জাতিসংঘ দূত বললেন : মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী হবেন সু চি

বিশ্বচরাচর ডেস্ক : মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হলে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি দোষী সাব্যস্ত হবেন বলে উল্লেখ করেছেন মিয়ানমারে মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি।
এ দিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সমস্যার টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে এগিয়ে না এলে উদ্ভূত পরিস্থিতির দায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই নিতে হবে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বিভিন্ন দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বাংলাদেশের এই বার্তা জানিয়ে দিয়েছেন।
ব্রিটিশ সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ফোরে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ইয়াংহি লি বলেন,মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যা হয়েছে তা ধারাবাহিক নিপীড়ন। এই নির্যাতন-নিপীড়নের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বা এ ধরনের ঘটনার কথা জেনেও তা ঠেকাতে ব্যবস্থা না নেওয়ায় সু চি দোষী সাব্যস্ত হতে পারেন। তিনি আরো বলেন,যা হয়েছে তা গণহত্যা কি না তা কেবল আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বলা সম্ভব। এ কারণে আমি বলছি, সেখানে যা হয়েছে তাতে গণহত্যার আলামত রয়েছে।
বিশেষ দূত বলেন,বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন মোটেও নিরাপদ হবে না। আমি বলে আসছি যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে যত দিন না বৈষম্যমূলক ও নিপীড়নমূলক আইনগুলো বাতিল হচ্ছে তত দিন আপনারা এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে থাকবেন। তারা (রোহিঙ্গারা) ফিরে গেলে আবারও এমনটি ঘটবে।
এমনকি জাতিসংঘের বিশেষ দূত হিসেবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করতে গিয়ে ইয়াংহি লি নিজেও মেরে ফেলার হুমকি ও হত্যাচেষ্টার বিষয়ে খবর পেয়েছেন। গণহত্যার অংশ হিসেবে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চালানো হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,অবশ্যই।
ইয়াংহি লি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিহত হওয়ার যে সংখ্যা গণমাধ্যমে এসেছে প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়েও অনেক বেশি হতে পারে।
অং সান সু চির মনোভাব কী জানতে চাইলে ইয়াংহি লি বলেন,তিনি হয় অস্বীকার করছেন নয়তো তাকে বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। সু চি কখনো মিয়ানমারের মানবাধিকারের প্রতীক ছিলেন না। তিনি একজন রাজনীতিবিদ। এখনো তিনি তা-ই আছেন।
সংকট না মিটলে দায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের : গত ১৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে বিভিন্ন দেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র সচিব মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা প্রদান, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবং এর টেকসই সমাধান বিষয়েরোহিঙ্গাদের মানবিক সংকট : বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া শীর্ষক বক্তব্য দেন। সেখানে রোহিঙ্গাদের উদারভাবে মানবিক সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকা এবং রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়াতে দেশবাসীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানসহ অন্যান্য বিষয় স্থান পায়। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ফলে বাংলাদেশ যে নিরাপত্তা, আর্থসামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে তাও সবিস্তারে তুলে ধরেন তিনি।
মিয়ানমারের ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার কথা উল্লেখ করে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ চায় রোহিঙ্গারা নিজ ভূমিতে নিরাপদে পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। এ সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমারের ওপর চাপ বজায় রাখতে হবে।
জাতিসংঘে ভারত, রাশিয়া, চীন, নেদারল্যান্ডস, পেরু, পাকিস্তান, সৌদি আরব, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ওমান, সিঙ্গাপুর, ভ্যাটিক্যান, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়াসহ ৫০টির বেশি দেশের রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিরা ছাড়াও ওআইসি রাষ্ট্রদূত ড. আগশিন মেহিদয়েভ মতবিনিময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে নিউইয়র্কে ইন্টারন্যাশনাল পিস ইনস্টিটিউটের আয়োজনে এ বিষয়ে এক আলোচনায় অংশ নেন পররাষ্ট সচিব। এ ছাড়া তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের মিরোস্লাভ লেইসাক, মানবিক সহায়তাবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল মার্ক লোকক, রাজনীতিবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জেফরে ডি ফেল্টম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।