ছুটির দিনে সবাইকে বাড়িতে থাকার আহ্বান সিডিসির

ফেব্রুয়ারি নাগাদ সাড়ে চার লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা

ঠিকানা রিপোর্ট : ছুটির দিনে ভ্রমণ না করে বাড়িতে থাকার আহ্বান জানিয়েছে ফেডারেল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। তাদের পরামর্শ নিরাপদে থাকা এবং অন্যকে রক্ষা করার সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো ঘরে থাকা। সংস্থাটি বলছে কাউকে ভ্রমণে যদি যেতেই হয় তাহলে যাওয়ার এবং আসার পর অন্তত দু’বার করোনা পরীক্ষা করানো উচিত।
সিডিসি বলছে, ভ্রমণ থেকে বিরত থাকা সংক্রান্ত পরামর্শ থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের জন্য দেয়া হলেও অনেক আমেরিকান এটিকে উপেক্ষা করছে। এর ফলে কোভিড-১৯ ক্রমশই বেড়ে চলেছে।
এক ব্রিফিংয়ে সিডিসির চিকিৎসক হেনরি ওয়াক বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত ও হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। একই সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এই বৃদ্ধি ঠেকাতে হবে।’
সিডিসির আরেক কর্মকর্তা ডা. ফ্রায়েডম্যান বলেন, ‘সবচেয়ে নিরাপদ হলো অবকাশকালীন ভ্রমণ স্থগিত করা এবং বাড়িতে অবস্থান করা।
এদিকে করোনার সংক্রমণ নিয়ে শোচনীয় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। দৈনিক সংক্রমণ এখন দু’লাখ অতিক্রম করেছে। নভেম্বরে প্রতি সপ্তাহে ১০ লাখ মানুষ নতুন করে করোনা-আক্রান্ত হয়েছিল। একই সময়ে ১০ হাজার মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। এখন প্রতিদিন রেকর্ড গড়ছে সংক্রমণ। মিনিটে গড়ে আক্রান্ত হচ্ছে ৯৯ জন। রেকর্ড মৃত্যুতেও। জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান অনুসারে ডিসেম্বরের শুরু থেকে আমেরিকায় প্রতিদিন গড়ে ২ লাখের বেশি মানুষ নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে এবং আড়াই হাজারেরও বেশি মারা যাচ্ছে।
জাতীয় দুর্যোগের এ সময়ে নির্বিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রতিদিন হাজারো মানুষের মৃত্যু সত্ত্বেও নীরবতা পালন করছেন তিনি।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের পরিচালক রবার্ট রেডফিল্ড সতর্ক করে দিয়েছেন, আগামী তিন মাস পরিস্থিতি নাজুক হয়ে উঠবে। ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আমেরিকায় সাড়ে চার লাখ মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করছেন তিনি।
পরিস্থিতি যে এ রকম হবে, তা নিয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন দেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসাবিজ্ঞানী ডা. অ্যান্থনি ফাউসি। কারণ যে পরিমাণ লোক থ্যাঙ্কসগিভিংয়ে পার্টি করেছে, তাতে সংক্রমণ বাড়বে। প্রশাসনের এখন চিন্তা, এত রোগীর চিকিৎসার ভার সামলানো নিয়ে। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ হাসপাতালে আর শয্যা ফাঁকা নেই। একটানা পরিষেবা দিয়ে ক্লান্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। তাদের একটা বড় অংশও করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন।
সিডিসির আরেক কর্মকর্তা সিন্ডি ফ্রেডম্যান পর্যটকদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখেন। তার কথায়, ‘সরকারের পরামর্শ না মেনে বহু লোকজন থ্যাঙ্কস গিভিংয়ের ছুটিতে বেরিয়ে পড়েছিলেন। হয়তো যারা বেরিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে খুব সামান্যসংখ্যক মানুষের শরীরে ভাইরাস ছিল। কিন্তু তাদের থেকে সংক্রমণ হয়তো কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। ছড়িয়ে গেছে আশপাশের লোকজনের মধ্যে।’
ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস ও ফ্লোরিডা- এই তিনটি রাজ্যের জনঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থাও এদের। প্রতিটি রাজ্যে ১০ লাখের বেশি মানুষ করোনা-আক্রান্ত। লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে ভয়ানকভাবে বেড়েছে সংক্রমণ। মেয়র এরিক গারসেট্টি গত সপ্তাহে একটি জরুরি নির্দেশিকা জারি করে জানিয়েছেন, কোনো বাসিন্দা বাড়ি থেকে বেরোতে পারবেন না।
কিন্তু করোনার এতো সংক্রমণ সত্ত্বেও এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের। শুরু থেকেই কোনো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পক্ষে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করেননি তিনি। মাস্ক পরা নিয়ে তিনি কয়েক দফা উপহাসও করেছেন। নিজে সংক্রমিত হয়েও ট্রাম্প তার অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করেননি। তার সমর্থকদের মধ্যে এখনো মাস্ক পরাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। নিজেও বেশ কয়েকটি পার্টির আয়োজন করছেন ক্রিসমাসের আগে।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি শিকাগোর এক বাসিন্দার মধ্যে প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে ভয়ানক হতে থাকে পরিস্থিতি।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের ধারণা, ইতিমধ্যে তাদের দেশের অন্তত ২০ মিলিয়ন (দুই কোটি) মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
দ্য সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) বলছে, ‘প্রকৃত তথ্য হলো, প্রকাশিত সংখ্যার অন্তত ১০ গুণ বেশি মানুষ করোনার ভয়াবহতার শিকার।’