ট্রাম্প-কিম বৈঠক নিয়ে অনিশ্চয়তা

অ্যান্ড্রু সালমন : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে নির্ধারিত ১২ জুন সিঙ্গাপুরের বৈঠক এখন অনিশ্চিত। অনেকের বিশ্বাস ছিল, এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যকার দীর্ঘদিনের উত্তেজনা কমার একটি সম্ভাবনা তৈরি হবে। তাঁরা বিষয়টির প্রশংসাও করেন। তবে অনেকের মধ্যেই এই উদ্বেগও ছিল যে কোনো পক্ষেই যথাযথ প্রক্রিয়া চলছে না।
এর আগে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে লক্ষ্য করে তীব্র সমালোচনামূলক মন্তব্য করে উত্তর কোরিয়ার গণমাধ্যম। তাঁরা দুজনই উত্তর কোরিয়ার নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে ‘লিবিয়া মডেল’ অনুসরণের কথা বলেছিলেন। এই মডেল ক্ষিপ্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে উত্তর কোরিয়া। ওই মডেল অনুসরণের পর লিবীয় নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির রক্তাক্ত পরিণতির কথা বারবারই উল্লেখ করেছে দেশটির গণমাধ্যম।
ট্রাম্প তিন মার্কিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়ার জন্য উত্তর কোরিয়াকে ধন্যবাদ জানান। সম্প্রতি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও উত্তর কোরিয়া সফরকালে শুভেচ্ছার নিদর্শন হিসেবে এই তিন নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক এই শীর্ষ বৈঠকের আয়োজনের জন্য দুবার উত্তর কোরিয়া সফর করেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে উত্তর কোরিয়ার নেতার সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন তিনি।
উত্তর কোরিয়ার পুঙ্গি-রি পরমাণু পরীক্ষাকেন্দ্র এই চিঠি প্রকাশের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে ধ্বংস করে দেওয়া হয়। এটিও ছিল শীর্ষ বৈঠক-পূর্ববর্তী শুভেচ্ছার নিদর্শন। এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ার জন্য বিদেশি সাংবাদিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। প্রত্যাশা ছিল এসংক্রান্ত খবর দ্রুতই ছাপা হবে।
ট্রাম্পের বৈঠক স্থগিত করার সিদ্ধান্ত তাঁর নিজ প্রশাসনের বহু কর্মকর্তাকেও বিস্মিত করেছে। ওই দিনই সকালে মার্কিন কর্মকর্তারা সিঙ্গাপুরের পরিকল্পিত বৈঠকে খবর সংগ্রহের জন্য আগ্রহী সাংবাদিকদের বৃত্তান্ত গ্রহণ শুরু করেন। তবে ওয়াশিংটনে এমন ধারণাও প্রচলিত যে ট্রাম্প এই বৈঠকের জন্য অতি আগ্রহী হলেও প্রস্তুত ছিলেন না। যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ, ট্রাম্প হয়তো কিমের নিরস্ত্রীকরণের প্রতিশ্রুতির বিষয়ে অতি মূল্যায়ন করেছেন অথবা ভুল পথে পরিচালিত হয়েছেন। এমনকি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সও উত্তর কোরিয়ার নেতাকে ট্রাম্পের সঙ্গে চালাকি না করার ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন।
সিউলভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এশিয়া ইনস্টিটিউটের সভাপতি ইমানুয়েল প্যাসটেইক বলেন, ‘বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে চীন, উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়া এবং যাঁরা এই বৈঠক নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করেছেন তাঁদের জন্য অসম্মানজনক।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি কিছুটা অবাক হয়েছি। আমার ধারণা ছিল, কৌশলগতভাবে ইরান ও রাশিয়ার ঘটনার পর এবার হয়তো ট্রাম্প ও তাঁর লোকেরা এশিয়ায় শান্তি আনার লক্ষ্যে কাজ করবেন।’ তিনি আরো বলেন, ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত জানানোর দিনই চীনকে প্রশান্ত মহাসাগরে যৌথ নৌ মহড়ার জন্য পাঠানো আমন্ত্রণ প্রত্যাহার করা হয়।
এই সিদ্ধান্ত বিশেষ করে ট্রাম্পের দক্ষিণ কোরিয়ার মিত্র মুনের জন্য আঘাত হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রেসিডেনশিয়াল ব্লু হাউসের দেওয়া তথ্য মতে, মুন ওই দিনই মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডাকেন। উপস্থিত মন্ত্রীদের মধ্যে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও ঐক্যবিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন।
বৈঠকের পর ব্লু হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, মুন বৈঠক না হওয়ায় ‘বেদনাহত’।
গত পাঁচ মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে উৎসাহ নিয়ে কাজ করেছেন। এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে ওয়াশিংটন সফর করেন তিনি। ট্রাম্প-মুন বৈঠকের আগে দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা চুং ইউ-ইয়ঙ বলেন, ট্রাম্প-উন বৈঠকের সম্ভাবনা ৯৯৯৯ শতাংশ। এর কয়েক দিন পরই আসে ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত।
সিউলভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান এশিয়ান ইনস্টিটিউটের গো মিয়ং-হিউন বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার সরকারের জন্য এটা একটা বড় ধাক্কা। যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কের ওপর এর প্রভাব পড়বে। নৈতিকভাবে উত্তর কোরিয়ার অবস্থান সংহত হবে।’ দুই বিশ্লেষকই সিউল-ওয়াশিংটন সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
শেষ মুহূর্তে এসে আবার একটু আশার আলোও দেখানো হয়েছে হোয়াইট হাউস থেকে। বলা হয়েছে, ১২ জুনের বৈঠক হতেও পারে। এখন অপেক্ষার পালা। সূত্র : এশিয়া টাইমস
লেখক : মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশ্লেষক
অনুবাদ : তামান্না মিনহাজ