নিজস্ব প্রতিনিধি : ভারতীয় জনতা দলের সঙ্গে সকল বিভ্রান্তি, ভুল-বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে আস্থাশীল মৈত্রীর সম্পর্কের নিশ্চয়তা বিধানে সর্বাত্মক প্রয়াস চালাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে চীনের বিপুল বিনিয়োগ এবং বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক আস্থাশীল পর্যায়ে উন্নীত করার দ্বিপক্ষীয় প্রয়াস বাংলাদেশ সরকারকে চিন্তিত করে রেখেছে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটা বা বছরখানেক আগেও বিদ্যমান আস্থাশীল সম্পর্কে ঘাটতি দেখা দিয়েছে মর্মে সংবাদ জনমনে স্থান পেলে নির্বাচনে তা বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে। যে অনিশ্চয়তা ও ভীতি থেকে বিজেপির সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কে ঘাটতি নেই এবং তা আরো উন্নততর পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে তার দৃশ্যমান বহিঃপ্রকাশের জরুরি তাগিদ বোধ করছেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। মূলত যে কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশ সফরে আসার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এ আমন্ত্রণ জানান। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে আগামী মাসে নয়াদিল্লি যাচ্ছেন। সতীশ রায়, অসীম কুমার উকিল, শেখর দত্তসহ পাঁচজন থাকবেন হিন্দুধর্মাবলম্বী দলীয় নেতা।
দলীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের ১১ মার্চ নয়াদিল্লি যাওয়ার কথা ছিল। মায়ের মৃত্যু, ধর্মীয় নানা আনুষ্ঠানিকতা এবং ভারতীয় নেতাদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে সফর স্থগিত রাখা হয়। আগামী মাসের প্রথম ভাগে ওবায়দুল কাদের নয়াদিল্লি যাওয়ার কথা ভারতীয় প্রতিপক্ষকে জানিয়েছেন। তারা দিনক্ষণ চূড়ান্ত করে জানানোর পর বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সফর করবে। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবসহ বিজেপির নেতৃবৃন্দ এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গেও তারা সাক্ষাৎ করবেন ও বৈঠকে মিলিত হবেন। ফেরার পথে ওবায়দুল কাদের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হবেন।
বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের শত্রু যারা তারা পাকিস্তানের মিত্র- রাজনৈতিক এই প্রচারণাকে ভারতের বিজেপির মধ্যে প্রচার ও প্রতিষ্ঠা করাই আওয়ামী লীগ নেতাদের সফরের মুখ্য উদ্দেশ্য। আওয়ামী লীগ ভারতের কোনো দলবিশেষের বন্ধু নয়, ভারতকে প্রথম ও প্রধান বন্ধু মনে করে। বাংলাদেশ ভারতের পরীক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত বন্ধু। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের শত্রু, প্রতিপক্ষকে বন্ধু মনে করা হলে মারাত্মক ভুল করা হবে। তারা মূলত পাকিস্তানের বন্ধু। বিএনপি ও জামায়াতকে উদ্দেশ করে এসব কথা বলে বিজেপি নেতাদের প্রভাবিত করতে চাচ্ছে সরকারি দল। বিএনপি মাস ছয়েক আগেই এ ধরনের প্রপাগান্ডার যথাযথ ও সন্তোষজনক বক্তব্য সংশ্লিষ্ট মহলে রেখেছে। ইতিমধ্যে তার প্রমাণও দৃশ্যমানভাবে রেখেছে বিএনপি। ঢাকাস্থ ভারতীয় কূটনৈতিক ও অন্য একটি প্রভাবশালী মহল নয়াদিল্লিকে প্রভাবিত করতে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন বলে জানা যায়।
কূটনৈতিক মহল মনে করেন, বিগত ইউপিএ সরকারের মতো বিজেপি সরকার নিরঙ্কুশভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রকাশ্য কোনো অবস্থান না-ও নিতে পারে। আওয়ামী লীগ একান্তভাবে চাচ্ছে বিজেপিকে বাংলাদেশে দলনিরপেক্ষ পর্যবেক্ষকের অবস্থান থেকে সরিয়ে আনতে। মোদি সরকারের পরোক্ষ ভূমিকায়ও যেন এখানে জনমনে এ ধারণা জন্মে যে বিজেপি ও ভারত সরকার আওয়ামী লীগকেই বন্ধু হিসেবে আগামীতেও দেখতে চায়।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদিত না হওয়াই ভারত-বাংলাদেশের প্রধান অমীমাংসিত বিষয়। মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মেয়াদকালেই এই চুক্তি সম্পাদনের। নরেন্দ্র মোদি আগ্রহী হলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির কারণেই তা সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে মোদি-মমতা কথা হয়েছে। মোদি তার পানিসম্পদমন্ত্রী ও সচিবকে পাঠিয়েছেন এ নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলতে। ফল হয়নি।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা যায়, মোদি এ নিয়ে মমতার সঙ্গে আবার কথা বলবেন। মমতার মন গলাতে প্রণব মুখার্জি কার্যকর ভূমিকা রাখছেন। ভারতের স্বার্থেই শেখ হাসিনার সরকারের ক্ষমতায় থাকা জরুরি বলে মমতা ও মোদিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন প্রণব।
ওবায়দুল কাদেরের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ভারত সফরকালে তিনি বিজেপির সাধারণ সম্পাদককে এক প্রতিনিধিদল নিয়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানাবেন। মোদিকে বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানানো হবে। হিস্যা কিছু ছাড় দিয়ে হলেও নির্বাচনের আগে তিস্তা চুক্তি সম্পাদনের পক্ষে সরকার। মোদি চান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে আসতে। ওবায়দুল কাদের মমতার জন্য শেখ হাসিনার বিশেষ বার্তা নিয়ে যাবেন। আগামী অর্থবছর থেকেই ইলিশ রফতানি শুরু করার সরকারি সিদ্ধান্তের কথা জানাবেন। সরকারদলীয় নেতারা মনে করেন, নির্বাচনের আগে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হলে নির্বাচনে তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর তা না হলে প্রভাব, প্রতিক্রিয়াও হবে এর বিপরীত।
জানা যায়, নয়াদিল্লির সঙ্গে কলকাতার রাজনৈতিক বিরোধ থাকলেও বাংলাদেশ, বিশেষ করে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের স্বার্থকে অগ্রাধিকার নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্তর্বর্তীকালীন সম্মানজনক একটা ব্যবস্থায় সম্মত হবেন এবং মোদির সঙ্গেই তিনি বাংলাদেশে আসতে পারেন। আগামী জুলাইয়ে সেই সম্ভাবনা রয়েছে।