ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

ঠিকানা রিপোর্ট: ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছর (২০১৭ সালে) দায়িত্ব নেয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বড় ধরনের ধাক্কা খায়। একই ধারাবাহিকতা চলতি বছরের এ পর্যন্তও অব্যাহত থাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির ক্রমাগত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বিশেষভাবে ইউরোপে। ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাঙ্ক পিউ রিসার্চ সেন্টারের করা এক নতুন জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
চলতি বছর ট্রাম্প কানাডা ও জার্মানির মতো দেশের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে আক্রমণ আরও তীব্র করায় ঐতিহ্যগত মিত্রদের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জরিপে প্রতিফলিত হয়েছে। জরিপে অংশ নেয়া ২৫টি দেশের নাগরিকরা ট্রাম্পের নেতৃত্ব দেয়ার সক্ষমতার তুলনায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের প্রতি বেশি আস্থা রাখার কথা জানিয়েছেন। গত বছর ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ও ইরান পারমাণু চুক্তির মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনের মতো কর্তৃত্ববাদী নেতাদের সঙ্গে অন্তরঙ্গতা দেখিয়েছেন কিন্তু প্রতিবেশী মিত্র দেশগুলো ও উত্তর আটলান্টিক সামরিক জোট ন্যাটোর মিত্রদের সমালোচনা করেছেন। চলতি বছরের জুনে কানাডায় শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭ এর সম্মেলনের পর যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের সঙ্গে যৌথ ঘোষণায় সই করতে অস্বীকৃতি জানান ট্রাম্প। আয়োজক দেশ কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে ‘খুবই অসৎ ও দুর্বল’ বর্ণনা করে বিদ্রূপও করেন। বাণিজ্য উদ্বৃত্ত, প্রতিরক্ষায় ন্যূনতম ব্যয় ও রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীলতার কারণ হিসেবে উল্লেখ করে ট্রাম্প জার্মানির বিরুদ্ধেও একের পর এক ক্ষোভ ঝেড়েছেন। এমন পরিস্থিতি সত্ত্বেও হোয়াইট হাউজের দায়িত্ব নেয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসনের দুই বছরের অর্জন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের প্রায় সব প্রশাসনকে ছাড়িয়ে গেছে বলে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ পরিষদে দেয়া বক্তৃতায় এমনটি দাবি করে বিশ্বনেতাদের হাসির পাত্রে পরিণত হন ট্রাম্প।
এদিকে পিউ রিসার্চের জরিপ বলছে, ট্রাম্পের মেয়াদের প্রথম বছর ২০১৭ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির বড় ধরনের অবনমন ঘটে এবং ক্রমাবনতি চলতি বছরও (২০১৮ সাল) অব্যাহত রয়েছে। মাত্র ৩০ শতাংশ জার্মান এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি প্রসন্ন, যা গত বছরের তুলনায়ও ৫ শতাংশ কম। জরিপে অংশ নেয়া দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়ার (২৬ শতাংশ) পর জার্মানিতেই যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির দশা সবচেয়ে শোচনীয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে ৩৮ শতাংশ ফরাসি ও ৩৯ শতাংশ কানাডিয়ান, কিন্তু মাত্র ৭ শতাংশ স্পেনিশ, ৯ শতাংশ ফরাসি ও ১০ শতাংশ জার্মান ট্রাম্পের নেতৃত্বের ওপর আস্থাশীল বলে জরিপে উঠে এসেছে। উত্তর আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে মেক্সিকানদের কাছেই যুক্তরাষ্ট্রের কদর গত বছরের তুলনায় খানিকটা বেড়েছে। তারপরও দেশটির মাত্র ৩২ শতাংশ নাগরিক ওয়াশিংটনকে ইতিবাচকভাবে দেখছে। জরিপে অংশ নেয়া অন্য দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সবচেয়ে প্রসন্ন ইসরায়েল, ফিলিপাইন ও দক্ষিণ কোরিয়া। এ তিনটি দেশেই এ সমর্থনের হার ৮০ শতাংশ বা তারও বেশি। গত মে থেকে অগাস্ট পর্যন্ত ২৫টি দেশের প্রত্যেকটির ৯০০-রও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে মার্কিন এ জরিপকারী সংস্থা এসব তথ্য পেয়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
জরিপে ভাবমূর্তির দিক থেকে ট্রাম্পের অবস্থান যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও খারাপ তাও উঠে এসেছে। ২৫টি দেশের মধ্যে ২০টি দেশেরই সিংহভাগ মানুষ মার্কিন প্রেসিডেন্টের ওপর তাদের অনাস্থার কথা জানিয়েছেন বলেও দাবি পিউ রিসার্চের। ট্রাম্পের ‘আমেরিকাই প্রথম’ নীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র এখন আন্তর্জাতিক নীতি ঠিক করার সময় অন্যদের স্বার্থকে গুরুত্ব দেয় না বলেও মনে করেন জরিপে অংশ নেয়া ২৫টি দেশের ১৯টির সিংহভাগ অংশগ্রহণকারী। সব দেশ মিলিয়ে ট্রাম্পের প্রতি এ আস্থাশীলতার হার মাত্র ২৭ শতাংশ, যা এমনকী রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন (৩০ শতাংশ) ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি’র (৩৪ শতাংশ) তুলনায়ও অনেক কম। ট্রাম্পের জনপ্রিয়তার এমন হারের পরও ৬৩ শতাংশ অংশগ্রহণকারী যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব অভিভাবকের ভূমিকায় দেখতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করার কথা জানিয়েছে। চীনকে এ ভূমিকায় দেখতে চায় মাত্র ১৯ শতাংশ।