রাঙামাটি : জুম চাষি সুনীতি চাকমা গত বছর দেড় একর জমিতে সবজি আর ধান চাষ করেছিলেন। এতে তার খরচ হয়েছিল মাত্র ৩০ হাজার টাকা। জুমে উৎপাদিত ওই সবজি বিক্রি করে তিনি আয় করেছিলেন ১ লাখ ১১ হাজার টাকা এবং ঘরে তুলেছিলেন সাড়ে ৫শ কেজি ধান। এ বছরও প্রায় ৩ একর জমির জুম ক্ষেত থেকে দ্বিগুণ লাভের আশা করছেন তিনি।
রাঙামাটি শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে মগবান ইউনিয়নের গোলাছড়ি এলাকার সুনীতি চাকমা জানান, জুম চাষের মাটি আগের মতো আর উর্বর নেই। জুম ক্ষেতে তাই সার প্রয়োগ করতে হয়েছে। ধানের পাশাপাশি মরিচ, বেগুন, মারপা, তিলসহ নানা ধরনের সবজি লাগিয়েছেন। এখন জুমের ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সুনীতি চাকমার মতো রাঙামাটির বিভিন্ন উঁচু পাহাড়ে জুমের পাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন জুম চাষিরা। অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জুমের ফলন বেশ ভালো হয়েছে বলে জানান তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামের উঁচু পাহাড়ের পাদদেশে গাছ-গাছালি কেটে আগুনে পুড়িয়ে জমিতে যে চাষ করা হয়, তার নাম হচ্ছে জুম চাষ। জুম চাষ পাহাড়িদের একটি ঐতিহ্যবাহী প্রথা হলেও এটি জীবন-জীবিকার উৎসও বটে। সাধারণত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে পাহাড়ের ঢাল পরিষ্কার করে মার্চ-এপ্রিল মাসে আগুনে পুড়িয়ে মাটি উপযুক্ত করা হয়। এর পর এপ্রিল-মে মাসে পাহাড়ে বৃষ্টি শুরুর আগে সুচালো দা দিয়ে গর্ত খুঁড়ে একসঙ্গে ধানসহ নানা সবজির বীজ রোপণ করা হয় এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে জুমের ধান ঘরে তুলে থাকেন আদিবাসীরা। জুমের সাধারণত গেলং, কবরক, আমেই, সোনালি চিকন, বিনি, বাদোয়ে, সাদা চডুই ধান, কনক চাঁপা, রেঙ্গই রোপণ করা হয়ে থাকে। এসব ধান সুগন্ধি ও আঠালো। এ ছাড়া জুম ধানের পাশাপাশি অর্থকরী ফসল হিসেবে শাক-সবজির মধ্যেÑ ভুট্টা, মারপা, মরিচ, বেগুন, শসা, শিম, তিল, ঢেঁড়স, মিষ্টি কুমড়া, ঝিঙে, করলা, ফোরল, পাহাড়ি আলু, শাবারাং (এক প্রকার সুগন্ধিযুক্ত সবজি) জুমিয়া কচু রোপণ করে থাকেন। এ ছাড়াও তুলা, হলুদ ও সত্রং ফুলের (গাঁদা ফুল) চাষ করা হয়।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় জুম ধানের ফলন ভালো হয়েছে। রাঙামাটির ১০ উপজেলায় ৫ হাজার ৯২৯ হেক্টর জমিতে জুম ধানের চাষ করা হয়েছে। এ বছর জুম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫ হাজার ৮২৯ হেক্টর। প্রতি হেক্টরে গড়ে ১ দশমিক ২ টন জুম ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।