চ্যালেঞ্জের মুখে মেয়র আরিফ

সিলেট : সিলেটের উন্নয়ন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। সামনে বর্ষা। এর আগেই কাজ শেষ করতে হবে। এই মুহূর্তে সিলেট নগরজুড়ে চলছে উন্নয়ন কাজ। এসব কাজের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন তিনি। নিজেও শঙ্কায় কাজ শেষ করতে পারবেন কি না। এ অবস্থায় সাম্প্রতিক সময়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন তিনি। মাঠে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন।

সর্বশেষ পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের ভর্ৎসনার মুখে পড়েছেন সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী আকবর। উন্নয়ন কাজ শুরুর আগে পরামর্শক বাবদ দুই কোটি টাকা ব্যয় হওয়ায় মন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে অনেকটা নির্বিঘে্নই সিলেটের উন্নয়নে হাত দেন সিলেট সিটি করপোরেশনের বিএনপিদলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। উন্নয়নে ‘বেপরোয়া’ মেয়র আরিফ যেমনি নগরবাসীর উৎসাহ-অভিনন্দন পাচ্ছেন তেমনি তিনিও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

এসব উন্নয়ন কাজ ঘরে তোলাই হচ্ছে এখন তার দায়িত্ব। কিন্তু বৃষ্টি নিয়ে শঙ্কা কাটছে না তার। সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার। এক সপ্তাহ ধরে নগরীর অন্যতম ব্যস্ততম এ সড়কে যান চলাচল বন্ধ। কোর্ট পয়েন্ট থেকে জিন্দাবাজার অভিমুখে যে সড়কটি এসেছে সেটিতে কালভার্ট নির্মাণ করা হচ্ছে। এখনো অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়নি। আরো ১০ দিনের মতো সময় লাগবে ওই কালভার্টের কাজ শেষ হতে। কিন্তু ব্যস্ততম ওই সড়ক বন্ধ থাকায় সিলেট নগরীতে যানজট নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। অফিস টাইম হলে গাড়ির চাকা চলে না সিলেট নগরে। এমন দুর্ভোগে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে নাগরিক জীবন।

এ কারণে দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার তাগিদ দেয়া হচ্ছে মেয়রকে। কিন্তু কাজ যেনো এগোতেই চায় না। এ নিয়ে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে জিন্দাবাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি নগরীর শুকরিয়া মার্কেট, লন্ডন ম্যানশন, প্লাজা ম্যানশনের ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে, টানা এক মাস এভাবে রাস্তা বন্ধ থাকলে ব্যবসায় কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হবে। বিষয়টি তারা মেয়রকে জানিয়েছেন। এর বাইরে নগরীর কমপক্ষে ১৫টি স্থানে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। সিলেট নগরীর কালিবাড়ী এলাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে দুর্ভোগ শুরু হয় ওই এলাকায়। জরুরি প্রয়োজনে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় সমস্যায় পড়েছেন ওই এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। সিলেট নগরীর তিনটি ওয়ার্ডের মানুষ এখনো সিটি করপোরেশনের কাজ থেকে পানি সুবিধা পায়নি। দক্ষিণ সুরমার তিনটি ওয়ার্ডে অনেক আগেই পানির লাইন টানানো হয়। কিন্তু পানি না পাওয়ায় ২৫, ২৬ ও ২৭ নং ওয়ার্ডের প্রায় ৩০ হাজার বাসিন্দার দুর্ভোগ কমছে না।এ নিয়ে প্রতি বছরই শুষ্ক মৌসুমে আন্দোলন করেন স্থানীয়রা। কিন্তু মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এখন পর্যন্ত ওই তিনটি ওয়ার্ডের প্রায় ৩৫টি এলাকায় পানি সরবরাহের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেননি।

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট রোকশানা বেগম শাহনাজ। তিনি বলেন, তিনটি ওয়ার্ডের মানুষ পানির জন্য হাহাকার করলেও আমরা এখনো পর্যন্ত পানি দিতে পারিনি। এবারের শুষ্ক মৌসুমের আগে ওই তিনটি ওয়ার্ডে পানি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হয়নি। তিনি এ জন্য মেয়রের সুদৃষ্টি কামনা করেন। দুটি ঘটনায় এখন সিলেটে তুমুলভাবে বিতর্কিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, নগর ভবন নির্মাণে ঠিকাদারের জামানতের ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও অপরটি হচ্ছে উন্নয়ন কাজের পরামর্শক বাবদ দুই কোটি টাকা ব্যয়। দুটি ঘটনায়ই মেয়র আরিফের উন্নয়নের সুনামে কলঙ্কের তিলক পরিয়েছে। সিলেট সিটি করপোরেশন ভবনের দ্বিতীয় ধাপের নির্মাণ কাজের ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী আত্মসাৎ করেছেন অভিযোগ করে গত সপ্তাহে সিলেটে মানববন্ধন করেছে প্রদীপ্ত সিলেট নামের একটি সংগঠন। ওই মানববন্ধনে প্রতীকী আত্মাহুতির হুমকি দিয়ে ‘চিতা’ করে হাজির হয়েছিলেন নগর ভবন নির্মাণ কাজের সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী সঞ্জয় রায়। তিনি দাবি করেন, ঢাকার মাহবুব ব্রাদার্সের কাছে লিখিত দিয়ে আরিফুল হক চৌধুরী জামানতের পুরো টাকাই তার বন্ধু ঢাকার ব্যবসায়ী তোফায়েল খানের অ্যাকাউন্টে নিয়ে আসেন।

এবং পরে ওই টাকা আরিফুল হক চৌধুরীসহ কয়েকজন ভাগ-বাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করেছেন। তবে এই ঘটনায় তার নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছেন আরিফুল হক চৌধুরী। একই সঙ্গে বলেছেন, মাহবুব ব্রাদার্সকে তিনি টাকা দিয়ে দিয়েছেন। ফের টাকা ফেরত আনার ব্যাপারে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আর ঢাকার ব্যবসায়ী তোফায়েল খান জানিয়েছেন, তার অ্যাকাউন্টে আসা টাকা নিয়ে সিলেটের পাওনাদারদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন। এ ঘটনায় আবারো সিলেটে মানববন্ধনের হুমকি দিয়েছেন প্রদীপ্ত সিলেটের আহ্বায়ক সুশান্ত দাশ গুপ্ত। নিজের ফেসবুক আইডিতে তিনি আগামী সপ্তাহে সিলেটে মেয়রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বড় আকারে প্রতিবাদের আয়োজন করতে যাচ্ছেন বলে জানান। এ দিকে এবার পরিকল্পনামন্ত্রীর চোখে ধরা পড়েছে সিলেট নগরের টাকা নয়-ছয়ের বিষয়টি। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি সিলেট সার্কিট হাউজে সিলেটের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রধানদের নিয়ে বৈঠক করেন মন্ত্রী। বৈঠকে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী আকবর উন্নয়ন কাজ সম্পর্কে মন্ত্রীকে অবহিত করেন। এ সময় তিনি জানান, উন্নয়ন কাজের পরামর্শক বাবদ দুই কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। এ কথা শুনে মন্ত্রী নিজেই হতবাক হন।

বলেন, কালভার্ট ও ড্রেন নির্মাণ করতে পরামর্শক বাবদ দুই কোটি টাকা ব্যয় কেন? এই পরামর্শ তো আপনারা নিজেরাই করতে পারেন। আপনি যে সাবজেক্ট নিয়ে পড়েছেন সেই সাবজেক্ট নিয়ে পরামর্শকরা পড়েছেন। মন্ত্রী এ সময় বলেন, পরামর্শকদের বাবদ ব্যয় করা টাকা দিয়ে বড় একটি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যেত। তিনি বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলীকে ভর্ৎসনা করেন। এ সময় মন্ত্রীর এসব প্রশ্নের কোনো জবাব দিতে পারেননি সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী। এ দিকে পরামর্শক বাবদ দুই কোটি টাকা ব্যয় করা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের মুখে পড়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। কারা এই পরামর্শকÑ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উন্নয়ন সংশ্লিষ্টরা।