
ঠিকানা রিপোর্ট: ক্যালিফোর্নিয়ার নেতৃত্বে ১৬টি স্টেটের পক্ষে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি দ্য নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে রুজুকৃত মামলার আর্জিতে ক্যালিফোর্নিয়া এটর্নী জেনারেল জ্যাভিয়ার বেসেরা বলেন, আজ প্রেসিডেন্ট দিবস। আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি প্রেসিডেন্সিয়াল ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে। তিনি বলেন, দেশের জনগণের কল্যাণে প্রদত্ত সর্বসাধারণের ট্যাক্স তহবিল কংগ্রেস কর্তৃক নাকচ হওয়ার পরও ট্রাম্পের এক তরফা এক গুয়েমি সিদ্ধান্ত থামিয়ে দেয়ার জন্য আমরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা করছি। আমাদের সিংহভাগের জন্য, প্রেসিডেন্সী অফিস রঙ্গমঞ্চ নয় বলেও আর্জিতে উল্লেখ করেন বেসেরা।
মামলার আর্জিতে আরও বলা হয় যে ট্রাম্পের আদেশের ফলে, বাদির তালিকাভুক্ত স্টেটগুলো ড্রাগ বিরোধী অভিযানে নিয়োজিত ন্যাশনাল গার্ড ইউনিটগুলো এবং সামরিক নির্মাণ প্রকল্পগুলো বাবত ফেডারেল বরাদ্দ থেকে কোটি কোটি ডলারের অনুদান বঞ্চিত হবে এবং তাদের অর্থনৈতিক অকল্পনীয় ক্ষতি সাধিত হবে।
এর আগে টেক্সাসের ৩জন ভূমি মালিক এবং পরিবেশবাদী গ্রুপ ১৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্পের জরুরি অবস্থা জারির বিপক্ষে প্রথম আইনী লড়াই শুরু করেন। মামলার আর্জিতে বলা হয়েছিল যে জরুরি অবস্থা জারি সংবিধান পরিপন্থী এবং এটি তাদের ভূমিমালিকানা লঙ্ঘন করবে। উল্লেখ্য, ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে রুজুকৃত মামলার বাদি তালিকায় রয়েছে: ক্যালিফোর্নিয়া ছাড়াও কলোরাডো, কানেকটিকাট, ডেলওয়ার, হাওয়াই, ইলিনয়, মেইন, ম্যারিল্যান্ড, মিশিগান, মিনেসোটা, নেভাদা, নিউ জার্সী, নিউ মেক্সিকো, নিউ ইয়র্ক, অরেগন এবং ভার্জিনিয়া।
ট্রাম্প ভেটো প্রয়োগে প্রস্তুত: মিলার
এর আগে ডেমক্র্যাটিক দলীয় আইনপ্রণেতাদের সাথে রিপাবলিকান দলীয় কিছু সংখ্যক আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের জারিকৃত জাতীয় জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে একাট্টা হওয়ায় ট্রাম্প প্রয়োজনে ভেটো প্রয়োগ করবেন বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজ সিনিয়র অ্যাডভাইজার স্টিফেন মিলার। ইমিগ্রেশনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণকারী মিলার ফক্স নিউজ সানডেকে বলেন, কংগ্রেস সঠিক প্রক্রিয়ায় দক্ষিণাঞ্চলে প্রাচির নির্মাণের প্রয়োজনীয় অর্থ না দেয়ায় ট্রাম্প ইমার্জেন্সী ঘোষণায় বাধ্য হয়েছেন এবং তার ঘোষণা অবরুদ্ধের যে কোন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ট্রাম্প ভেটো প্রয়োগে প্রস্তুত।
১৭ ফেব্রুয়ারি মিলার আরও বলেন, যারা জরুরি অবস্থা ঘোষণাকে সংবিধান পরিপন্থী হিসেবে অভিহিত করেছেন তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়ও ট্রাম্প প্রস্তুত। ফক্স নিউজ সানডের হোস্ট ক্রিস্ট ওয়ালেসকে আরও বলেন, এটি নিশ্চিত যে ট্রাম্প তার ন্যাশনাল ইমার্জেন্সী ডিক্লারেশন সংরক্ষণে বদ্ধপরিকর। ট্রাম্পের ইমার্জেন্সী ঘোষণার স্বপক্ষে মিলার বলেন, অবৈধ ড্রাগ ও মানুষের অনুপ্রবেশ আমাদের দেশের প্রতি হুমকি স্বরূপ। মিলার বলেন, মেক্সিকো আমেরিকা সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন পঙ্গপালের মত অবৈধরা আমেরিকায় ঢুকে পড়ছে। আর প্রেসিডেন্ট এই দেশকে রক্ষা করতে না পারলে তবে তিনি সাংবিধানিক ওথ অব অফিস ( দায়িত্ব পালনের শপথ) পরিপূর্ণ করতে পারবেন না। মিলার আরও বলেন, ১৯৭৬ ন্যাশনাল ইমার্জেন্সী অ্যাক্ট যাবতীয় হুমকির বিরুদ্ধে দেশকে রক্ষার জন্য প্রেসিডেন্টকে জরুরি অবস্থা ঘোষণার এক্তিয়ার দিয়েছে।
এবার শুরু আসল লড়াই: ট্রাম্প
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বর্ডার সিকিউরিটি (সীমান্ত নিরাপত্তা) আইনে স্বাক্ষরের পরপরই জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন। সাউদার্ন বর্ডারে অধিকতর ব্যারিয়ার (প্রাচির) নির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহের নিমিত্ত জাতীয় জরুরি অবস্থার ঘোষণা দিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প বলেন, এখনই প্রকৃত লড়াই শুরু হয়েছে।
মূলত পররাজ্য দখল কিংবা বিদেশী আক্রমণকারীদের হাত থেকে আমেরিকার সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই এটি নয়। ট্রাম্পের ভাষায়, দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্ত দিয়ে মেক্সিকো থেকে অবৈধ ড্রাগ ও অস্ত্র পাচার এবং ঝাঁকে ঝাঁকে অবৈধ অভিবাসীর যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ প্রতিহত করা এবং আমেরিকার অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে প্রাচির নির্মাণের অপরিহার্যতার লড়াই। অন্যদিকে ডেমক্র্যাটগণ বলছেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালনের নামে সর্বসাধারণের কষ্টার্জিত ট্যাক্সের অর্থের অপচয়ের জন্য এই অন্যায় লড়াই। তাই শেষ ফলাফল কোনদিকে গড়ায় এখন তা-ই দেখার পালা।
মূলত জাতীয় জরুরি অবস্থা জারির প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রোজ গার্ডেন থেকে প্রাচির নির্মাণের সপক্ষে যতই যুক্তি-তর্কের অবতারণা করুন না কেন, সুদীর্ঘ প্রায় ৬ শ মাইল প্রাচির নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ যোগানোর উদ্দেশ্য জারিকৃত জরুরি অবস্থাকে বস্তুত অনেকগুলো বাধার বৈতরণী উতরাতে হবে। কারণ জরুরি অবস্থা জারির অব্যবহিত পরপরই বেশ কয়েকজন ডেমক্র্যাটিক দলীয় গভর্নর এবং স্টেট এটর্নী জেনারেল আইনানুগ এবং সংবিধানসম্মত মামলা রুজুর এবং ডেমক্র্যাটগণ ঘোষণা বাতিল করার জন্য বজ্রকঠোর সঙ্কল্প নিয়েছেন।
প্রতিপক্ষীয় বাধা-নিষেধ প্রসঙ্গে স্বয়ং ট্রাম্প বলেছেন, তারা এখন মামলা করবেন ও পরে নবম সার্কিট কোর্ট অব আপীলসের শরণাপন্ন হবেন। সম্ভবত আদালত আমাদের বিপক্ষে রায় দিবে। তারপর আমরা আরও একটি খারাপ রুলিং পাব এবং সর্বশেষ বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টে গড়াবে। আমরা আশাবাদী যে সুপ্রিম কোর্ট সকল সাবেক রায় বাতিল করে আমাদের পক্ষেই রায় দিবেন।
ট্রাভেল ব্যানের (কয়েকটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ আইনের) প্রসঙ্গ তুলে ধরে ট্রাম্প বলেন, শুরুতে আমার প্রতিপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে নবম সার্কিট কোর্টে মামলা করেছিল এবং আমরা হেরে গিয়েছিলেম। তারপর আপীলেট ডিভিশনেও আমরা হেরে গিয়েছিলেম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছিল। ট্রাম্প বলেন, এ ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় ঘটবেনা বলে আমার ধারণা।
এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম এবং কয়েকজন ডেমক্র্যাটিক স্টেট এটর্নী জেনারেল আইনানুগ লড়াইর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং কংগ্রেশনাল ডেমক্র্যাটগণ জরুরি অবস্থা ঘোষণাকে নাকচ করার জন্য আইনসম্মত প্রচেষ্টা ছাড়াও কোন লিগ্যাল অ্যাকশন গ্রহণ করেনি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জরুরি অবস্থার প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণসহ বিশদ বিবরণ হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে প্রকাশ করার ঘন্টা খানেকের মধ্যে দ্য আমেরিকান সিভিল লিবার্টীজ ইউনিয়ন মামলা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছে।
হাউজ স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি এবং সিনেট মাইনরিটি লীডার চার্লস চাক শ্যুমার ট্রাম্পের পদক্ষেপকে প্রেসিডেন্সী ক্ষমতার সুস্পষ্ট অপব্যবহার এবং বেআইনী কাজ হিসেবে অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন। নিউ ইয়র্কের কুইন্স থেকে নির্বাচিত ডেমক্র্যাটিক দলীয় রিপ্রেজেনটেটিভ আলেকজান্ড্রিয়া ওকাসিয়ো কর্টেজ এবং টেক্সাসের ডেমক্র্যাটিক রিপ্রেজেনটেটিভ যোয়াকিন ক্যাস্ট্রো প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপ রুখে দাঁড়ানোর জন্য নিজেদের পদক্ষেপ ঘোষণার কথা বলেছেন।
হাউজ এবং সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে কোন ঘোষণাকে নাকচ করতে পারে; তবে প্রেসিডেন্টের ভেটো বাতিল করতে হলে উভয় কক্ষে কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতি বাধ্যতামূলক। ইতোমধ্যে কয়েকজন রিপাবলিকানও ট্রাম্পের ঘোষণার ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন। নর্থ ক্যারোলিনার রিপাবলিকান সিনেটর থম টিলস বলেন, প্রেসিডেন্টের ঘোষণা বিপজ্জনক স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করবে। টিলস বলেন, কংগ্রেসের অথরিটিকে পাশ কাটিয়ে বাম-উংয়ের প্রেসিডেন্টের নিজেদের র্যাডিক্যাল পলিসি এজেন্ডা বাস্তবায়নে জরুরি অবস্থা ঘোষণা নতুন নজির সৃষ্টি করেছে।
মেইনের রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর সুসান কলিনসও প্রেসিডেন্টের কর্মকান্ডের কড়া সমালোচনা করেন। ফ্লোরিডার রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও বলেন, সংবিধান লঙ্ঘের জন্য ক্রাইসিস বা সঙ্কটের অজুহাত ন্যায়সঙ্গত হতে পারেনা। হোয়াইট হাউজ অ্যাক্টিং চীফ অব স্টাফ মিক মালভ্যানী সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাম্পের জরুরি অবস্থার ঘোষণা কোন নতুন নজির নয়। তার আগেও প্রেসিডেন্টগণ জাতীয় দুর্যোগ মুহূর্তে জাতীয় জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন।
জাতীয় জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার নির্বাহী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সামরিক খাতের নির্মাণ প্রকল্পের ৩৬০ কোটি ডলার, মাদকবিরোধী প্রকল্পের ২৫০ কোটি ডলার, এবং ট্রেজারি বিভাগের ৬০ কোটি ডলার দেয়াল নির্মাণে বরাদ্দ দিতে পারবেন। তার সঙ্গে কংগ্রেসের অনুমোদন করা ১৩৭ দশমিক ৫ কোটি ডলারের তহবিল যোগ হবে। ফলে পুরো সীমান্ত জুড়ে প্রাচির নির্মাণ তার জন্য কোন বাধা হবেনা।
সব মিলিয়ে দেয়াল নির্মাণের জন্য ট্রাম্পের হাতে আসবে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার। তবে সীমান্তের দুই হাজার মাইলজুড়ে দেয়াল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় ২৩০০ কোটি ডলারের তুলনায় তা অনেক কম।