জাতীয় দলের ক্যাম্পে অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশেল

স্পোর্টস রিপোর্ট : যতই দিন যাচ্ছে, ততই যেন তলানিতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবল (মহিলা ফুটবল নয়)। ফিফা র‌্যাংকিংয়ে ডাবল সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তেই আছে লাল-সবুজরা। সাফ অঞ্চলেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের খবর নেই, অথচ ২০২২ বিশ্বকাপে খেলার আকাশ-কুসুম স্বপ্ন। ১৫ বছর ধরে সাফ ফুটবলের শিরোপা নেই। এই বন্ধ্যত্ব ঘোঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। গত মার্চের শেষদিকে লাওসের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচ খেলার পরই আচমকাই পদত্যাগ করে বসেন জাতীয় দলের অস্ট্রেলিয়ান কোচ এ্যান্ড্রু অর্ড। তখন থেকেই কোচহীন জাতীয় দল। প্রায় দেড়মাস হয়ে গেলেও নতুন কোচ নিয়োগ দিতে পারেনি তারা। অথচ বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দিয়েছিলেন, ১০ এপ্রিলের মধ্যে নতুন কোচের নাম ঘোষণা করা হবে। কিন্তু ১০ এপ্রিল তো দূরে থাক, ১০ মে’তেও সেটা করতে পারেনি দেশীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। ঘোষণা দিয়ে তা যথাসময়ে বাস্তবায়ন না করার অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে বাফুফের জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান কাজী নাবিল আহমেদ। অবশেষে আরও কিছুটা কালক্ষেপণ করে ৯ দিন পার করে গত ১৯ মে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন কোচের নাম ঘোষণা করেছে বাফুফের জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটি। তিনি জেমি ডে। জাতিতে ব্রিটিশ। অনলাইনে তার সঙ্গে ইতোমধ্যেই চুক্তি করা হয়ে গেছে। এর মাধ্যমে মাত্র ৩৮ বছর বয়সী নবীন-অনভিজ্ঞ জেমিই হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ দলের দ্বিতীয় ব্রিটিশ এবং ২০তম বিদেশি কোচ। আগামী ১ জুন থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত এক বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। তুন কোচের আনুষ্ঠানিক নাম ঘোষণা উপলক্ষে গত ১৯ মে বাফুফে ভবনে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যথারীতি নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা পর দেখা মিললো ‘সময়জ্ঞানে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান’ বাফুফে কর্তাদের। এতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় দল ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান কাজী নাবিল আহমেদ, জাতীয় দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাস রূপু, বাফুফের স্ট্র্যাটেজিক এন্ড টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলি, জাতীয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন কোচ জেমি বাংলাদেশে আসবেন আগামী জুনের প্রথম সপ্তাহে। তবে এর আগেই সাভারের বিকেএসপিতে ২৬ মে থেকে জাতীয় দলের প্রাথমিক ক্যাম্প শুরু হবে। প্রাথমিক দলে ডাক পেয়েছেন আপাতত ৪১ জন। পরে আরও চারজন যুক্ত হতে পারে। জেমি আসার আগ পর্যন্ত সহকারী কোচ মাহবুব হোসেন রক্সির সঙ্গে মাসুদ কায়সার ও মোস্তফা পারভেজ আনোয়ার বাবুর অধীনে চলবে জাতীয় দলের ফিটনেস ক্যাম্প।
হেড কোচের নাম জানা গেলে এখনও সহকারী কোচ, ফিটনেস কোচ এবং গোলরক্ষক কোচের নাম জানাতে পারেননি নাবিল। তবে তিনি জানান, এই প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুতই তারা হেড কোচের সঙ্গে যোগ দেবেন। তাদের নিয়োগের ব্যাপারে বাফুফে জেমির মতামতও নেবে। জুলাইয়ের শেষদিকে একটি অফিসিয়াল এবং ৩/৪টি প্রস্তুতি বা আনঅফিসিয়াল ম্যাচ আয়োজনের পরিককল্পনা আছে বাফুফের। জেমির বেতন এবং তাকে নিয়োগের ব্যাপারে কি ধরনের মানদ- ছিল এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে নাবিল কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এর আগে নিজের ‘অফিসে’ অনুষ্ঠিত কোচ সংক্রান্ত আরেকটি প্রেসমিটে নাবিল যেসব তথ্য দিয়েছিলেন, সেগুলোতেও আছে গরমিল। তখন তিনি বলেছিলেন জাতীয় দলের ট্রেনিং শুরু হবে ১৯ কিংবা ২০ মে থেকে। দলে ডাকা হবে ৩৫ ফুটবলারকে। অথচ শনিবারের প্রেসমিটে বললেন ভিন্নকথা (২৬ মে এবং ৪১ ফুটবলার)।
ফিফা র‌্যাংকিংয়ে জাতীয় দলের অবস্থান যেখানে ডাবল সেঞ্চুরির (১৯৭) কাছাকাছি, যেখানে আগামী সেপ্টেম্বরে জাতীয় দল ঘরের মাঠে অংশ নেবে ‘দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্বকাপ’ খ্যাত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে’, যেখানে বাকি দেশগুলো কোচ নিয়ে জোরেশোরে প্রস্তুতি শুরু করেছে, সেখানে বাংলাদেশের এখনও কোনো কোচই নেই।
এর আগে অর্ডকে নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে ন্যাশনাল টিমস কমিটির যুক্তি ছিল তার এশিয়ান লেভেলের ফুটবলারদের নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। কিন্তু জেমির সেই অভিজ্ঞতাও নেই। নাবিলের কথা শুনে মনে হয়েছে অনভিজ্ঞ-নবীন এই কোচকে নেয়ার পেছনে তার আর্সেনালের যুব একাডেমিতে খেলা এবং জাতীয় বয়সভিত্তিক তিনটি দলে খেলাটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তবে অন্য কোচের মতো এই কোচও যদি ব্যর্থ হন? ‘কোচ যতই দক্ষ-অভিজ্ঞ হোক না কেন, তিনি আমাদের কতটা দিতে পারবেন- সেটাই এখন দেখার’ আগে থেকেই যেন আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা নাবিলের।
তবে মজার বিষয় হলো কোচরা একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে দায়িত্ব নিলেও এই কোচ নাকি এখনও সেটি জানাননি। নাবিল জানান, ‘আলোচনায় তিনি আমাদের লক্ষ্য জানতে চেয়েছেন। আমরা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল টার্গেট দিয়েছি।’