কানিজ ফাতেমা :
রাজধানীর পল্টন থানার দায়ের করা বিস্ফোরক মামলায় জেলে আটক বিএনপির প্রথম যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে কারাগারে বসেই এলএলএম পরীক্ষার অনুমতি দিয়েছেন ঢাকার বিজ্ঞ সিএমএম আদালত। পরীক্ষা দেওয়ার আগে এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেনি সরকারপক্ষ। আদালতের আদেশে জেলখানা পরিণত হয় পরীক্ষাকেন্দ্রে। জেল কোড বা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী জেল সুপার পরীক্ষা গ্রহণের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
আবেদনকারী আসামি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তালিকাভুক্ত একজন বিজ্ঞ আইনজীবী। বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির প্রথম যুগ্ম মহাসচিব। রিজভী আহমেদকে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি দেওয়ায় আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বটে। বিজ্ঞ আদালত তার সুবিবেচনায় এই আইনজীবীকে শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্তি দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি প্রদান করেননি বরং জেলখানায় বসে পরীক্ষা দেওয়ার আদেশ দিয়ে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
সম্প্রতি অন্য এক মামলায় আসামি হাতকড়াসহ তার মায়ের জানাজা পড়েছেন। জেল কোড বা ফৌজদারি কার্যবিধিতে কী আছে, আমার জানা নেই। জেল কোড বা ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা-ই থাকুক না কেন, জামিন অযোগ্য ধারার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞ আদালত তার সুবিবেচনায় আসামিকে জামিন দিতে পারেন। জামিন চাওয়া ও পাওয়া আসামির অধিকার এবং জামিন মঞ্জুর-নামঞ্জুর আদালতের এখতিয়ার। আদেশ প্রদানকারী বিজ্ঞ আদালত প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়কে ফলাফল প্রকাশের আদেশ নিশ্চয় দিয়েছেন। বিজ্ঞ অদালত আসামিকে জামিন দিয়ে পরীক্ষার হলে পরীক্ষার সুব্যবস্থা করতে পারতেন। পরীক্ষা-পরবর্তী সময়ে আসামির পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন ও পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে কী ধরনের নির্দেশনা রয়েছে, তা একমাত্র বিজ্ঞ আদালত, কারা কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানে। DLR/MLR না হওয়া পর্যন্ত আদালতের আদেশ-নিষেধ জনসমক্ষে প্রকাশ করা যায় না।
ইতিপূর্বে অনেক খুনের মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুকম্পায় খালাস পেয়েছেন। অনেক প্রসূতি আদালতের নির্দেশে হাসপাতালে নবজাতক শিশুর জন্ম দিয়েয়েছেন। শাবাশ বাংলাদেশ! এ ক্ষেত্রে মানবতার উদার দৃষ্টান্ত আদালত স্থাপন করেছেন। মানবাধিকার, আইন ও আইনের শাসন পরস্পরের সহায়ক। আইনে কোনো বিষয়ে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না থাকলেও আদালত তার সুবিবেচনায় তার বিচারকাজ সম্পাদন করেন। এটাই আইন ও বিচারকাজের অলংকার। আদালতের সুবিবেচনা কারও বিরুদ্ধে গেলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়নি-এ কথা বলা যাবে না।
হয়তো সুদূর অতীতে অনেক আসামি/কয়েদি কারাবাস থাকা অবস্থায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেনি। তবে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিবের কারাবাসে এলএলএম পরীক্ষা প্রদান একটি নজির স্থাপিত হলো। সাধারণত বিজ্ঞ উচ্চ আদালতের যেকোনো আদেশ আইনের পাশাপাশি রেফারেন্স হিসেবে নিম্ন আদালত অনুসরণ করে থাকেন। রিজভী আহমেদের এলএলএম পরীক্ষার অনুমতির আদেশটি বিজ্ঞ নিম্ন আদালতের হওয়ায় রেফারেন্স হওয়ার সুযোগ না হলেও ভবিষ্যতে সবার জন্য প্রযোজ্য হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।
লেখক : কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।