
ঠিকানা রিপোর্ট : পবিত্র রমজান মাস চলছে। এ উপলক্ষে নিউইয়র্কে জমে উঠেছে ইফতারির বাজার। বাজারে হরেক রকমের ইফতারির সরবরাহ রয়েছে, তবে দাম তুলনামূলক বেশি। ক্রেতাদের পছন্দের শীর্ষে ইফতারির নতুন আইটেম। দাম বেশি হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষকে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি ইফতারসামগ্রী কিনতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। জ্যামাইকা, পারসন্স বুলেভার্ড, সাটফিন, জ্যাকসন হাইটস, কুইন্স ভিলেজ, উডসাইড, ওজন পার্ক, ব্রুকলিনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ড ও ব্রঙ্কসের মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকাগুলোর রেস্টুরেন্টে ইফতারি তৈরি করা হচ্ছে। বিক্রিও হচ্ছে বেশ। এদিকে পবিত্র রমজান উপলক্ষে অনেক মানুষ ইফতারির আয়োজন করছেন বিভিন্ন পার্টি হলে। সেখানে ৫০-২০০ জনকে পর্যন্ত আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ফেয়ার মেরিনা, জয়া হল, গুলশান ট্যারেজ, তাজমহল পার্টি সেন্টার, ঢাকা ক্লাব, জশন হল, নবান্ন পার্টি সেন্টার, পাসনি, স্টার কাবাবসহ বিভিন্ন পার্টি সেন্টারে ইফতার পার্টি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। খলিল পার্টি সেন্টারের জ্যামাইকা ও ব্রঙ্কস শাখায়ও পার্টি হচ্ছে।
তবে স্বল্প আয়ের ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা নিজেদের সাধ ও সাধ্যের মধ্যে ঘরেই ইফতারির আয়োজন করছেন। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাজারে ইফতারসামগ্রীর দাম অনেক বেশি। এ কারণে চাইলেও সবকিছু সাধ্যের মধ্যে আসছে না। বাজার খরচ বেড়ে যাওয়ায় সংসারে আর্থিক চাপ বাড়ছে। তাই ভীষণ কঠিন অবস্থার মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে।
নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে যারা স্ন্যাপ-সুবিধা পাচ্ছেন, তারা কিছুটা হলেও স্বস্তিতে আছেন। কিন্তু কম আয়ের অনেক মানুষই স্ন্যাপ-সুবিধা পাচ্ছেন না। তাদের অনেকে ইনকাম গাইডলাইনের মধ্যে পড়েন না আবার কেউ কেউ কষ্টে দিন পার করলেও সরকারি অর্থ নেন না। ফলে সীমিত আয় দিয়েই তারা কোনো রকমে সংসার চালাচ্ছেন। তারা চেষ্টা করেন কম দামে ও সাধ্যের মধ্যে কেনাকাটা করার।
একজন ক্রেতা বলেন, তিনি তার সন্তানের জন্য একটি শ্যামন ফিশ কিনতে চাইলেও দাম অনেক বেশি হওয়ায় কিনতে পারছেন না। সন্তানকে আজ নয় কাল মাছ কিনে দেব বলে বারবার সান্ত্বনা দিচ্ছেন। একটি শ্যামন ফিশের দাম কত হতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ৮০-১০০ ডলার হতে পারে। তিনি বলেন, বেতন বাড়েনি কিন্তু খরচ বেড়েছে। মাছসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। ইনফ্ল্যাশন চলছে। কী করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না। এ অবস্থায় স্বল্প আয়ের মানুষ অনেক সময় পছন্দের পণ্য কিনতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। মন চাইলেই যেকোনো খাবার কিনতে পারেন না।
অন্যদিকে একশ্রেণির মানুষ বাইরে ইফতার করতে পছন্দ করেন অথবা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার কিনে ইফতার করেন। বাজারে ইফতারির চাহিদা এখন অনেক বেশি। জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জিলাপি, হালিম, চিকেন, কাবাব, নান, বিরিয়ানি, বেগুনি, পেঁয়াজু, আলুচপ, ডিমচপ, বড়া, দইবড়া, খেজুর, শরবতসহ বিভিন্ন ইফতারসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে বেশি। একেক দোকানের বিক্রি একেক রকম। দামেও ভিন্নতা রয়েছে। বেশি বিক্রি হচ্ছে এশিয়ান মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। এখানকার দোকানি ও রেস্টুরেন্ট মালিকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা রয়েছে। তাই সবাই চেষ্টা করছেন দাম কাছাকাছি রাখার। তবে রেস্টুরেন্টের অবস্থান, ধরন, পণ্যসামগ্রীসহ বিভিন্ন কিছু বিবেচনায় দাম হেরফের হয়ে থাকে। জ্যামাইকাতে ধানসিড়ি, সাগর চাইনিজ, পানসি, স্টার কাবাব, সাগর, প্রিমিয়াম, খলিল বিরিয়ানি, সেলিম বিরিয়ানীসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ইফতারি বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জ্যাকসন হাইটসে হাটবাজার, ইত্যাদি, নবান্ন, মামা’স, কথা, মেরিট কাবাব, মুনলাইট, ডেরা, কাবাব কিং, আব্দুল্লাহসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ইফতারি বিক্রি হচ্ছে। তারা বিকেল থেকেই পসরা সাজাচ্ছেন। দূরদূরান্ত থেকে মানুষ ইফতারি কিনতে আসছেন। অনেক সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ইফতারি কিনতে হচ্ছে। ভাজাপোড়ার পাশাপাশি জিলাপি, দই, মিষ্টি, বুন্দিয়া, পায়েস, রসমালাই, রসগোল্লার চাহিদা বেশি।
খলিল বিরিয়ানিসহ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে ইফতারির বিভিন্ন দাম রয়েছে। খলিল স্পেশাল রমাদান মেন্যু ২০২৩ এর স্পেশাল খিচুড়ি প্রতি ট্রে ৫০ ডলার, স্পেশাল বিফ তেহারি ১৩০, বিফ বিরিয়ানি প্রতি ট্রে ১৪০, ট্রে প্রতি সব আইটেমের দাম বাইডেন বিরিয়ানি ১৮০ ডলার, চিকেন বিরিয়ানি ১০০ ডলার, গোট কাচ্চি বিরিয়ানি ২২০, গোট বিরিয়ানি ১৫০, চিকেন ফ্রাইড রাইস ১০০, ভেজিটেবল ফ্রাইড রাইস ৮০, চিলি চিকেন ১২০, চিকেন কারি ১০০, বিফ কারি ১৩০, গোট কারি ১৫০, স্পেশাল হালিম ১০০, জিলাপি প্রতি পাউন্ড ৮ ডলার, বুট ১০ পাউন্ড ৬০ ডলার। এ ছাড়া খলিল’স স্পেশাল রমাদান ইফতার বক্স ২০২৩-এ রয়েছে কাচ্চি বিরিয়ানি/বাইডেন বিরিয়ানি/ফ্রাইড রাইস, বুট, চিকেন ললিপপ, বেগুনি, পাকুড়া, এগচপ, আলুচপ, জিলাপি, খেজুর, শসা, গাজর, ফল ১১.৯৯ ডলার। এ ছাড়া ৯.৯৯ ডলারের ইফতার বক্সে রয়েছে চিকেন বিরিয়ানি/তেহারি/খিচুড়ি, বুট, বেগুনি, পেঁয়াজু, এগচপ/আলুচপ, জিলাপি, খেজুর, শসা, গাজর ও ফল। বক্স ছাড়া পিস হিসেবে কেনার ব্যবস্থাও রয়েছে। পেঁয়াজু দুই পিস ১ ডলার, বেগুনি দুই পিস ১ ডলার, ভেজি পাকুড়া দুই পিস ১ ডলার, আলুচপ ২ পিস ১ ডলার, এগচপ ২ পিস ১ ডলার, সমুচা প্রতি পিস দেড় ডলার, শিঙাড়া প্রতি পিস ১ ডলার, ছোলা বুট ছোট ৪ ডলার, ছোলা বুট বড় ৬ ডলার, জিলাপি ১ ডলার, হালিম ছোট ৬ ডলার বড় ১০ ডলার। এ ছাড়া স্পেশাল হালিম মাটির পাতিল ৩০ ডলার। এবার মাটির পাতিলে দই, হালিমসহ বিভিন্ন আইটেম আছে। ব্র্রঙ্কসে খলিলের দুটি শাখা ও জ্যামাইকা শাখা থেকে এই সুযোগ নেওয়া যাবে। অন্যান্য রেস্টুরেন্টেও কাছাকাছি দামে ইফতারসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে।
খলিল বিরিয়ানির প্রধান শেফ, প্রেসিডেন্ট ও সিইও খলিলুর রহমান বলেন, ইফতারিতে আমরা বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। অনেক বুকিং হয়ে গেছে। আরো বুকিং নেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমরা চেষ্টা করছি, যাতে আরো ভালো করে মানুষকে ইফতার করাতে পারি।
এদিকে বিভিন্ন মসজিদ সূত্রে জানা গেছে, দানশীল ব্যক্তিরা ইফতারির জন্য মসজিদে অর্থ দিচ্ছেন। এই অর্থে রোজাদারদের ইফতার করানো হচ্ছে। মসজিদে ইফতারের দুই রকমের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো কোনো মসজিদ কর্তৃপক্ষ নিজেরাই ইফতারির আয়োজন করছে। আবার কিছু মসজিদে নিজেদের ব্যবস্থা নেই, কেউ মসজিদে ইফতারি দিলে তা দিয়ে রোজাদারদের ইফতার করানো হচ্ছে। তবে মসজিদে আসা রোজাদাররা যাতে ইফতার করতে পারেন, সে জন্য প্রায় সব মসজিদেই খেজুর ও পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
এদিকে জ্যাকসন হাইটসে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ইফতারির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। জানা গেছে, দীর্ঘ ২৩-২৪ বছর ধরেই তারা এই ইফতারির আয়োজন করছেন। ইফতার করানোর মাধ্যমে তারা মানুষের সেবা করতে চান।