ্চয়তার প্রতিই বিএনপির অনেক বেশি দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে বলে পর্যবেক্ষক মহলের অনেকে মনে করেন।
ডাক্তার মতাদর্শগতভাবে যে দলেরই হোক, রোগীর কাছে তিনি ত্রাণকর্তা। রোগীর প্রাণ বাঁচাতে, চিকিৎসা সেবা দিতে ডাক্তারের রাজনৈতিক পরিচয়, চিন্তাভাবনা কখনও বিবেচনায় আসে না। কিন্তু সরকার ও বিএনপি উভয়েই এ নিয়ে অসুস্থ রাজনীতিতে নিজেদের জড়িয়েছে। অসুস্থ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নিয়ে কারা কর্তৃপক্ষ, সরকার কতটা আন্তরিক, এ নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপির ভূমিকাও পুরোপুরি দায়মুক্ত বলা যাবে না।
অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যে, দেশের সর্বাধিক খ্যাতিসম্পন্ন এবং আস্থাশীল চিকিৎসক প্রফেসর ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী খালেদা জিয়া মাইল্ড স্ট্রোকে আক্রাস্ত হওয়ার খবর জানার পর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বড় ধরনের বিপদের অশনি সংকেত বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দিয়েছেন। একজন খ্যাতিমান চিকিৎসক হিসেবে রোগের লক্ষণ দেখে প্রফেসর বি চৌধুরী তার পরামর্শ রাখতেই পারেন। তবে লন্ডনে নিয়ে চিকিৎসা করানোর পরামর্শের সাথে সরকারে পরিকল্পনার একটা বিস্ময়কর সাদৃশ্য রয়েছে।
সরকারি উচ্চ পর্যায়ের সূত্রে জানা যায়, তিন মাসের প্যারোলো মুক্তি দিয়ে লন্ডনে পাঠানো এবং প্রয়োজনে পরে মেয়াদ আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। চিকিৎসা নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে অবহেলা, দায়িত্বহীনতার অভিযোগমুক্ত থাকাই সরকারের একমাত্র উদ্দেশ নয়, খালেদা জিয়াকে দেশের বাইরে রেখে নির্বিঘেœ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং বিএনপির নেতা-কর্মীদের হতাশা বাড়িয়ে তোলাই এর মুখ্য উদ্দেশ্য।