ঠিকানা অনলাইন : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গঠন করা কমিটির প্রতিবেদন হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়েছে।
আজ ২৭ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সকালে এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়।
র্যাংগিংয়ের নামে শারীরিক এবং মানসিকভাবে হেনস্তার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ইবি শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এক শিক্ষার্থী।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের নবীন ছাত্রীকে ছাত্রলীগ নেত্রীর রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের যে অভিযোগ উঠেছিল, বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে সে অভিযোগের কিছু সত্যতা মিলেছে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে নির্যাতনকারীদের প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে।
২৬ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) সকাল ১০টার দিকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক রেবা মণ্ডল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলেন। সে প্রতিবেদনে ভুক্তভোগী ছাত্রীর আনা নির্যাতনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
সূত্রটি জানায়, ঘটনার রাতে ছাত্রীকে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। নির্যাতনকারীদের প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা হয়েছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশের ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি।
তদন্তসংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, কমিটির সবার স্বাক্ষরসহ ১১ পৃষ্ঠার একটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে বিভিন্ন নথি সংযুক্ত করে দেওয়া আছে। হলের অন্তত ২০ জন ছাত্রীর সঙ্গে এসব বিষয়ে কথা বলেছে তদন্ত কমিটি। প্রতিবেদনে সব বিষয় খতিয়ে দেখে শুধু যেটা ঘটেছে, সেই মূল ঘটনা উপস্থাপন করা হয়েছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে তদন্ত কমিটির একজন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে ২০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে ঘটনার কিছু সত্যতা পেয়েছি । ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিতে থাকায় এখন বলা সম্ভব নয়। আমরা রেজিস্ট্রার বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন যেটা ভালো মনে করে সেটা করবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবেদনের দুইটি কপি জমা পড়েছে। একটি কপি রেজিস্ট্রারের দপ্তরে আছে, অন্যটি হাইকোর্টে পাঠানো হয়েছে। উপাচার্য নির্দেশনা দিলে কার্যক্রম শুরু হবে।’
এদিকে ২৬ ফেব্রুয়ারি (রবিবার) রাতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ গঠিত তদন্ত কমিটি। অন্যদিকে তদন্ত কাজ শেষ করেছে হল প্রশাসন সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি। আজ সোমবার দুপুরে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে তাদের।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা তাকে নির্যাতন করেন। এ সময় তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন ফুলপরী।
এ ঘটনায় ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে হল ছেড়ে বাসায় চলে যান ভুক্তভোগী ছাত্রী। পরে নির্যাতনের বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে প্রক্টর ও ছাত্র-উপদেষ্টা দপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। পরবর্তী সময়ে হাইকোর্টের নির্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন অভিযুক্তরা। এরপর ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তদের ডেকে তাদের বক্তব্য শোনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত কমিটি।
ঠিকানা/এসআর