জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়

রাজনৈতিক ডেস্ক : হাইকোর্টের রায়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হয়েছে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে দলটির আপিল পাঁচ বছর ধরে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন। বিচারাধীন ওই আপিল শুনানির জন্য চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম। হাইকোর্টের ওই রায়ের আলোকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পূর্বে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিবন্ধন বাতিলের সঙ্গে দল হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়টি সম্পর্কিত কি না এ নিয়ে অভিমত দিয়েছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও সাবেক অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তবে রাজনৈতিক কর্মকাÐ চালাতে পারবে। আর নিবন্ধন বাতিলের সঙ্গে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিষিদ্ধের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের একাধিক মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াতকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। ওই রায়ের আলোকে সরকারের সামনে নির্বাহী আদেশে জামায়াতকে নিষিদ্ধের সুযোগ রয়েছে। যেমন সন্ত্রাস দমন আইনে হিযবুত তাহরীরকে নিষিদ্ধ করেছে সরকার।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্কুল অব ল’ পরিচালক সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ইসির নিবন্ধন ব্যতীত দেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে, জামায়াত ওই কাতারে পড়বে। তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের মামলা হয়েছে ব্যক্তির বিরুদ্ধে। সেখানে ওই ব্যক্তি অপরাধ করেছে কি না সেটাই রায়ে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় তর্কিত ইস্যুর বাইরে আদালতের অনেক পর্যবেক্ষণ থাকে। যে বিষয়ে রায় দেওয়া হচ্ছে তার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না হলে ওই পর্যবেক্ষণের আইনগত কোনো মূল্য নেই। জামায়াত নিষিদ্ধ হবে কি হবে না সে বিষয়ে মামলা হলে এবং ওই মামলায় যে রায় আসবে সেটা অবশ্যই পালনীয়। তবে সন্ত্রাস দমন আইনে যদি সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে সেটা ভিন্ন বিষয়।

প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০বি (১)(বি)(২) এবং ৯০সি অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও সংবিধানপরিপন্থী বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। ২০১৩ সালে দেওয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিল করে দলটির তৎকালীন মহাসচিব। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বেশকিছু রায়ের পর্যবেক্ষণে জামায়াতে ইসলামীকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে উল্লেখ করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, জামায়াত একটি অপরাধী সংগঠন। একাত্তরে তাদের ভূমিকা ছিল দেশের স্বার্থের পরিপন্থী। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে দল হিসেবে জামায়াতের বিচারের দাবি জোরালো হয়। পরে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে। গত জানুয়ারি মাসে তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ জামায়াতের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় দাখিল করা হয়। এরপর প্রায় ৫ বছর অতিবাহিত হয়েছে; কিন্তু বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।