মঈনুদ্দীন নাসের : প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনের পরবর্তী সম্ভাব্য নির্মম পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গণতন্ত্রে স্বীকৃত আইনের শাসন কিংবা জনগণের কল্যাণ অথবা রিপাবলিকানদের রাজনীতির প্রসার নয় বরং নিজের তখত-তাউস এর নিজস্ব বিশাল সা¤্রাজ্যের স্থাপনাকে রক্ষার জন্যই তার এই প্রয়াস। আর এই প্রয়াসের পেছনে যে ভয় তাকে তাড়িত করছে তা হচ্ছে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের ভয় কিংবা দুর্নীতির ভয়। কারণ তার বিরুদ্ধে চলছে মামলার পর মামলা। এই ভয় তাকে তাড়িত করার কারণ হচ্ছে নভেম্বর মাসের মধ্যবর্তী কংগ্রেস নির্বাচন। ধারণা করা হচ্ছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য মধ্যবর্তী নির্বাচনের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে তিনি ইমপিচড হবেন কিনা বা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হবে কিনা? ইমপিচ এর কারণ শুধুমাত্র রাশিয়ার সাথে তার ক্যাম্পেইনের যোগসাজশ নয় বরং পর্র্নস্টার স্টানলির যৌন আবেদন ক্রয় বাণিজ্য করেছেন কিনা বা বিচারের পথে কোনো বাধা বিপত্তি সৃষ্টি করেছে কিনা তা নিয়েও অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদে ডেমক্রেটরা মাত্র ১০টি আসন বাড়িয়ে নিতে পারলেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা প্রতিনিয়ত হোঁচট খাবে। হোঁচট খাবে তার শাসন, হোঁচট খাবে তার মিথ্যা। প্রতিনিয়ত মিথ্যার পর মিথ্যা বলে রিপাবলিকানদের যেভাবে বেকুব বানিয়ে ছাড়ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ডেমক্রেটরা ক্ষমতায় এলে তা তার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে। তাই নিজেকে রক্ষার জন্য ট্রাম্প মনে করছেন আগামী নির্বাচনে তার কংগ্রেসে সংখ্যাধিক্য পেতে হবে। সেজন্য তিনি আপাতত ইমিগ্রেশনকে তার হাতের অন্যতম নির্বাচনী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চান। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৯ জুন রাতে রিপাবলিকানদের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত ‘মন্ত্রণা’ সভায় বলেন, তিনি ১০০০ ভাগ কংগ্রেসের সাথে রয়েছেন। তাদের বিবেচনার সাথে আছেন। তিনি কম্প্রমাইজ বিলে সই করবেন। তার আগে তিনি পরিবার পৃথকীকরণ বন্ধ করে নির্বাহী আদেশ জারি করেন। কিন্তু যদিও তার আদেশ বাস্তবায়ন এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তারপরও কংগ্রেস সমঝোতা সৃষ্টির জন্য রক্ষণশীল ও মডারেট মিলে আলোচনা করছিলেন তারা কিছু সময় নিচ্ছিলেন কিন্তু ২২ জুন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন বিলের বারোটা বাজিয়ে দিলেন। বললেন, সমঝোতা সফল হবে না। ডেমক্রেটরা সমঝোতা বিলে ভোট দেবে না। তারা হাত গুটিয়ে বসে আছেন। তারা সমর্থন না দিলে বিল পাস হবে না। কিন্তু বিষয়টা তা ছিল না। বিষয়টা ছিল বিভিন্ন প্রশ্নে একে অপরকে মেনে নেয়ার কথা। কট্টরপন্থী ও মডারেট উভয় বিলে দেয়াল নির্মাণের বিষয় ছিল। আর মাত্র তিন ভোট হলে বিলটি পাসের কথা। কিন্তু বিলটি পাস করা পরবর্তী সপ্তাহ পর্যন্ত পিছিয়ে দিলে ট্রাম্প টুইটে বলে বসলেন, তা পাস হবে না। এই বিল এখন পাস না করে নির্বাচনের পরে পাস করা উচিত। ট্রাম্প এমনভাবে চলেন এমনভাবে বলেন, ‘যখন যা তখন তা’। এভাবে আটকে গেল বিল, আর ট্রাম্প বলে বসলেন আগামী নির্বাচনে আরও অধিক আসনে রিপাবলিকানরা জিতে এ বিল পাস করবেন। আরও অধিক আসনে জিতে বিল পাস! কিন্তু সবসময় প্রেডিকশন হচ্ছে রিপাবলিকানরা মেজরিটি হারাতে পারেন কংগ্রেসে। আর তা যদি হয় সেক্ষেত্রে ট্রাম্পের টুইটের কারণ কি? কারণ হচ্ছে তার ভোটব্যাঙ্ক ঠিক রাখা। তিনি বুঝতে পারছেন না বিল পাস করলে কি ভোটব্যাঙ্ক ঠিক থাকবে না পাস না করলে ভোটব্যাঙ্ক ঠিক থাকবে? ট্রাম্প আস্থা নিতে পারছেন না কোনো কিছু। তাই একবার বিলের পাসে, একবার বিপক্ষে করতে করতে অবশেষে বন্ধই করে দিলেন ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত বিষয়। আরও একধাপ এগিয়ে গিয়ে তিনি বললেন, অবৈধদের আইনের সুযোগ দেয়া যাবে না।
তার নির্বাহী আদেশের প্রয়োগই রয়ে গেল সীমান্তে পরিবার বিচ্ছিন্নের মর্মবেদনার উপশমের মলম। কিন্তু তা ইতোমধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া পরিবারদের জন্য হয়ে রইল এক নাভিশ্বাস।
কখন ইমিগ্রেশনকে প্রধান ইস্যু করা হলো?
ইমিগ্রেশনকে প্রধান ইস্যু করা হলো যখন দক্ষিণ আমেরিকার দেশসমূহ থেকে অত্যাচারী শাসকদের অত্যাচার এড়িয়ে পরিবারগুলো সকল ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আমেরিকার সীমান্তে উপস্থিত হলো তখন। তাদের বুক থেকে কেড়ে নেয়া হলো দুধের শিশুকে। তাদের করা হলো পৃথক। পায়ে লাগানো হলো বেড়ি। শিশুদের প্রতি স্বাভাবিক আচরণ বন্ধ করে দেয়া হলো। তাদের মৌলিক অধিকার মায়ের কোল থেকেই বঞ্চিত করা হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমসের হিসাব মতে ২৩০০ শিশুকে ইতিমধ্যে পিতা-মাতার কাছ থেকে সরিয়ে নেয়া হলো। এই পরিবার বিচ্ছিন্নতাকে ডেমক্রেট ও রিপাবলিকান উভয় শিবির থেকে নিন্দা করা হয়। এ হীনতর ব্যবস্থার জন্য অনেকে ট্রাম্পের ইমিগ্রেশন বিষয়ক উপদেষ্টা স্টিফেন মিলারকে দায়ী করল। বিভিন্ন কংগ্রেসম্যান যেমন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান স্টিফেন মিলারের পদত্যাগ দাবি করলো। ডেমক্রেটদের নেত্রী ন্যান্সি পেলোসী ও অন্য ডেমক্রেটরা বিষয়টাকে হৃদয়হীন বলে মন্তব্য করলো। আমেরিকান কালচার বহির্ভূত বলে বর্ণনা করল। বললেন, যেভাবে পৃথক করা হচ্ছে সেভাবে প্রেসিডেন্টের স্ত্রী মেলানিয়ার কোল থেকে যদি তার শিশুকে ছিনিয়ে নেয়া হয় সেক্ষেত্রে কী ঘটবে! এসব অসৌজন্যমূলক বক্তব্যকে যদিও অশালীন বলে মন্তব্য করা হলো তা কিন্তু চলতে লাগলো। ট্রাম্প বললেন, তার স্ত্রী ও কন্যা এসব বিষয় থেকে তাকে বিরত থাকতে বলেন। নির্বাহী আদেশ সই করার পর তিনি জানান, তিনি পরিবার পৃথকীকরণ ঘৃণা করেন। তিনি বলেন, তিনি চান না পরিবার এভাবে বিচ্ছিন্ন হোক। আবার গোপনে নিজেদের হোয়াইট হাউজে মন্তব্য করেন ‘তার সমর্থকরা তা বলে’। তিনি বলেন, তার সমর্থকরা যেভাবে আগত ইমিগ্র্যান্টদের সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে তা তাদের জন্য অগ্রহণযোগ্য। তার মন্তব্য তার অস্থিরতার প্রকাশ। একদিকে বলেছিলেন কারণ তিনি পৃথকীকরণ চান, আরেকদিকে বলেন, তার সমালোচকরা তা চায় না। আসলে তিনি আগামী নির্বাচনে যাতে তার ‘ভেসে’ থাকার তরী কংগ্রেসের মেজরিটি ধসে না পড়ে তাই তার প্রয়াস। তিনি ইমপিচড হতে চান না। রাশিয়ার সাথে তার ক্যাম্পেইনের যোগসাজশের এখন ১৪ জনের জড়িত থাকার নিদর্শন পাওয়া গেছে। তিনি নিজে প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য মুলারের সাথে বিশেষ তদন্তে সাক্ষ্য দিচ্ছেন না। ডোনাল্ড ট্রাম্প বলছেন, রাশিয়ার অনুসন্ধান একটা ‘ভুয়া’ ব্যাপার। কিন্তু তা বন্ধ করার পদ্ধতিও তার জানা নেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন ইম্পিচমেন্ট ও বিচারের সম্মুখীন হওয়ার ভয়ে ভীত। হোয়াইট হাউজের ভেতরে যে সব বাদানুবাদের খবর আসছে তাতে দেখা যায় বিষয়টা পরিষ্কার।
ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাহী আদেশ জারি করলেও যেসব শিশুকে ইতিমধ্যে পৃথক করা হয়েছে তারা তাদের পিতা-মাতার সাথে কীভাবে পুনরায় মিলিত হবে তা নিয়ে কোনো কথা বলছেন না। সরকারি কর্মকর্তারা এদিকে যদিও ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য শেল্টার খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে তারা পিতা-মাতার সাথে মিলিত হবে কীভাবে তার হদীস পাচ্ছে না। বলা হয়েছে ১৫০০ এর মতো শিশু কোথায় আছে জানে না। এ নিয়ে মামলা হয়ে গেছে প্রশাসনের বিরুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া শিশু সন্তানদের জন্য। ডিটেনশন সেন্টার থেকে শিশুদের কান্নার অডিও বের হয়েছে। বিশ্বব্যাপী তা ছড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে প্রচারণা করা হলো বিষয়টাকে ব্যবহার করা হচ্ছে যাতে আমেরিকায় ইমিগ্র্যান্ট না আসে। কিন্তু আসলে বিষয়টা কী? বিষয়টা হচ্ছে মধ্যবর্তী নির্বাচন যে নির্বাচনে সংখ্যাধিক্য রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যানদের নির্বাচন কীভাবে নিশ্চিত করে তার ব্যবস্থা করা।
এই ইমিগ্র্যান্ট শেল্টার ঘিরে ব্যবসা রয়েছে প্রচুর। নিউইয়র্ক টাইমস রিপোর্ট করেছে মাইগ্রেন্ট শিশুদের হাউজিং, তাদের ওপর নজরদারি, পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে ভাগাভাগি, শিশুদের আশ্রয়স্থল ও ডিটেনশন সেন্টার নির্মাণ, বিশেষ করে সীমান্তে তা নির্মাণ এক বিলিয়ন ডলারের ব্যবস্থা। আরেকটি রিপোর্টে বলা হয় এই ব্যবসার পুরোটাই পাচ্ছে প্রাক্তন সেনা অফিসাররা। আসলে ট্রাম্প কি এই ইমিগ্র্যান্টদের দিয়ে ব্যবসা করিয়ে মিলিটারিদের সুযোগ দিতে চায়। যার মূল লক্ষ্য নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেয়া। এদিকে একটি স্টেটের গভর্নর মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ফেডারেল সরকরের বিরুদ্ধে। উভয় পার্টির কয়েকজন গভর্নর বলেছেন, তারা ন্যাশনাল গার্ড ট্রুপকে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের কাজে বিরত রাখতে তাদের প্রত্যাহার করে নেবেন। প্রেসিডেন্ট ইমিগ্র্যান্টদের বিষয়ে ‘জিরো টলারেন্স পলিসি’ (যার কোনো বিচার বিশ্লেষণ দেয়া হয়নি) এর কথা বার বার বলছেন। কিন্তু অনেকে মনে করে এই জিরো টলারেন্স পলিসি আসলে ‘নো পলিসি’। অর্থাৎ ‘জিরো পলিসি’। যেখানে কোনো চিন্তাহীনভাবে যেকোনো কায়দায় তা প্রয়োগ করা যায়। অথচ দেখা যাচ্ছে এই ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি টেক্সাস ও ক্যালিফোর্নিয়ার মতো স্টেটে অপরাধীদের জন্য কোর্টরুম ভরে দিয়েছে।
সব দোষ কেন ইমিগ্র্যান্টদের ওপর চাপানো হচ্ছে?
ডোনাল্ড ট্রাম্পের তিন স্ত্রী ইমিগ্র্যান্ট। ইমিগ্র্যান্ট না হলে তার কপালে যেন বউ জুটতো না। তার মা ইমিগ্র্যান্ট। তার দাদাও ইমিগ্র্যান্ট। কিন্তু সে ইমিগ্র্যান্ট বিরোধী। তার চিফ অব স্টাফ কেলী নিজেও ইমিগ্র্যান্ট কিন্তু এরা কথা বলেন ইমিগ্র্যান্টদের বিরুদ্ধে। অতীতকে সরাজ্ঞান করেন। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায় ইমিগ্র্যান্টরা এদেশে যে প্রভাব ফেলছে তা অনেক বেশি। যেভাবে ইমিগ্র্যান্ট আইন প্রয়োগ হচ্ছে তা আমেরিকার অনেক জায়গায় স্থিতিশীলতাকে বিশৃঙ্খলায় পরিণত করছে। ইমিগ্রেশন ও ন্যাশনালিটি আইনে আছে ২৮৭ (জি) কর্মসূচি অনুযায়ী ফেডারেল সরকারই স্টেট ও স্থানীয় সরকারের সাথে এই বিষয়ে সহযোগিতা করবে। যাতে স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। কিন্তু বিচার বিভাগের পক্ষে অন্যদিকে চিৎকার করে বলা হয় স্থানীয় সরকার তাদের সাথে সহযোগিতা করবে। ট্রাম্প প্রশাসন তার কর্মসূচি সীমিত করতে চাচ্ছে। তার কর্মসূচিতে রয়েছে রেসিয়াল বা বর্ণবাদী প্রোফাইলিং প্রোগ্রাম, যা কমিউনিটি ও পুলিশের সম্পর্কে ফারাক সৃষ্টি করে, নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং মূল্যবান সম্পদের ব্যবহারকে অকার্যকর করে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৫৯টি চুক্তি সাধিত হয়েছে তিনটি নগরী ৫৪টি কাউন্টি, দুটি স্টেট এবং ১৮০০ আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার মধ্যে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই বছর শেষে এই ধরনের চুক্তি তিনগুণ বৃদ্ধির চিন্তা করছেন। কিন্তু এসব কমিউনিটিতে কারা থাকেন। যারা থাকেন তারা ২৮৭ (জি) চুক্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এই চুক্তির মাধ্যমে দেখা যায়
* ১৫ লাখ স্বতন্ত্র ব্যক্তি মিক্সড স্ট্যাটাস পরিবারের মধ্যে বাস করেন। যাদের কেউ বৈধ কেউ অবৈধ।
* অনেকে রয়েছেন যারা যুক্তরাষ্ট্রে ১০ বছারাধিকাল ধরে বাস করেন।
* এসব ইমিগ্র্যান্ট বাড়ির লোকরা ৬৫.৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেন।
* প্রতিবছর এই পরিবারসমূহ ২৪.৪ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করেন।
ভার্জিনিয়ায় দেখা গেছে নগরীর ৪১ শতাংশ ব্যবসার মালিক ইমিগ্র্যান্ট, আর দেখা যায় ইমিগ্র্যান্টদের টার্গেট করে পলিসি আমেরিকান কমিউনিটিকে এবং আমেরিকার জন্ম নেয়া সিটিজেনদের ক্ষতিগ্রস্ত করে। তারপরও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইমিগ্র্যান্টদের কমানোর নামে যে পলিসি নিয়ে খেলছেন তাকে ট্রাম্প মনে করছেন আগের ঘটনার ভিন্নরূপ। কিন্তু ট্রাম্পের এই ধরনের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির নিরিখে যে পন্থা নিয়েছেন তা নিজেকে রক্ষা করা বা সুপ্রীমেমিস্টদের সমর্থন নিয়ে তার বিরুদ্ধে আনীত সম্ভাব্য অভিশংসন নীতির মোকাবেলায় কার্যকর বলে মনে হয়।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোয়াইট হাউজে ইমিগ্রেশন নীতি নিয়ে এমনভাবে আলোচনা হয়েছে যেভাবে মুসলিম ভ্রমণ নিষিদ্ধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব ট্রাম্পের আলোচনা ও ব্যবহারের উদ্দেশ্য হচ্ছে তার সাপোর্টে বেশ কট্টরপন্থী রিপাবলিকানদের খুশি করা।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, ইমিগ্রেশন নিয়ে রিপাবলিকানরা যে সব অবস্থান নিতে পারে তার সম্ভাব্য প্রতিটি পদক্ষেপই গত এক সপ্তাহের মধ্যে ভেবে দেখেছেন। কারণ যে সমস্যা নিজে সৃষ্টি করেছেন সেই হাজার হাজার শিশু সমস্যা মোকাবিলা করতে চেয়েছেন। হাজার হাজার শিশু পৃথকীকরণকে মনে হয়েছে তিনি নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছেন, দেশের স্বার্থে নয়। ব্যবহার করছেন নিজের বিরুদ্ধে আনীত সন্দেহের তদন্ত যাতে মধ্যবর্তী নির্বাচনে কোনো প্রভাব সৃষ্টি করতে না পারে তার ব্যাখ্যা করা। বর্তমানে তদন্তকারী মুলার ১৪ জনের হদীস পেয়েছেন যারা বিভিন্ন সময় রাশিয়ান ব্যবসায়ীর সাথে মিলেছে। তিনি পলিসির পরিবর্তন করেছেন। ঘোষণা দিয়েছেন, বলেছেন তার হাত আষ্ঠে-পৃষ্ঠে বাঁধা। সে হাত মাঝখানে খুলেছেন নির্বাহী আদেশ সই করতে। যা কোনো কিছু সমাধান করতে পারে কিংবা নাও পারে। তিনি ডেমক্রেটদের দোষারোপ করেছেন। তার পূর্বসূরীদের সমালোচনা করেছেন, বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে। দাবি তুলেছেন কংগ্রেস যেন কাজ করে থাকে। কোনো একটি কংগ্রেস বিল সমর্থন করতে অস্বীকার করেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, একটি ব্যাপক ইমিগ্রেশন সংস্কার সম্ভব এবং অতিসম্প্রতি বলেছেন, এই আইন প্রণয়ন কংগ্রেসকে কিছুদিনের জন্য স্থগিত রাখা উচিত।
এইসব বিবৃতির বা প্রস্তাবের সবকিছুই প্রেসিডেন্টের মুখনিঃসৃত। তার টুইটারের মাধ্যমে বলা এবং তার ক্যাপিটালহিলে রিপাবলিকান মিটিংয়ে উপস্থিতির সময় তিনি রিপাবলিকানদের যা বলেছেন তার উদ্ধৃতি। তারা এসব কিছুই মেলানিয়া ট্রাম্পের ‘আই রিয়েলি ডোন্ট কেয়ার, ডু ইউ?’ এই লেখা সম্বলিত জ্যাকেট পরিধান নানা গল্পের সৃষ্টি করে। ট্রাম্প এর অস্থিরতা আজ প্রকাশ্যে। কি চান তিনি? অস্থির ট্রাম্প যেন বুঝতে চেয়েছেন ইঞ্চি ইঞ্চি করে যেন তিনি ইমপিচমেন্টের দিকে এগুচ্ছেন। ইমপিচ বা অভিশংসন এখন যেন তার দৃষ্টিতে ধরা পড়েছে।
ট্রাম্প যদি কোনোভাবে ইমপিচ হন, তার জন্য সম্ভবত তিনি নিজে অনেক সচেতন। সম্ভবত তিনি চান ইমপিচমেন্ট যেন তাকে না ছোঁয়। আবার তিনি চান আগামীবার জিতে দুবার প্রেসিডেন্টের পদে থাকা। তারও চেয়ে বড় কথা সম্ভবত তিনি চাচ্ছেন অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে পথ চলে স্থিতিশীলতার পরাকাষ্ঠাকে অর্জন। আর সে অর্জন আদায় করা তার জন্য শুধু সমস্যা নয় জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আগামী নভেম্বরের নির্বাচন ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির ওপর হবে এক ধরনের রেফারেন্ডাম। ইতিমধ্যে হাউজের স্পিকারসহ ৪৯ রিপাবলিকান পরবর্তী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না বলে ঘোষণা দিয়েছেন। আর এই ঘোষণা ট্রাম্পের জন্য চিন্তার। তিনি শ্রেষ্ঠত্ববাদী শ্বেতাঙ্গদের স্বার্থ রক্ষার্থে চারিদিকে প্রয়াস চালাচ্ছেন। কিন্তু রিপাবলিকানদের অনেকে তা চান না। যে যার রাজনীতি করছেন তা তাদের নির্বাচনী এলাকার লোকদের সমর্থন ধরে রাখার জন্য। লোকদের নেতৃত্ব দেয়ার কোনো স্বপ্ন সাধ থেকে নয় বরং তা তার ক্ষমতার প্রদর্শনী। ক্ষমতার প্রদর্শনী ক্ষমতাকে উস্কিয়ে দেয়। ১০টি রিপাবলিকান সিনেট আসনে নির্বাচন হচ্ছে এবার। তার থেকে যদি ২/১টা কমে যায়, সিনেট যেমন ডেমক্রেটদের হাতে আসবে, তেমনি হাউজের নির্বাচনে মাত্র ১৮ আসনের মধ্যে ১০টি আসন সুইচ হলে মেজরিটি ডেমক্রেটদের হাতে আসবে। বিষয়টা পুরো উল্টোও হতে পারে। কিন্তু ট্রাম্পের সকল অংক আজ যে রূপ পরিগ্রহ করছে তা হলো নিজেকে আমেরিকা নির্বাচনে রাশিয়ার যোগসাজশ ও কারসাজি থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা আর একই সাথে বিশ্বের সকল চালু ও গৃহীত ব্যবস্থাকে সামগ্রিক ও আন্তর্জাতিকতার নিরিখে চ্যালেঞ্জ করে আমেরিকার অর্থনৈতিক প্রভাবকে ভয়ঙ্কর হিসেবে প্রতিভাত করা। যাতে এ যাত্রা তিনি ইমপিচমেন্ট মামলা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। ট্রাম্পের ইমপিচমেন্টের কথা ইদানীং আলোচনা হয়। তবে ডেমক্রেটরা সেই আলোচনায় অংশ নেননি। কিন্তু আগামী নির্বাচনে যদি ডেমোক্রেটরা জিতে তাহলে কি বিষয় শেষ হবে। রিপাবলিকান নেতা জন ম্যাককেইনের এক সময়ের ক্যারোলাইন ম্যানের জন স্মিট রিপাবলিকান দল ত্যাগ করে যে চিঠি লিখেছেন তার মমার্থ হলো আমেরিকার প্রতিষ্ঠাতারা একদিন ট্রাম্পের মতো লোক এদেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারে এ কথা স্মরণে রেখেই সংবিধান রচনা করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচনের পর সেই সংবিধান সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পাঠ্য হবে। আর তা হবে ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট। বিষয়টাকে একেবারেই উড়িয়ে দেয়া যাবে না।