জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হলে ছাত্রলীগের নির্যাতন

ঠিকানা অনলাইন : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ছাত্রী হলে এক শিক্ষার্থীকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কর্মীদের বিরুদ্ধে। ১৬ মে মঙ্গলবার রাতে ওই ছাত্রীকে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন তামান্না ইসলাম তন্বী, ইশিতা, ফাল্গুনী আক্তার, নিনজা শিকদার, ইরা ও নাজমুন নাহার স্বর্ণা। তারা সবাই জবি ছাত্রলীগের সভাপতি ইব্রাহিম ফরাজি ও সাধারণ সম্পাদক আকতার হোসাইনের কর্মী।

অন্যদিকে নির্যাতনের শিকার হাফসা বিনতে নূর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ১৭ মে বুধবার হল প্রভোস্টের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দেন তিনি।

অভিযোগে জানা যায়, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার ছাত্রীর সঙ্গে তার রুমমেট রেবেকা খাতুনের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে তার রুমমেট হলের অন্য রুমের ছাত্রলীগের মেয়েদের নিয়ে এসে রুমে আটকে তাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন ও হেনস্তা করে। প্রায় তিন ঘণ্টার নির্যাতনে তিনি অজ্ঞান হয়ে যান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হলের এক ছাত্রী বলেন, আমার রুম পাশে হওয়ায় আমি এসে তাকে (নির্যাতনের শিকার ছাত্রী) রুম থেকে বের করে নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু রেবেকা, নিনজা, ফাল্গুনীসহ সবাই তাকে ঘেরাও দিয়ে ধরে, যেন সে বের হতে না পারে। তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়।

তিনি আরো বলেন, শুধু তা-ই নয়, এরা রাজনৈতিক ক্ষমতা দেখিয়ে ইদানীং হলে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে হেনস্তা করে থাকে। এমনকি সিনিয়রদের সঙ্গে একের পর এক বেয়াদবি করেই যাচ্ছে। কিন্তু এগুলোর প্রতিবাদ করার কেউ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এদের কাছে একপ্রকার জিম্মি।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী বলেন, এটা আমাদের রুমের অভ্যন্তরীণ ঘটনা। কিন্তু আমাদের দুই ব্যাচ জুনিয়র বোটানি বিভাগের রেবেকা খাতুন হলের অন্য রুমের সাত-আটজন মেয়েকে নিয়ে আমাদের রুমে এসে আমাকে শারীরিকভাবে মারধর করে ও মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করে। তারা রাত সাড়ে আটটা থেকে রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত আমার ওপর এ নিপীড়ন চালায়। নিনজা শিকদার নামের এক মেয়ে এ পুরো ঘটনা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে। একপর্যায়ে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। শুধু তা-ই নয়, এই রেবেকার কর্মকাণ্ডে আমাদের অন্যান্য রুমমেটরাও শারীরিক-মানসিকভাবে হেনস্তার আশঙ্কার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

বিষয়টি সম্পর্কে নাজমুন নাহার স্বর্ণার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর আমি ম্যামকে নিয়ে ওদের রুমে যাই। আমি গিয়ে ওদের শান্ত করার চেষ্টা করি। কিন্তু মারধরের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। একপর্যায়ে আমি ওদের রুমে ম্যামকে রেখে নিচে চলে আসি। তারপর নাকি ওই ছাত্রী আমাদের ছাত্রলীগের মেয়েদের গায়ে হাত দেয়।

ঘটনার সময় ওখানে উপস্থিত হলের আবাসিক শিক্ষক মানসুরা বেগম বলেন, তুচ্ছ ঘটনার জেরে আবেগের বশবর্তী হয়ে এ কলহের সূত্রপাত। অবস্থা বেগতিক জেনে আমি সেখানে উপস্থিত হই। আমি যাওয়ার পরও তারা আক্রমণাত্মক ছিল। তারা ওই ছাত্রীকে রুমের বাইরে যেতে ও ফোনটাও ধরতে দিচ্ছিল না। মূলত অন্য রুমের মেয়েদের নিয়ে আসার কারণে ঘটনা এত দূর পর্যন্ত গড়ায়। আমি সবাইকে বোঝানোর চেষ্টা করার পরও তারা আমার সামনে বসেই আরও উত্তেজিত হয়ে যায়।

এ ঘটনার বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দীপিকা রাণী সরকার বলেন, হলে বেশ কিছুদিন ধরে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এ ধরনের নানা ঘটনায় আমি শঙ্কিত। আজ অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা আলোচনায় বসেছি। তারপর দুই পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করে দিয়েছি। এর পর থেকে যদি কেউ এ রকম কাজের সঙ্গে জড়িত হয়, তাহলে তার সিট বাতিল হবে।

ঠিকানা/এনআই