রাজনৈতিক ডেস্ক : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ২ মার্চ ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি দলের সাংগঠনিক ৮১ জেলার সঙ্গে মতবিনিময় শুরু করলেন। দলের ভবিষ্যৎ করণীয় ঠিক করতে এ বৈঠক ডাকা হলেও এতে গুরুত্ব পেয়েছে জামায়াত প্রসঙ্গ। জামায়াতকে জোটে রাখা না রাখার বিষয়ে জেলা নেতাদের মতামত নেন তিনি। তাদের মতামত জামায়াতের পক্ষে ছিল না।
নেতারা বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জামায়াত থাকলে বিএনপির বিশেষ কোনো সুবিধা নেই। বিএনপি ‘একাই একশ’। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। লন্ডন থেকে স্কাইপে তারেক রহমান বৈঠকে যোগ দেন। বিকেল ৫টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক চলে। এ সময় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. তৈমুর রহমান বলেন, দলের সাংগঠনিক অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ করণীয় বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাদের মতামত নিয়েছেন। এতে জামায়াত প্রসঙ্গ উঠে আসে। তারেক রহমান জানতে চান, জামায়াতকে জোটে রাখা উচিত কি না। জেলা বিএনপির শীর্ষ ৫ নেতা সবাই মতামত তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি জামায়াতকে জোটে রাখার সুবিধা ও অসুবিধা- দুটি বলেছি। ’৯৬ সালে জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগ আন্দোলন করার প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তাদের সঙ্গে ভোটের জোটে রাখলে কী হতে পারে তার মত দিয়েছি। এ-ও বলেছি, জামায়াতকে ছেড়ে দিলে কোনো সমস্যা নেই। বিএনপি একাই একশ। নির্বাচন এবং আন্দোলন আমরা একাই সব করতে পারি।’
এর আগে ২০০১ সালে জোট সরকারের আমলে তারেক রহমান তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলন এবং নয়াপল্টনের কার্যালয়ে জেলা নেতাদের ডেকে তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিভিন্ন সময় জেলা নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেও সব সাংগঠনিক জেলার সঙ্গে তার বৈঠক হয়নি। এর আগে তারেক রহমান দলের ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা কমিটির সদস্য, যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সম্পাদকমÐলীর সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। সম্প্রতি জামায়াতের নীতিনির্ধারকরা বিএনপির জোটে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এরই মধ্যে তাদের শীর্ষ নেতা আবদুর রাজ্জাক জামায়াত নেতৃত্বের সমালোচনা করে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন।
তিনি মনে করেন, জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া উচিত এবং দল বিলুপ্ত করা উচিত। আবদুর রাজ্জাক যখন এ বক্তব্য দেন তখন লন্ডনে ছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। ধারণা করা হচ্ছে, দুই জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে তারেক রহমান এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
ওই সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, ‘জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’ তার এ বক্তব্যের পর দলের নেতারা ধারণা করেছেন, জামায়াতের ব্যাপারে এটি বিএনপির নতুন মনোভাব। এরই মধ্যে জামায়াতকে জোটে রাখা না রাখার বিষয়ে বিএনপির মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
দলের অনেকেই মনে করেন, এখন আর জামায়াতে জোটে রাখার দরকার নেই। তাদের ২০ দলের বাইরে থাকতে বলবে বিএনপি। বৈঠকে উপস্থিত এক নেতা বলেন, জেলা নেতাদের প্রায় সবার মতামত ছিল জামায়াতবিহীন জোট। এর পক্ষে তাদের মতামত হলো জামায়াতের রাজনৈতিক অবস্থান আর আগের মতো নেই। বরং স্থানীয় নির্বাচনে তারা বিএনপির জন্য প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায়। রাজনীতিতে তারা জোটের স্বার্থে চেয়ে নিজেদের স্বার্থটাই বেশি দেখেন।
জেলা বিএনপি সভাপতি বলেন, দলের সাংগঠনিক দুর্বলতার বিষয়ে কথা হয়েছে। জেলা কমিটি পুনর্গঠনে বিষয়েও কথা বলেছেন তিনি। জেলা কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার তিন মাস আগেই সম্মেলনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ঠাকুরগাঁও জেলা কমিটির মেয়াদ আছে আরও ৬ মাস। তৈমুর রহমানকে সভাপতি এবং মির্জা ফয়সাল আমিনকে সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ দিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছিল।