বিশ্বচরাচর ডেস্ক : রোহিঙ্গাদের ওপর যৌন সহিংসতার ঘটনায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে জাতিসংঘ। একই সঙ্গে সহিংসতা চলার সময় ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্বাসযোগ্য সন্দেহের কারণে দেশটির বিদ্রোহী গ্রুপগুলোকেও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা পরিষদে পাঠানো এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার দাবি করেছে বার্তা সংস্থা এপি। গত ১৩ এপ্রিল সংস্থাটির প্রকাশিত এক খবরে এই তথ্য জানানো হয়। এ দিকে সম্প্রতি রোহিঙ্গা বিতাড়নের ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিসি) এক কৌঁসুলির রিট ও এ সংক্রান্ত তৎপরতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মিয়ানমার। নেপিদো এই পদক্ষেপকে ১৯৬৯ সালের জাতিসংঘের ভিয়েনা চুক্তি ও আইসিসি সনদের প্রস্তাবনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে দাবি করেছে। একই সঙ্গে এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের সামিল বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মিয়ানমারের এ বক্তব্যকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ করে রিটকারী কৌঁসুলি ফাতাও বেনসৌদার কার্যালয় জানিয়েছে, তারা আগের সিদ্ধান্তেই অনড় রয়েছে।
এপির খবরে জানানো হয়, রোহিঙ্গাদের সমষ্টিগতভাবে শাস্তি দেওয়ার কৌশল হিসেবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ব্যাপক যৌন সহিংসতা চালায় বলে জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ১৬ এপ্রিল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে এই প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা হবে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নৃশংসতায় শারীরিক ও মানসিক ক্ষত নিয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নারী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রামাণ্য বক্তব্য এরই মধ্যে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মেডিকেল স্টাফ ও অন্যরা তুলে ধরেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিবও বলেছেন, রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া হতে বাধ্য এবং দেশে ফেরত যাওয়া বন্ধ করতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ব্যাপক হুমকি দিয়েছে এবং যৌন সহিংসতা চালিয়েছে। তারা সমন্বিতভাবে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন করেছে।
মহাসচিব আরও বলেন, যৌন সহিংসতার শিকারদের বেশির ভাগই ছিল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রান্তিক নারী ও কিশোরী। সহিংসতার সময় দুর্গম ও গ্রামাঞ্চলে বসবাস করা এসব নারীর সাহায্য পাওয়ার মতো সুযোগও ছিল না। এর আগে রোহিঙ্গা নির্যাতনের অভিযোগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এ দিকে গত ১৩ এপ্রিল এক বিবৃতিতে মিয়ানমার সরকার বলেছে, আইসিসিতে রোহিঙ্গা বিতাড়নের বিচারের নির্দেশনা চেয়ে আবেদনের খবরে তারা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। বিবৃতিতে গাম্বিয়ান আইনজীবী ফাতাও বেনসৌদার কড়া সমালোচনা করা হয়। জবাবে সেদিনই পাল্টা বিবৃতিতে আইসিসির কৌঁসুলিদের দপ্তর জানায়, ফাতাও বেনসৌদার আবেদন রোহিঙ্গা নির্যাতন বিষয়ে তার পূর্ণ সতর্কতার বহিঃপ্রকাশ। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে আইসিসির কৌঁসুলিদের আকাক্সক্ষা থাকলেও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান ও বিচারব্যবস্থার আওতার মধ্য থেকেই তারা তা করতে চান।