ঠিকানার আত্মকথা

হামিদা ইসলাম :

ঠিকানা বলো তোমার শুরু কোথায়, শেষ কোথায়? জানতে চাও? আমার শুরু পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-ধলেশ্বরী। আজ সবইতো পেছনে ফেলে ভাসতে ভাসতে আটলান্টা সাগর পাড়ি দিয়ে জ্যাকসন হাইটসে করেছি আমার স্থায়ী ঠিকানা। কবেকার কথা, হ্যাঁ তাইতো, দেখতে দেখতে চোখের পলকে তেত্রিশ বছর পার করে চৌত্রিশে পা দেবো, চাট্টিখানি কথা নয়! যৌবন পার করে ভাটির দিকে চলছো, বয়সটাতো কম নয়!

আটত্রিশ বছর আগে নিউইয়র্কে বাংলা পত্রিকা ছিল না। বাংলাদেশের কোন কিছুই জানতে পারতাম না। মনটা সবসময় অস্থির থাকতো। মায়ের ভাষায় দুটি কথা বলার মতো ধারেকাছে কেউ একটা ছিল না। তখন বড় অসহায় লাগতো। হঠাৎ একদিন ঠিকানা পত্রিকার আবির্ভাব। পত্রিকা দেখে চোখে আনন্দাশ্রু বেরিয়ে এলো। যে দেশে মানুষ ইংরেজিতে কথা বলে, সেখানে এম এম শাহীন দৃঢ়তা ও সাহসের সাথে ঠিকানা পত্রিকা বাংলায় প্রকাশ করেন!
বাংলা ভাষাকে বিদেশ-বিভূঁইয়ে প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার তরুণ ছেলেরা একদিন বাংলাভাষার জন্যে ঢাকার রাজপথ রক্ত রঞ্জিত করেছে। জানা মতে, পৃথিবীর আর কোথাও ভাষার জন্য আন্দোলন হয়নি। যারা এই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে গেল, ইতিহাসে যুগ যুগ ধরে তারা বাঙালির বহ্নিশিখা হয়ে থাকবে। যাঁদের রক্তের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে গেল তাদের মায়ের ভাষাকে। ঠিকানা তোমায় লক্ষ লক্ষ সালাম। বাংলা ভাষার জন্য চিরতরে যাঁদের হারিয়েছি, তাদের আত্মা শান্তি পাবে।

তুমি মহান। তুমি আলোর দিশারী। প্রবাসে ছিলাম, মনে হতো দেশের একটু খবর ও বাংলা কথা শোনার জন্য। আজ আর মনে হয় না, ঠিকানা তুমি দিয়েছো অজানাকে জানার অধিকার। তোমার পাতায় থাকে রাজনীতি, ধর্মকথা, সুখ-দুঃখের নানা খবর। আরো থাকে গল্প-প্রবন্ধ, স্মৃতিকথা, চলচ্চিত্র, বিজ্ঞাপন, আর থাকে কবিতা। কবিতার ছন্দে ফিরে যাই নিজের মনের পাতায়। গোধূলী বেলায় কেন যে বার বার অতীতের স্মৃতি ভেসে ভেসে ওঠে! শুধু কি তাই, যেগুলো খুবই কাজের, ছোট ছোট আকর্ষক খবর, অনেক কিছু জেনে নেয়া সম্ভব হয়।

ঠিকানার প্রতি বিশ্বাস রাখুন, আরো তেজস্বী হোক, ফিরে আসুক তার স্বাতন্ত্র গাম্ভীর্য্য। পত্রিকার প্রতিটি পাতা সত্যি প্রশংসা পেতে পারে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, যা পড়ে আমি মানসিকভাবে লাভবান হই। আগে মনে হতো দেশ ছেড়ে হাজার হাজার মাইলে দূরে আছি। এখন আর দেশকে দূরে মনে হয় না। এই দেশে পহেলা বৈশাখ, আনন্দ মেলা, পিঠা উৎসব, লালন স্মরণ সভাÑ সবই উপভোগ করতে পারি। প্রবাসী হয়ে আসার পর দেশে যাওয়ার জন্য মনে কষ্ট পেতাম, আজ আর সেই কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করেছে ঠিকানা। বুধবারের প্রতীক্ষায় থাকি পত্রিকাটি জন্য। মনে হয়, কাগজটি সাপ্তাহিক না হয়ে যদি প্রতিদিনই পেতাম, ভালো হতো।

২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষার মাস। ক্যালেন্ডারে ২১শে ফেব্রুয়ারি একটি উজ্জ্বল দিন। ২১ আমাদের অহংকার। সেই ২১শে ফেব্রুয়ারি স্মরণে ঠিকানা প্রতিষ্ঠিত হলো। কুর্নিশ জানাই পরিচালককে, যিনি বাংলা ভাষায় দূরপ্রবাসে ঠিকানাকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জয় হোক ঠিকানা’র।

বি.দ্র. ঠিকানার শুভকাক্সক্ষী এবং কর্তৃপক্ষকে জানাই শুভ কামনা। সবাই ভালো থাকুন। আগামীদিনে ঠিকানার উত্তোরোত্তর সাফল্য কামনা করি।

প্রবাসী লেখিকা।