কক্সবাজার : কক্সবাজারে ১০২ জন ইয়াবা পাচারকারীর আত্মসমর্পণের পর মাদকবিরোধী অভিযান আরো জোরদার করছে পুলিশ। সুযোগ দেওয়ার পরও যারা আত্মসমর্পণ করেনি, তারা রাষ্ট্রীয় সুযোগ ইচ্ছাকৃতভাবে হাতছাড়া করে নিজেদের ‘দাপট’ দেখিয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
গত ১৬ ফেব্রæয়ারি টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী কড়া ভাষায় ইয়াবা পাচারকারীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দেন। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের পর কক্সবাজারে ফিরে চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি এবং কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপারসহ পদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন তারা। এই বৈঠকেও মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করার নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের কয়েকজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি দুজনই মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখা শুধু নয়, আরো জোরদার করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। আরেক দফা আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়া যাবে কি না এমন বিষয়ে আলোচনার এক ফাঁকে অভিযান জোরদারের নির্দেশনা আসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে।
একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আত্মসমর্পণের সুযোগ ছিল সব পাচারকারীর জন্য একটি বড় সুযোগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত অনেক পাচারকারী আত্মসমর্পণ না করেও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। এটা ভালো চোখে দেখেননি মন্ত্রী ও আইজিপি। তাই দ্বিতীয় দফা সুযোগ দেওয়ার তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বৈঠকে। পাশাপাশি ইয়াবা পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছেন। পুলিশের কিছু কর্মকর্তার কিছু অনৈতিক আচরণের বিষয়েও ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কথা বলেছেন।
জেলা পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপির এমন নির্দেশনার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে যারা প্রথম দফায় আত্মসমর্পণ করেনি তাদের। কারণ পাচারকারীদের অনেকেই পুলিশের কাছে এমন বার্তা পাঠিয়েছিল, প্রথম দফায় আত্মসমর্পণকারীদের মামলার অবস্থা দেখে তারপরই তারা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেবে।
জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যারা অভিযান সমাপ্ত হয়ে বলে মনে করেছে, তারা ভুল করেছে। শিগগিরই তাদের ভুল ভাঙবে। আরো বৃহৎ পরিসরে মাদকবিরোধী অভিযান চলবে। ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে মাদক নির্মূলের জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি নির্দেশনা দিয়েছেন। এই নির্দেশনা বাসস্তবায়ন করবে জেলা পুলিশ।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পণকারী ১০২ জনকে পাচারের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন বলেও জানিয়েছে পুলিশ। এ জন্য পুলিশ রিমান্ড আবেদন জানাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারীদের রিমান্ডে আনার জন্য আদালতে আবেদন জানানো হবে। পরে অন্যদের রিমান্ড চাওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে চায়। জেলা পুলিশ সুপার বলেন, ‘মামলার তদন্তের স্বার্থে তদন্তকারী কর্মকর্তার যা যা করণীয়, তদন্তকারী কর্মকর্তা তা-ই করবেন।’ তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তের স্বার্থে যদি রিমান্ডে আনা প্রয়োজন মনে করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা, তাহলে তিনি আদালতে আবেদন করতেই পারেন।’