মোস্তফা কামাল : করোনা এখনো যায়নি। কবে নাগাদ যাবে? -জবাব নেই কারো কাছে। বৈশ্বিক এ মহামারীটি থাকতে থাকতেই দেশে-দেশে স্থানিক কতো দুর্যোগ-দুর্দশা। মহামারী, আগুন, দুর্ভিক্ষ বরাবরই অনন্য নিরপেক্ষ। ধনী-গরিব সবাইকে এক চোখে দেখে। কাউকে ছাড় দেয় না। লোকালয়- দেবালয় ভেদাভেদ করে না। প্রাণঘাতী করোনার পর এখন তা জানান দিচ্ছে দুর্ভিক্ষ। এরপরও আমরা কিছু শিখছি? শিখবো? নিচ্ছি কোনো বার্তা?
করোনাও আমাদের শিক্ষা দিতে পারেনি। অথচ মহামারীটি শতজনমের কতো চিন্তা-বিশ্বাস তছনছ করেছে। ধর্মকর্মেও ছেদ ফেলেছে। বিশ্বের সব ধর্মালম্বীদের শিখিয়েছে মসজিদ-মন্দিরে না গেলেও ধর্ম থাকে। ঘরেও ইবাদত-প্রার্থনা করা যায়। অফিস না করে ঘরে থাকলেও চাকরি থাকে। হাট-বাজারে না গিয়েও অনলাইনে সদাই ঘরে চলে আসে। করোনার মৃত্যুর মিছিল গোটা দুনিয়াকে থমকে দিয়ে বিশ্বের প্রকৃতিকেও শান্ত-সুবোধ করে দিতে পেরেছে। দুষ্টচিন্তা কি তাড়াতে পেরেছে?
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাঁকখোর আশা ছিল ‘করোনা বিশ্ববাসীকে অনেক কিছু শেখাবে। অনেক দৃঢ় বিশ্বাসে ফাঁটল ধরবে এবং প্রত্যয় নড়বড়ে হয়ে যাবে’। বিভিন্ন দেশে অক্ষরে অক্ষরে ফলছে ম্যাঁকখোর কথা। তা কারো চাপে-তাপে নয়, নিজের স্বার্থেই। কিন্তু, বাংলাদেশ কেন ব্যতিক্রম? এখানে ‘খেলা হবে’র মুখ ভ্যাংচানোর ধুম। দুর্ভিক্ষ নিয়ে মশকরা। কখনো ভয় দেখানো। কখনো একে ইস্যু করে রাজনীতি জমানো। রিজার্ভ চিবিয়ে খাওয়া, গিলে খাওয়া নিয়ে কথার বাহাদুরি। নিজস্ব উৎপাদন বাড়াতে বললে চটে যাওয়া। মিতব্যয়ী-সঞ্চয়ীর পরামর্শ দিলে মাইন্ড করা। চটতে-মাইন্ড করতে কি খরচ লাগে?
মানুষকে সচেতন করার একটি নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে সরকারের। অবিরাম যা করে চলছেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান। নিজস্ব উৎপাদন বাড়ানো, এক ইঞ্চি জমিও খালি না রাখা, সাশ্রয়ী হওয়াসহ তার পরামর্শগুলো নিয়েও ট্রল করতে হবে? এর আগে, করোনার সময় কিভাবে হাঁচি দিতে হবে, বডি ল্যাঙ্গুয়েজে তাও দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমালোচনা থেকে বাদ যায়নি তার ওই প্রেসক্রিপশনও। সমালোচনার সঙ্গে প্রশ্নও, প্রধানমন্ত্রীকেই কেনো সব করতে হয়?
ঠিকই তো। প্রধানমন্ত্রী কেন হাঁচি দেয়া পর্যন্ত শিখিয়ে এ বুঝবানদের অপমান করা হয়? তার বাইরে কি আর কারো বোধবুদ্ধির ব্যাপার নেই? মিডিয়া, সমাজের সচেতন অগ্রসর শিক্ষিত মানুষ, সেলিব্রেটি, সামাজিক-ধর্মীয় নেতারা দেশে-দেশে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব নিচ্ছেন। বাংলাদেশে তা প্রধানমন্ত্রীর বাইরে আর ক’জন করছেন? মহামারীর পর এখন মহামন্দার চোখ রাঙানি। বাস্তবতা হচ্ছে, সেখানেও অভয় দিয়ে সাহস জোগাতে হয় প্রধানমন্ত্রীকেই। বলতে হয়, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে সারাবিশ্বে দুর্ভিক্ষ হলেও বাংলাদেশে হবে না। পাকনা কথার খই ফোটানো বাকিরা কই? প্রধানমন্ত্রীকেই কেনো এমন চ্যালেঞ্জ নিতে হয়?
দায়িত্ববান, জ্ঞানমান হয়েও ভালোকে ভালো বলতে না পারার ব্যারামটি ভাইরাসের মতো বেগবান। খুঁত বের করা, একের বিরুদ্ধে আরেককে লাগিয়ে দেয়ার মতো নোংরামিতে পদে-পোদে ল্যাঠা বাঁধানোর নষ্টামীতে অর্জনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ঘেরাটোপ আর কতো? ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও জেনে গেছেন, আমাদের এ চরিত্র? কেন তিনি মুখে নিলেন বাংলাদেশের নাম? তার প্রশ্ন- বাংলাদেশ বা মিসরের জনগণের পাতে খাবার থাকবে কি-না, সে সিদ্ধান্ত কেনো নেবে ক্রেমলিনের গুটিকয়েক লোক?
লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন, ঢাকা।