জাতিসংঘের বাড়ছে চীনের প্রভাব

বিশ্বচরাচর ডেস্ক : এ সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ঘিরে থাকা গুঞ্জনগুলো যেমন সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, ঠিক তেমনি নীরবে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবও অনেক পশ্চিমা কূটনীতিকের কাছে সমান উদ্বেগের বিষয়। চীন শুরু থেকেই জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের অংশ হিসেবে থাকলেও সবসময় যেন একটু পেছনের সারিতেই থাকত। সেই চীন এখন নিজের জাতিসঙ্ঘে নিজের প্রভাবশালী আসন খুঁজছে। জাতিসংঘের বাজেটে অবদান বৃদ্ধির পাশাপাশি তারা বিশ্বব্যাপী নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি জোরদার করার দিকেও দৃষ্টি দিচ্ছে। মানবাধিকারের ওপরও নিজেদের জাতীয় সার্বভৌমত্বকে প্রাধান্য দিচ্ছে।

ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক গবেষক রিচার্ড গোয়ান বলেন, মূলত কয়েক দশক ধরেই এটি ধীরে ধীরে হয়ে আসছিল, কিন্তু ইদানীং এটি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল, ইউনেস্কোসহ যে সব সংস্থা থেকে সরে যাচ্ছে, চীন সে জায়গাটি নিজেদের দখলে নিয়ে নিচ্ছে। আবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের সরে যাওয়ার মাধ্যমে জাতিসঙ্ঘে ইউরোপীয়দের আওয়াজ তুলনামূলক দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। একই সময়ে চীন জাতিসঙ্ঘে নিজেদের অবস্থান আরো শক্তিশালী করে তুলছে।

শান্তিরক্ষায় এখন চীন জাতিসঙ্ঘের অন্যতম স্তম্ভ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২০০৩ সালেও যেখানে জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে চীনের আর্থিক অবদান ছিল মাত্র তিন শতাংশ, এখন তা এসে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ২৫ শতাংশে। আগামী পাঁচ বছরে চীন শান্তিরক্ষায় জাতিসঙ্ঘকে ১০০ কোটি ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। অন্য দিকে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা দিয়েছে, জাতিসঙ্ঘে যুক্তরাষ্ট্রের দেয়া সহায়তা তারা হ্রাস করতে শুরু করেছে।

এ দিকে চীন তার আট হাজার সেনাসদস্যকে জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের জন্য প্রস্তুত রেখেছে। চীন ২০১২ সাল থেকে একা শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যত সেনা পাঠাচ্ছে, নিরাপত্তা পরিষদের অন্য চার সদস্যের মোট পরিমাণটিও তার চেয়ে নিচে অবস্থান করছে। তবে জাতিসঙ্ঘের এখন যে ১৫টি শান্তি মিশন চলছে তার কোনোটিতেই শীর্ষ পর্যায়ে চীনাদের কোনো অবস্থান নেই। চীন এ ক্ষেত্রে জাতিসঙ্ঘের কাছে সামঞ্জস্যপূর্ণ অবস্থান দাবি করেছে। চীন এখন শান্তিরক্ষী বাহিনী ও তার উন্নয়নে যে ভূমিকা পালন করছে, তার ফলে ধারণা করা হচ্ছে, তারা শিগগিরই জাতিসঙ্ঘের পোর্টফোলিওতে মানবাধিকারের তৃতীয় স্তম্ভ যোগ করবে। এর ফলে বিভিন্ন সংলাপ, সমঝোতা পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে বড় একটি চাপ হয়ে দেখা দেবে।