রওশন হক :
নিউইয়র্ক থেকে দেশের পাঠক সমাদৃত পত্রিকা ঠিকানা ৩৪ বছরে পদার্পণ করল। এই শহরে বাংলা সংবাদপত্রজগতে আধুনিকতার সূচনা করেছিল এই ঠিকানা। ক্ষুরধার লেখনী আর বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশের মধ্য দিয়ে ঠিকানা পাঠকপ্রিয়তা যেমন পেয়েছে, তেমনি সৃষ্টি করেছে অনেক মেধাবী ও খ্যাতিমান সংবাদকর্মী। গণমানুষের কথা বলার অধিকার ও ন্যায্য দাবি পূরণে এবং বাংলাদেশকে সার্বিকভাবে এগিয়ে নিতে ঠিকানা কাজ করে। বর্তমানে ডিজিটাল ভার্সন এসে বিদেশের মাটিতে বসে দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য অবদান রেখে চলছে, যা সবার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আমি নিয়মিত অনলাইন ভার্সনে এই পত্রিকাটি পড়ি। আমি লক্ষ করেছি, যেখানেই মানুষ অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, সেখানেই এ পত্রিকার সাহসী ভূমিকা দেখা যায়। বলা যায়, গণমানুষের বন্ধু হয়ে উঠেছে। শুধু নিউইয়র্কে নয়, দেশের অনেকেই নিয়মিত লিখছেন এবং পড়ছেন এই পত্রিকা। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি, অধিকার, ব্যথা-বেদনার কথা নিয়মিত বলে যাচ্ছে পত্রিকাটি। ডিজিটাল কল্যাণে মুঠোফোনের মাধ্যমে শহর থেকে শুরু করে একেবারে সিলেট তথা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসকারীদের কাছে ঠিকানার কথা বলতে শুনেছি। তারা জানে, এই শহরে ঠিকানা নামে একটি অতি পুরোনো পত্রিকা বের হয়।
ঠিকানায় নবীনদের যেভাবে সুযোগ দেওয়া হয়, সেটাও বলার মতো। দেশের যেকোনো তরুণ, শিক্ষার্থী এবং সাধারণ মানুষ লিখতে পারে তাদের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে।
ঠিকানা এ পর্যন্ত অনেক জাতীয় বিষয়ে সাহসী রিপোর্ট করেছে, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। এ পত্রিকায় সব পেশা, শ্রেণি, ধর্ম ও গোত্রের সব খবরাখবর প্রকাশিত হয়। পত্রিকাটির সব বিভাগ পাঠকের মন জয় করতে পেরেছে। দেশের তথা প্রবাসী পাঠক যা চায় এবং যেভাবে চায়Ñতাদের মনের কথা, মনের ভাষা বুঝেই ঠিকানা তাদের সব বিভাগ সাজাতে পেরেছে। সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ, মাদক, বাল্যবিবাহ, যৌন হয়রানি, পাহাড় কাটাসহ পরিবেশ বিধ্বংসী সব খবর এখানে গুরুত্ব পায়। স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদ সমান গুরুত্বের সঙ্গে এতে উঠে আসে।
ঠিকানা পাঠকের মনের ভাষা বোঝে। তাই এ পত্রিকার পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও লেখকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পত্রিকাটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পত্রিকাটি নতুন প্রজন্মকে সঙ্গে রাখতে সক্ষম হয়েছে। সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্মসহ সব বিষয়ের সংবাদ এ পত্রিকায় অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ভিডিও রিপোর্টিং আমার বেশ ভালো লেগেছে। ভিডিও রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসে স্বজনদের জীবনযাপন দেশে বসেই মানুষ এখন দেখতে পারবে।
ঠিকানার নিয়মিত আয়োজনে থাকে জাতীয়, আন্তর্জাতিক, সম্পাদকীয়, খেলাধুলা, বিনোদন, সাহিত্য, অর্থনীতিসহ আরও সকল বিষয়ে অত্যন্ত মানসম্পন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণমূলক লেখা, যা আমাকে উপকৃত করে। প্রতিটি বিভাগেই থাকে পাঠকের মনের কথা। সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডেও ঠিকানা সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে। এসবের মাধ্যমে ঠিকানা সক্রিয়ভাবে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করে থাকে।
আবারো বলতে হয়, বাংলাদেশের তথা নিউইয়র্কের সবচেয়ে প্রাচীনতম সংবাদ পত্রিকা ঠিকানা প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছরে পদার্পণ করেছে। এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর বিদেশ থেকে প্রকাশ হওয়া প্রথম বাংলা পত্রিকা। সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে অনিশ্চয়তার এ যুগে এসে একটি পত্রিকা ৩৪ বছরের মাইলফলক স্পর্শ করা, লেখক ও পাঠক মনে স্থান করে নেওয়া রীতিমতো ঈর্ষণীয় ব্যাপার।
নিউইয়র্কে শীর্ষস্থানীয় সাপ্তাহিক ঠিকানা দেশের মাটি ও মানুষের কথা বলে। বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশিদের বিভিন্ন স্থানের দুঃখ-দুর্দশা, সংকট আর সম্ভাবনার কথা তুলে ধরতে ধরতে বর্তমানে এখানে মানুষের ভালোবাসার মুখপত্রে পরিণত হয় পত্রিকাটি। এই ঠিকানা পত্রিকা যুগ যুগ ধরে তৈরি করেছে অসংখ্য লেখক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক; পাঠকবৃন্দ যা সত্যিই প্রশংসনীয় ও অতুলনীয়। আমি ঠিকানার একজন ক্ষুদ্র লেখক হিসেবে তাদের ৩৪ বর্ষে পদার্পণে ঠিকানা পরিবার ও ঠিকানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সালাম ও অভিবাদন জ্ঞাপন করছি। সেই সঙ্গে পাঠকনন্দিত পত্রিকার শুভকামনা করি, যেন পত্রিকাটির সামনের পথচলা আরো সুগম ও সার্থক হয় এবং উত্তরোত্তর সফলতা বৃদ্ধি পায়। পরিশেষে এ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদকমণ্ডলী, প্রতিবেদক, রিপোর্টার ও সর্বস্তরের কর্মকর্তার প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা রইল। ঠিকানা দীর্ঘজীবী হোক এবং আরও অনেক সফলতা অর্জন করুক-এটাই প্রত্যাশা।
লেখক : কবি ও সাংবাদিক।