প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ইতোমধ্যে ৮ হাজার ৭২২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামকি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২৭ জুন) সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে উন্নত মসজিদ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ছিল। ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ধর্ম মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় লাইব্রেরি, গবেষণা কক্ষ, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, শিশু শিক্ষা কার্যক্রম এবং পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক নামাজ কক্ষ, মেহমানদের আবাসন ব্যবস্থা, বিদেশী পর্যটকদের পরিদর্শনের ব্যবস্থা, হজ যাত্রীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ইত্যাদি সুবিধাসহ মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য নির্দেশ দেয়া হয়।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ৫ এপ্রিলে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ৯টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মাধ্যমে আমি এ প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করি।
শেখ হাসিনা বলেন, ৯টি মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১শটি মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ এ বছর শুরু করা হবে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে অবশিষ্ট মসজিদসমূহ নির্মাণ করা হবে।
নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের নূরুন্নবী চৌধুরীর আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে বিদ্যুতের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে ক্যাপটিভসহ ১৮ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন ও সবার জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করতে তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, এ পরিকল্পনার আওতায় উৎপাদন ক্ষমতা ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার কার্যক্রম চলছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসের স্থাপিত ক্ষমতার চেয়ে প্রায় চার গুণ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে ১৮ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াটে (ক্যাপটিভসহ) উন্নীত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের মে পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ৭৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৯৬টি নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়েছে।
তিনি বলেন, ভারত থেকে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। বিদ্যুৎ সুবিধা প্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা শতকরা ৪৭ ভাগ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে শতকরা ৯০ ভাগে উন্নীত হয়েছে (নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২২০ কিলোওয়াট ঘণ্টা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৪৩৩ কিলোওয়াট ঘণ্টা দাঁড়িয়েছে (ক্যাপটিভসহ)। সঞ্চালন লাইন ৭ হাজার ৯৯১ সার্কিট কিলোমিটার থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১১ হাজার ৬০ সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন ১ লাখ ৮৯ হাজার ৬৩১ কিলোমিটার লাইন নির্মাণের মাধ্যমে বিতরণ লাইনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৫০ হাজার কিলোমিটার। নতুন ১ কোটি ৮৫ লাখ সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৯৩ লাখে উন্নীত হয়েছে। বিদ্যুতের সামগ্রিক সিস্টেম লসের পরিমাণ শতকরা ১৬ দশমিক ৮৫ ভাগ থেকে হ্রাস পেয়ে শতকরা ১২ দশমিক ১৯ ভাগে দাঁড়িয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের ক্ষমতা যথাক্রমে ২১ হাজার সার্কিট কিলোমিটার এবং ৪ লাখ ৭৮ হাজার কিলোমিটার উন্নীত করা হয়েছে। ২০২১ সাল নাগাদ ২ কোটি ২ লাখ প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণে স্মার্ট গ্রিড এবং আন্ডার গ্রাউন্ড বিতরণ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হয়েছে। গ্রাহক সেবা নিশ্চিতকরণে আইসিটি ভিত্তিক সেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণে এলএনজি টার্মিনাল, কোল টার্মিনালসহ ফ্লুটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রিগ্যাসিফেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) নির্মাণ করা হয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ভারত থেকে ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে মোট ২ হাজার ৩৩৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ আমদানির লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে। এ বছরই ভারত থেকে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হবে বলে আশা করা যায়।