জামায়াতকে ছাড় ১২ আসনে

নিজস্ব প্রতিবেদক : জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে ড. কামাল হোসেন ও তার নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের দ্বন্দ্ব-বিরোধের অবসান ঘটাতে বিএনপির নেতারা বিশেষভাবে উদ্যোগী হয়েছেন। নির্বাচনের রাজনীতিতে জামায়াতের গুরুত্ব তুলে ধরে তারা ফ্রন্টনেতাদের প্রভাবিত করছেন। জামায়াতের ১২ জন প্রার্থীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেবে বিএনপি। আসনগুলোতে বিএনপি প্রার্থী দেবে না। ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের নেতা ও তাদের প্রার্থীদের সঙ্গে বিরোধ যাতে দেখা না দেয়, সেদিকে সতর্ক থেকেই জামায়াতকে ছাড় দেওয়া হবে। অন্যদিকে জামায়াত ৩০টি আসন চেয়েছে। ২২টি আসন নিয়ে তারা দর-কষাকষি করছে।
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন জামায়াতে ইসলামীর প্রবল সমালোচক। জামায়াতকে শরিক রেখে ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে ঐক্য করতে তারা বরাবরই প্রবল বিরোধী ছিলেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা হিসেবে ড. কামাল হোসেনও জামায়াতবিরোধী বক্তব্য রেখেছেন। বিপদগ্রস্ত অবস্থায় পড়ে বিএনপির নেতারা দুই কূলই রক্ষা করার কঠিন কাজটি করছেন। ড. কামালসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা ঘরে-বাইরে জামায়াতের তীব্র সমালোচনা করে বক্তব্য রাখলেও জামায়াত নীরব। একটি কথাও বলছে না তারা। দলের অন্যতম নেতা হিসেবে জোটের শরিক ধর্মভিত্তিক এই দলটির পক্ষে বিএনপির নেতারাও প্রকাশ্যে কথা বলছেন না। বিএনপি স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল হিসেবে এর বিপক্ষে অবস্থানকারী কোনো দল ও ব্যক্তির পক্ষে আদর্শিক কারণেই কথা বলতে পারে না। কিন্তু ২০ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে তাদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্বও এড়িয়ে যেতে পারে না। বিএনপির অবস্থাটা দাঁড়িয়েছে শ্যাম রাখি না কুল রাখি। পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা কৌশল নিয়েছে। একদিকে জামায়াত নেতাদের বলেছে মুখে কুলুপ এঁটে থাকতে। ড. কামাল হোসেন ও তার অনুগামীদের জামায়াতবিরোধী বক্তব্য যত আক্রমণাত্মকই হোক, কোনো অবস্থাতেই তার জবাব না দিতে পরামর্শ দিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ অন্যান্য বড় নেতারা। বিএনপির পরামর্শমতো তারা নীরবে সব হজম করছে। অন্যদিকে তারাই ড. কামাল হোসেনদের কাছে ভোটের রাজনীতিতে বিএনপির কাছে জামায়াতের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন। বিএনপির নেতারা ড. কামাল ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের জানিয়েছেন, দলগতভাবে জামায়াত নির্বাচন করতে না পারলেও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়ই তাদের ভোট রয়েছে। অষ্টম ও নবম সংসদ নির্বাচনের ফলাফল উল্লেখ করে জানান, এই দুই নির্বাচনে জামায়াত সারা দেশে প্রদত্ত মোট ভোটের পৌনে ৫ শতাংশ পেয়েছে। এসব ভোট না পেলে বিএনপির ২১টি আসন হাতছাড়া হয়ে যাবে। গভীরভাবে তারা হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন, ওই নির্বাচনী এলাকাগুলোর জামায়াত কর্মী-সমর্থকদের ভোট না পেলে বিএনপির প্রার্থী বিগত নির্বাচনে জয়ী হতে পারতেন না। আসনগুলো আওয়ামী লীগের দখলে চলে যেত। জামায়াতের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে বোঝাপড়ায় আসতে না পারলে বিএনপির পক্ষে এই আসনগুলো ধরে রাখা সম্ভব হবে না। এই বাস্তবতা বিবেচনায় রেখেই বিএনপি জামায়াতের সঙ্গে একটা সম্পর্ক রেখে চলেছে। এতে রাজনৈতিক আদর্শিক প্রশ্ন নেই। ড. কামাল হোসেনকে ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা হয়েছে। জামায়াতের ব্যাপারে যতটা সম্ভব কম আক্রমণাত্মক হওয়ার অনুরোধও করা হয়। আ স ম রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না প্রবল জামায়াতবিরোধী না হওয়ায় বিএনপি তাদের নিয়ে চিন্তিত নয়। রব কিছুটা আক্রমণাত্মক হলেও তার দলের প্রার্থীদের প্রত্যাশিত আসনে ছাড় দেওয়ার নিশ্চয়তার পরিপ্রেক্ষিতে তিনিও অনেকটা নীরব। সিলেটের জনসভায় ড. কামাল ও রব জামায়াতের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। সমস্যা হতে পারে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে। বিএনপি পরোক্ষভাবেও জামায়াতের সঙ্গে যে নির্বাচনী সমঝোতা গড়ে তুলছে, কাদের সিদ্দিকী তার প্রকাশ্য কঠোর সমালোচনা করতে পারেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ভোটের রাজনীতিতেও তা প্রভাব ফেলতে পারে।