নিজস্ব প্রতিনিধি : এরশাদের জাতীয় পার্টিকে নিয়ে বিব্রতকর এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে সরকার ও সরকারি দল। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে বলেই সরকারের কাছে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপিকে ডিঙিয়ে জাতীয় পার্টিকে জাতীয় সংসদে একটা সম্মানজনক অবস্থান দেওয়া সম্ভব হবে না। আবার বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে না-ও আসে, সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিকে সংসদে বিরোধী দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সরকারি দলের জন্য অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হবে। দেশের মানুষের কাছেও তা গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। অন্যদিকে দেবর-ভাবির বিরোধ দৃশ্যত কমলেও সরকারের আস্থা অর্জন করতে পারেননি তারা।
জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেই নয় কেবল, আগামী নির্বাচনে অতীতের পুনরাবৃত্তি করা হলে বা ভিন্নতর কৌশলাশ্রয়ী কর্মপন্থার মাধ্যমে নির্বাচন করা হলে তা মারাত্মক পরিণাম ডেকে আনতে পারে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, দেশের রাজনীতিসচেতন মানুষের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারলে তারা রাজপথে নির্বাচন ও সরকারবিরোধী অবস্থান নিতে পারে। বিএনপি নির্বাচনে যদি অংশ না-ও নেয়, এ ধরনের আন্দোলনে অভাবিত সাফল্য পেতে পারে। এর সঙ্গে রয়েছে বিদেশিদের গভীর পর্যবেক্ষণ, তাদের নেপথ্য সমর্থন ও সহযোগিতা। সরকারি দলের নেতাদের উল্লেখযোগ্য অংশই গভীরভাবে প্রত্যয়ী, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীরাই জয়ী হবে। আওয়ামী লীগ এককভাবেই সরকার গঠন করতে পারবে। এমনকি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও বিস্ময়ের হবে না। বিএনপি নির্বাচন অংশ নেবে ধরে নিয়েই তারা এতটা আশাবাদী। এই আশাবাদের প্রধান ভিত্তি সরকারের দৃঢ় নেতৃত্ব, ব্যাপক উন্নয়ন। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, জনজীবনে অসহনীয় দুর্ভোগ, সরকারদলীয়দের দুর্নীতি, সাধারণ মানুষের ওপর অত্যাচারের বিষয়গুলো অবশ্য তারা তেমন একটা বিবেচনায় নিচ্ছেন না। বিএনপি নির্বাচনে না গেলে সরকারি দল সে ক্ষেত্রে বিকল্প পরিকল্পনাও নিয়ে রেখেছে। জাতীয় পার্টির উল্লেখযোগ্য গ্রহণযোগ্যতা না থাকায় ১৪ দল থেকেই সংসদে বিরোধী দল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। ১৪ দলের পাঁচ-ছয়টি দল নিয়ে তা করা হতে পারে। জাসদ (ইনু), ওয়ার্কার্স পার্টি, আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জেপি, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপসহ আরো এক-দুটি দল নিয়ে নির্বাচনী জোট করা হবে। তাদের প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ছাড় দেবে সরকারি দল। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও ১৪ দলীয় জোটভুক্ত এই দলগুলোর সঙ্গে গভীর সমঝোতার ভিত্তিতেই নির্বাচন করবে আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনের চেয়েও অধিকসংখ্যক আসনে তাদের ছাড় দেওয়া হবে।
জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ আসন্ন নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনে ছাড় দেবে না। রংপুরসহ বৃহত্তর রংপুরে এক-দুটি আসনেও তারা জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতায় আসার তাগিদ বোধ করছে না। দেশের বিভিন্ন স্থানে মহাসচিব, কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ নির্দিষ্ট সংখ্যক আসনেই ছাড় দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের কাছে পরম বিশ্বস্ত প্রমাণিতদের বেলায়ই তা ঘটবে। সারা দেশে সর্বমোট ২০টি নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ছাড় দেবে। জাতীয় পার্টির চেয়ে অধিক সংখ্যক আসনে ১৪ দলীয় জোটভুক্ত ছোট দলগুলোকে ছাড় এবং সক্রিয় সমর্থন-সহযোগিতা দেবে সরকারি দল। জাতীয় পার্টির বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি ন্যূনতম আস্থা নেই সরকারি দলের।