ময়লা-আবর্জনা জমে ভরাট হয়ে গিয়েছিল সড়কের দুই পাশের নালা। এ কারণে নালার পানি উপচে জমে থাকত সড়কে। আর বৃষ্টি হলে পানির পরিমাণ হাঁটু ছাড়িয়ে যেত। দীর্ঘদিন ধরে চলছিল এমন সমস্যা।
সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েছে এলাকাবাসী। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধানে এগিয়ে এল নিজেরাই। তারপরের গল্প ভিন্ন। স্থানীয় কিছু তরুণ ও এলাকাবাসীর সমন্বিত উদ্যোগে বদলে গেল সড়কটির চেহারা। এখন সড়কে কোনো জলাবদ্ধতা নেই।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব জুরাইন এলাকার হাজি খোরশেদ আলী সরদার সড়কের জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির গল্প এটি। এক বছর ধরে সড়কের মিষ্টির দোকান এলাকা থেকে সোনালী মেটাল পর্যন্ত অংশে ছিল স্থায়ী জলাবদ্ধতা।
কীভাবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেলেন তাঁরা—সেই কাহিনি শোনালেন স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় সমাজকর্মী মিজানুর রহমান বলেন, ‘অনেক দিন আমরা জলাবদ্ধতার সমস্যায় ভুগছিলাম। ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ওয়াসা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েও ভোগান্তির অবসান হচ্ছিল না। পরে নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু করি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে দেখিয়ে দেওয়া যে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করলে যেকোনো সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। আমরা এটি করে দেখাতে পেরেছি।’
স্থানীয় লোকজন জানান, মিজানুর রহমান ছাড়াও শুরুতে নালা সংস্কার কাজের উদ্যোগের সঙ্গে ছিলেন ১০ তরুণ। তাঁরা হলেন মতিয়ার, রিজভী, রাইয়ান, তুষার, দুলাল, কাজল, দিপু, মমিন, আরিফ ও মিরাজ।তাঁরা সবাই পূর্ব জুরাইনের বাসিন্দা। পরে তাঁদের আরও বেশ কয়েকজন বন্ধু এই উদ্যোগে যুক্ত হন। একপর্যায়ে সহযোগিতা শুরু করেন এলাকার বাসিন্দারা।
এ ব্যাপারে কথা হয় ১০ তরুণের সঙ্গে। তাঁদের একজন বলেন, ‘আমরা নভেম্বরের ১৮ তারিখ রাত থেকে কাজ শুরু করি। প্রথমে শুকনো অংশের নালা পরিষ্কার করা হয়, যাতে কেউ বুঝতে না পারেন। আশঙ্কা ছিল, রাজনৈতিক নেতারা আমাদের উদ্যোগকে নিরুৎসাহিত করতে পারেন। কারণ, তাঁদের কাছে অনেকবার এই সমস্যার সমাধান চাইলে তারা কোনো সমাধান দিতে পারেনি।’
প্রথম দিকে নালার কিছু অংশ পরিষ্কার করার পর ধীরে ধীরে পানি নামতে শুরু করে। উৎসাহিত হন উদ্যোগী তরুণেরা। একপর্যায়ে সব শঙ্কা-জড়তা উড়িয়ে দিয়ে কাজে নেমে পড়েন তাঁরা।
তরুণেরা বলেন, রাস্তার পানি নামতে শুরু হওয়ার পর এলাকার সবাই এ কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। কিন্তু কিছু ব্যক্তি তাঁদের কৌশলে অনেক বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ কাজে নিরুৎসাহিতও করা হয়েছে তাঁদের। কিন্তু তাঁরা পিছপা হননি। তাঁরা ছিলেন দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ—সড়কটি তাঁরা জলাবদ্ধতামুক্ত করবেন।
তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি নালা পরিষ্কারের কাজে লাগানো হয় বেশ কয়েকজন দিনমজুরকে। যে সড়ক একসময় বৃষ্টি ছাড়াই পানিতে ডুবে থাকত, সেই সড়ক এখন শুকনো। বাসাবাড়ির ব্যবহৃত পানি এখন নালা দিয়ে নেমে যাচ্ছে।
সড়কের একটি বাড়ির মালিক ইলাহী বক্স বলেন, সারা বছরই রাস্তায় পানি জমে থাকত। কারণ, রাস্তার দুই পাশের নালা বালু-মাটি এবং ময়লা-আবর্জনায় ভরাট হয়ে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ১৯৮৪ থেকে এই এলাকায় বসবাস করছেন। এ পর্যন্ত তিনি অনেকবার রাস্তা সংস্কার এবং উঁচু করতে দেখেছেন। কিন্তু কোনোবারই নালা পরিষ্কার করতে দেখেননি।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাস্তার এই অংশের জলাবদ্ধতা নিরসনে তাঁরা একাধিকবার স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেনের কাছে গিয়েছেন। কিন্তু তিনি স্পষ্ট করে বলে দেন, এই রাস্তার জলাবদ্ধতা নিরসন করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করে তাঁরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে গিয়েছেন। কিন্তু কেউ এর সমাধান দিতে পারেননি।
ওয়ার্ড কাউন্সিলর নূর হোসেন বলেন, সড়কটির জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধানে তাঁর পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সড়কটি দীর্ঘদিন জলাবদ্ধ ছিল। এখন সেখানে উন্নয়নকাজ হচ্ছে। কাউন্সিলরের দাবি, এই কাজের মাধ্যমে অনেকে নিজের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন।
কাউন্সিলর নূর হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধান তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়, এ কথা তিনি বলেননি। তাঁর দাবি, জলাবদ্ধতা নিরসনে তিনি মেয়রের বরাবরে একাধিক আবেদন করেছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ওই অঞ্চলে ৭৩৪ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হচ্ছে। নালা থেকে মাটি ও ময়লা-আবর্জনা ওঠানো এবং সরানোর কাজে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও গাড়ি সহায়তা করছে।