গাজীপুর : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিনে ১৪ দলীয় জোটের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে সমঝোতা ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সঙ্গে বৈঠকের পর প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন জাসদের প্রার্থী রাশেদুল হাসান রানা। এর আগেই নির্বাচনে বিএনপির প্রতিপক্ষ হয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হওয়া জামায়াতের মহানগর ২০ দলীয় জোটের পক্ষে তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। এই জোটের প্রার্থী হাসান উদ্দীন সরকার নির্বাচনে সেনা মোতায়েন, দলীয় ও বিতর্কিত কর্মকর্তা প্রত্যাহার, প্রচারে প্রার্থীদের সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান, কালো টাকা ও দলীয় প্রভাবমুক্ত পরিবেশে অবাধ নির্বাচনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এছাড়া ইসলামী ফ্রন্টের মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন লক্ষ¥ীপুরা এলাকায় এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন। এছাড়াও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ১৯ জন এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ২ জনের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার ও প্রার্থীদের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে এবং আচরণবিধি পালন করাতে যা যা করণীয় তাই করছে নির্বাচন কমিশন।
২৫ এপ্রিল প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দের পর আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার কার্যক্রম চালানোর ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে প্রার্থীদের। যদিও নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে ও আচরণ ভেঙে এরই মাঝে নানা কৌশলে প্রার্থীরা প্রচার ও গণসংযোগ শুরু করেছেন। আর আচরণবিধি লংঘনের প্রমাণ পেয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীসহ চারজন মেয়র প্রার্থীকে রির্টানিং অফিসার লিখিতভাবে শতর্ক করে দিয়েছেন। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় অনেক মেয়র প্রার্থী, বিশেষ করে সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী তাদের দলীয় প্রতীকসহ এরই মাঝে পোস্টার, লিফলেট ছাপিয়ে তা বিতরণ করা এবং দেয়ালে লাগিয়েছে।
জাসদের কেন্দ্রীয় নেতা নাদের চৌধুরীসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিতিতে নগরের ছয়দানা এলাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের বাসায় প্রার্থী এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দীন মহি, কাজী ইলিয়াসসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার উপস্থিতিতে বৈঠকে হয়। বৈঠকের পরই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। রাশেদুল হাসান রানা জানান, এর আগে গত রাতে ১৪ দলের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মোহাম্মদ নাসিম, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু জোটের স্বার্থে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহরের বিষয়ে মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে কথা বলেন। গণতন্ত্রের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থীর পক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামবেন।
এদিকে, ইসলামী ফ্রন্টের মতবিনিময় সভায় ফ্রন্টের মনোনীত মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন, পার্টির মহাসচিব মাওলানা এমএ মতিন, ফ্রন্টের নেতা মুফতি মো. আব্দুল্লাহ চিশতী, রাফিউল আজম আফসারিসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মতবিনিময় সভায় তারা বলেন, এ নির্বাচনের ন্যায় ভিত্তিক, ধর্মভিত্তিক সমাজ ও ধর্মীয় শাসন প্রতিষ্ঠার বার্তা মাধ্যমে নগরবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে চান এবং ভোটে তাদের অবস্থান জানান দিতে চায় তারা। ইসলাম মানবতার ধর্ম, ইসলাম কল্যাণের জন্য- এসব বার্তা নিয়ে নির্বাচনে জিতে মানুষের সম্যস্যাগুলোর সমাধান করে উন্নত নগর গড়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দুপুরে টঙ্গীর আউচপাড়ায় বিএনপি প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকারের বাস ভবনে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে হাসান সরকার বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে সিল মেরে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা, ভোট ডাকাতি, ব্যালট পেপার ছিনতাই, ক্যাডারদের অস্ত্রের মহড়াসহ সব ভোটকেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে সিল মারার ঘটনা ঘটেছে। এই নির্বাচনেও যেন এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, এজন্য নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সন্ত্রাস দমন, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও তালিকাভুক্ত চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের পদক্ষেপ নিতে হবে। বিএনপি তথা ২০ দলীয় ঐক্যজোটের ধানের শীষ প্রতীকের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের অহেতুক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি না করার আহ্বান জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও হাসান সরকারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন, সাধারণ সম্পাদক কাজী সাইয়্যেদুল আলম, জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাউদ্দিন সরকার, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হোসেন, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক শওকত হোসেন সরকার প্রমুখ। ২৪ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ এবং ১৫ই মে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে যে পাঁচ মহানগরে ভোট হচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার আছে গাজীপুরে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬। এতে পুরুষ ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ এবং ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১। আগামী ১৫ মে এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।