জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ ভারতের

সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে ভারতের বিদায়ী হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।

ঠিকানা অনলাইন : বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির ২০টি দেশের জোট জি-২০ এর ২০২৩ সালের শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি হিসাবে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত সরকার। জি-২০ জোটের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে ভারত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে তা জানানো হয়েছে বলে বুধবার জানালেন ঢাকায় ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী।

ঢাকার গুলশানে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একান্ত আলোচনায় জানানো হয়েছে যে, ভারতের আয়োজনে আগামী সেপ্টেম্বরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশকে অতিথি করতে চাই আমরা, যা ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে।

চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে পরবর্তী এক বছরের জন্য জি-২০ জোটের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছে ভারত। তাদের সভাপতিত্বের সময় ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দিল্লিতে জোটের শীর্ষ সম্মেলন হবে।

১৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের পাশাপাশি মিশর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর ও আরব আমিরাতকে অতিথি দেশ হিসাবে আমন্ত্রণ জানাবে ভারত।

এই আমন্ত্রণের গুরুত্ব তুলে ধরে হাই কমিশনার দোরাইস্বামী বলেন, বাংলাদেশসহ যে আট অতিথি দেশ আমন্ত্রণ পেয়েছে, তারা জি-২০ এর আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে আসা অর্জনে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পাবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক ভারত সফরসহ দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিভিন্ন দিক নিয়ে মতবিনিময়ে কথা বলেন বিক্রম দোরাইস্বামী।

তিনি জানান, বাণিজ্য, যোগাযোগ থেকে শুরু করে পানি বণ্টন, ১২ বছর পর সফলভাবে যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক আয়োজনসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবগুলো দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

‘প্রায়ই এমন একটি ধারণা পোষণ করা হয়, সফর মানে হচ্ছে দর কষাকষির তালিকা। আসলে তা নয়। এই সফরগুলো হচ্ছে আমাদের নেতাদের নির্দেশনায় সম্পর্ককে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি করা। সেই প্রেক্ষিতে উভয়পক্ষ নিজস্ব অবস্থান থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয়বস্তু যুক্ত করতে পেরেছে।’

কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি এবং দুদেশের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তির (সেপা) আলোচনা শুরু করার সিদ্ধান্তকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে দেখছেন রাষ্ট্রদূত দোরাইস্বামী।

কুশিয়ারা নদীর চুক্তির বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এখানে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ রয়েছে যে ভারত পানি দেয় না। চুক্তি হওয়া একটি ভালো দিক, যার তাৎপর্য রয়েছে। নিঃসন্দেহে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। কিন্তু মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় চুক্তির বিষয়টি ফলপ্রসু সিদ্ধান্ত।

রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় ভারতের আরও উচ্চকিত ভূমিকার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশের দুর্দশার ক্ষেত্রে আমরা সমব্যথী এবং আমাদের অবস্থান হচ্ছে, যারা নির্যাতিত হয়ে এসেছে, তাদেরকে ফেরাতে হবে।

‘দ্রুত সময়ে তাদের প্রত্যাবাসনের ধারণাকে আমরা পরিপূর্ণভাবে সমর্থন করি। তবে, সেটা টেকসই ও নিরাপদ হতে হবে। আমরা মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এবং বাংলাদেশে আমাদের বন্ধুদের সমর্থনে কাজ করছি।’

দুই দেশের জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের সুযোগ তৈরি করার স্বার্থে ভারতীয় চলচ্চিত্র বাংলাদেশে প্রদর্শনের সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করেন দোরাইস্বামী।

তিনি বলেন, চলচ্চিত্র চালু করার বিষয়ে আমি অব্যাহতভাবে বলেছি। চলচ্চিত্র দেখানো মানে কেবল চলচ্চিত্র দেখানো নয়। স্ক্রিন বাড়া মানে সিনেমা হল বাড়া। বেশি সিনেমা হল মানে বেশি পরিমাণে চলচ্চিত্র বানানো হবে। অধিক পরিমাণে মানুষ অংশ নেওয়ার ফলে চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ ঘটে এবং সাংস্কৃতিক চর্চা ও যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি হয়।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ : বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন শেষে ফিরে যাওয়ার আগে বিক্রম দোরাইস্বামী ১৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎ করেন।

প্রধানমন্ত্রী উপ-প্রেস সচিব হাসান জাহিদ তুষার সাংবাদিকদের বলেন, সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ অঞ্চলের মানুষের কল্যাণে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, এই অঞ্চলের জনগণের বৃহত্তর কল্যাণে আমরা এই অঞ্চলের সবাইকে নিয়ে টেকসই উন্নয়ন করতে চাই।

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যকার সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।

‘প্রতিবেশীদের সঙ্গে কিছু সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু সব কিছুই আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে আমরা সামনে এগিয়ে যেতে পারি।’

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে এবং বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা দোরাইস্বামী করেন বলে উপ প্রেসসচিব জানান।

বাংলাদেশে দায়িত্ব পালনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সর্ব্বোচ্চ সহযোগিতা পাওয়ার কথাও বলেন দোরাইস্বামী। এজন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

যুক্তরাজ্যে ভারতে মিশনের দায়িত্ব নিতে যাওয়া দোরাইস্বামীকে অভিনন্দন জানান শেখ হাসিনা। তিনি এ কূটনীতিকের সুস্বাস্থ্য ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন।

সাক্ষাতকালে ভারতের বিদায়ী হাই কমিশনার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি ছবি উপহার দেন। প্রধানমন্ত্রীও তাকে বই ও নৌকার একটি রেপ্লিকা উপহার দেন।

ঠিকানা/এসআর