জয়তু ঠিকানা

ছন্দা বিনতে সুলতান :

‘তোমার আমার ঠিকানা
পদ্মা মেঘনা যমুনা।’

পদ্মা-মেঘনা-যমুনা হয়ে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ের মানুষের নিশানা যেনো পাঠকনন্দিত পত্রিকা ‘ঠিকানা’। ঠিকানার ৩৪তম বর্ষপূর্তিতে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অফুরান ভালোবাসা।

কথায় বলে নামেই পরিচয়। ঠিকানার মাঝে আমারা যেনো সবকিছুরই ঠিকানা খুঁজে পাই। রোদ-বৃষ্টি-ঝড়Ñ যেখানেই দরকার, ঠিকানা যেনো সবুজের মতো বাঙালি কমিউনিটিতে তার সেবার হাতটি বাড়িয়েই রেখেছে। যখন অনলাইন ছিলো না, স্মার্টফোন ছিলো না, তখনও ঠিকানা যেভাবে কমিউনিটির সেবা করে গেছে, এই আধুনিক যুগে এসেও ঠিকানা এককভাবে কমিউনিটিতে কাজ করে যাচ্ছে। উত্তর আমেরিকায় এখন অনেকাগুলি পত্রিকার মাঝেও ঠিকানার চাহিদা আগের মতোই আছে।

প্রথম যখন নিউইয়র্কে আসি, ঠিকানা আমাদের আপন ঠিকানা খুঁজে দেয়। অর্থাৎ ঠিকানা দেখেই আমার আত্মীয়রা আমাদের বাসা খুঁজে দেয়! বাসাতো পেলাম, এবার দরকার কাজ। বসে বসে খেলে রাজার ভান্ডারও তো শেষ হয়ে যায়! ঠিকানায় চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে আমাদের কাজ হলো। এবার ডাক্তার। ঠিকানায় ডাক্তারদের ঠিকানা দেখে পিসিপি ঠিক করলাম। মৌলিক বিষয়গুলি যখন খুঁজে পেলাম, তখন শিল্প-সাহিত্যের বিষয়গুলো মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। ছেলেবেলা থেকেই শিল্প-সাহিত্যের প্রতি ঝোঁক প্রবল! অবসরে বইপড়া আমার অভ্যাস। এই প্রবাসে কে আমাকে এতো বই দেবে? কুইন্সে লাইব্রেরিতে ইংরেজি বইয়ের পাশাপাশি অল্প কিছু বাংলা বই থাকতো, তা-ই এলে পড়তাম। আমার সেই তৃষ্ণা নিবারণ করলো ঠিকানার সাহিত্যের পাতা, আর তিলোত্তমা। পারিবারিক বন্ধু তপন জামান আর সাথী ভাবির অনুরোধে ঠিকানার বর্ষপূর্তি সংখ্যায় লেখা দিলাম। ঠিকানা আমার ঠিকানা, সেই শুরু! তারপর থেকে ঠিকানায় নিয়মিত লিখছি গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ।

খুব সম্ভব ২০১৪ সালে জুইস সেন্টারে উত্তর আমেরিকা সাহিত্য সম্মেলন পরিচালনা করতে গিয়ে পরিচিত হলাম ঠিকানার প্রাণপুরুষ এম এম শাহীন ভাইয়ের সাথে। অত্যন্ত বিনয়ী, বাংলাদেশের প্রাক্তণ সংসদ সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ শাহীন ভাই আমি ব্রঙ্কসে থাকি জেনে ব্রঙ্কসের ওপর একটি ধারাবাহিক লেখা লিখতে বললেন। দেবো-দিচ্ছি করে সময়ক্ষেপণ করলেও শাহীন ভাইয়ের অনুরোধ শেষ পর্যন্ত উপেক্ষা করতে পারলাম না। পরবর্তীতে ঠিকানার শেষের পাতায় ধারাবাহিকভাবে লিখলাম ‘ব্রুঙ্কস থেকে বলছি…’।

ঠিকানা একটি টিভি চ্যানেল করবে। পুর্ণোদ্যামে কাজ এগিয়ে চলছে। ঐ মুহূর্তে শাহীন ভাই আমাকে ঠিকানার সাথে সংযুক্ত করলেন। সেই সময় প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের একটি এক্সক্লুসিভ ইন্টারভিউ নেই। সেই সাক্ষাৎকারটি ঠিকানা পত্রিকা এবং ঠিকানা টিভি চ্যানেলের জন্য ক্যামেরায় ধারণ করা হয়। পরবর্তীতে ঠিকানার টিভি চ্যানেলের কার্যক্রম চালু না হলেও ঠিকানায় সাথে আমি যুক্ত হয়ে যাই। গল্প, কবিতা আর প্রবন্ধের সাথে এখন আমাকে ঠিকানার জন্য রিপোর্টিংও করতে হয়। নিউইয়র্কে এখন অনেকগুলি সংবাদপত্র, যা অবশ্যই আশাব্যঞ্জক। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, এসব সংবাদপত্রের কান্ডারীদের সাথে ঠিকানার কোন না কোন সম্পৃক্ততা ছিলো, এখনও সেই সুসম্পর্ক বজায় আছে।

সময় গড়িয়ে চলে, দিন গিয়ে মাস বছর… মহাকালের স্রোতে ৩৪ বছর হয়তো কিছুই না, কিন্তু আমাদের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র জীবনের জন্য সেতো অনেকটাই দীর্ঘ সময়। এই দীর্ঘ সময়ে ঠিকানার নেতৃত্বে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। একসময় বাবা-চাচার হাত ধরে যে ফুটফুটে ছোট্ট মেয়েটি ঠিকানায় আসতো, সময়ের স্রোতে সেই ছোট্ট মেয়েটাই বাবা-চাচার মতোই বিনয়ী মুশরাত শাহীন অনুভা এখন ঠিকানার অন্যতম কান্ডারী।
সে শক্ত হাতে হাল ধরেছে ঠিকানার আগামীর পথে। নবীন আর প্রবীণের সম্বন্ধ যে ঠিকানা, আরো ঋদ্ধ হবে। এগিয়ে যাবে ঝান্ডা হাতে আলোর দিশারী হয়ে- এই প্রত্যাশা। জয়তু ঠিকানা…।

লেখক : কবি ও সাংবাদিক।