ঠিকানার কবিতাগুচ্ছ

এখন সময়

গোলাম রহমান

আঁখিজনে ভাসি বলছে উপোসী- ভাত চাই বাস চাই
এ ক্রন্দনে কাঁপছে পৃথিবী টলছে মাটির চাঁই।
টলছেনা শুধু পাষাণে মোড়ানো ধনীর নিঠুর মন
ধনের পাহাড়ে তারা বাস করে তবু আরও চাই ধন।
বেদিল শোষক জীবনের পথে রাখে পুঁতে বিষকাঁটা
যার ভাগ খায় তারই পিঠে হরদম মারে ঝাটা।
দুখী মানুষের ন্যায্য হিস্যা রাতদিন করি চুরি
বানিয়েছে তারা চোখ ঝলসানো এ প্রাসাদ নগরী।
অবোধ বুঝেনা দাবি-অধিকার লাভ আর লোকসান
হারানো কানের খোঁজ নিল বলে- চিলে নিয়ে গেছে কান।
এ কথা মেনে আচ্ছন্ন মনে পথ চলে দিনমান
নসিবের পর সব দোষ চেপে থাকে সদা ম্রিয়মান।
চারদিক ঘিরে ঘোর ঘন আঁধার অন্ধ প্রাচির কারা
তিল তিল করি এ কারাগারে স্বপ্ন যেতেছে মারা।
নেতা-ব্যবসায়ী চলে এক সাথে গলায় গলায় ভাব
একসাথে মিলে ছিনতাই করে দুখীর সুখ-খোয়াব।
দিনের বেলা ভীষণ বিবাদ একের শত্রু অন্য
রাতের বেলা এক হয়ে লুটে গরীবের রুটি-অন্ন।
ইজমের বেলা বিরাট দ্বন্দ্ব বেছে চলে নীতি-জাত
জাতির ভাগ্য লুন্ঠনকালে একপাতে খায় ভাত।
ব্যর্থ সাধনা কিছুই দেবেনা ভাগ্য লিখার রাত
সারারাত জেগে বৃথা প্রার্থনা, মিছে সব স্তুতি-নাত।
মনুষ্য যদি বদলায় আপন ভাগ্যলিখা
আল্লাহ কভু অলসের ঘরে জ্বালায়না দিবা শিখা।
এখন সময় দিন বদলের কেন আর মিছে দেরী
ভাঙতে হবে শত জনমের ঘৃণ্য ডান্ডাবেড়ি।
আটলান্টা।

নির্ঘুম ক্লান্ত তাপসী

জুলি রহমান

বোধিবৃক্ষতলে দেবম রজনী
একা সে গভীর ধ্যানে খোলে রসায়ন;
দৈহিক পাখি ভেতরে তর্পায় বুনট খাঁচায়
প্রিয় মানুষেরা শোনো খোলো বাতায়ন।

একটি গরাদে আলোময় জানালায়,
সুবাতাস আসে যায় কে রাখে খোঁজ তার?
অহমের ভারে যারা বন্দী তারাই বানায় গল্প,
হিংসার জারক রসে কী নিদারুণ লজ্জা!

বিধৃত বুকে নেই বাঁধার প্রাচীর গিলাফহীন
তবুও ভুলের স্বাধীনতায় ব্যঙ্গসূত্রের ঢেউ?
কী অর্বাচীন! কী অর্বাচীন! আহা মরি!
রম্যতা কল্পনা ফুলের পরাগে জমাট নয়।

রঙের দ্যোতনা কী ছড়ায় রাতারাতি?
মেধা প্রজ্ঞা ক্ষান্ত হোক উর্বশী যামিনী
বিভাবরী জাগরণে চূর্ণ ঘর দেহ হয়,
অঙ্গ সোনা সরোদ চিত্রে এইতো বিশ্বাস!

এখন রূপালি রৌদ্রে পোড়ে যাক প্রাণ।
ফাগুন, মাঘ কিংবা দিন মাস ক্ষণ
ও কিছু নয়! এ শহর কবিতা বুঝেনা।
নাদান মূর্খ কপট পাশে জ্যোতির্ময় রাত।
নিউইয়র্ক।

উন্মুখ ব্যাকুলতা

জান্নাতুল ফেরদৌস

এসেই বলছো চলে যাব, কেমন লাগে বল?
তুমি বলছো তোমার সময় নেই, অথচ আমি
জন্মাবধি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।

তুমি আসবে বলে মেঘকে বলেছি
মাঝ রাতে বৃষ্টি ঝরাতে, জোনাকি পোকাকে
আলো ছড়াতে-আর ঝিঁঝিঁ পোকাকে সাঁনাই বাজাতে,
রজনীগন্ধা, বেলীকে বলেছি বেশি বেশি গন্ধ ছড়াতে।
অথচ তুমি বলছো এক্ষুণি চলে যাবে- কেমন লাগে বল?
দোহাই তোমার ,একটু স্থির হও, নিবিড় হয়ে বসো।
তোমার স্পর্শ পাবার জন্য- গায়ে সুগন্ধি মেখেছি,
দেখ কচুয়া রংয়ের শাড়ি পরেছি, রক্ত জবার মতো
লাল পাড়, দেখতো কেমন লাগছে?

আমলা মেথির সুরভিত তেল দিয়ে পরিপাটি খোঁপা
বেঁধেছি হাতে রেশমি চুড়ি, দোহাই তোমার ছুঁয়ে দেখ ।
অপেক্ষার যন্ত্রণাবিধুর সময় যখন শেষ, তখন তুমি
বলছো সময় নেই, এক্ষুণি চলে যাবে,কেমন লাগে বল?

সূর্যকে বলেছি দিগন্তের ওপারে বটের ছায়ায় ঘুমাতে,
সূর্য কী বলেছে জানো? বলেছে রাত্রি প্রভাত হবে না,
পাখিরা ডাকবে না ঘুম ভাঙাতে-শস্য ফলে বইবে না
হিল্লোলিত বাতাস, ঘুমের দেবীরা দাঁড়িয়ে দেখবে
সীমাহীন মিলনের দৃশ্য অথচ তমি বলছো
সময় নেই এক্ষুণি চলে যাবে, কেমন লাগে বল?
বুঝতে পারছো, কি সুনসান নিস্তব্ধ রাত্রি ,
রাত করে বাড়ি ফেরা মাতালরা-প্রলাপ বকছেনা,
পরকীয়া প্রেমিক চুপিচুপি কড়া নাড়ছেনা
প্রেমিকার দ্বারে, খেয়াপারের মাঝি নৌকায় বসে
গাইছেনা “মন মাঝি তোর বৈঠা নেরে আমি আর”
নিশিথের এই আয়োজন শুধু তোমার আমার, অথচ
তুমি যাবার জন্য দু’পা বাড়িয়েছে কেমন লাগে বল ?
তোমার কাঁধে ঝুলানো স্টেনগান, বাইরে অপেক্ষমান
সহযোদ্ধারা, ভোর হওয়ার আগেই তোমাকে যেতে হবে
কাক্সিক্ষত ব্যাটল স্পষ্টে হানাদার শত্রু নিধনে, যাও
তবে আমার মিলন উন্মুখ ব্যাকুলতা উৎসর্গ করলাম
বিনিময়ে স্বাধীনতা।
নিউইয়র্ক।

পোড়ামাটির দেয়াল

আমিনুর রশীদ পিন্টু

বহু মেঘ জল-ঝড়ে হয়ে গেছে বিলীন
বিমুগ্ধ কৈশোর। তবু দেখি মাছেদের
আনাগোনা বিকেলের ধ্যানমগ্ন পুকুরে।
তাল তমালের বিস্তৃত ছায়া
করেছে আলিঙ্গন শৈবালের ডানা।
প্রাণের উঠোন তবু ভরে থাকে
শ্রাবণের সুবাসে। পিউ পাপিয়ার
বাঁশি সারারাত আজ বাজে না।
হেমন্তের গোধূলির আমেজ জড়িয়ে
নামে না উত্তুরে বাতাস পুঁথির পাতায়
কিংবা উদাস কৃষ্ণচূড়ার পালকে
লেগে থাকে না বিনম্র্র স্মৃতির কুয়াশা।
স্বপনের নৌকোতে ভেসে আসে
রূপকথার যাদুকরেরা যাদের
আঙ্গুলের স্পর্শে কঠিন মাটিতে
জন্ম নিয়েছিলো একদিন সোনালী
বসন্তেরা। সেই সব মল্লিকাবনের
দুঃখগুলো আজো লেখা আছে
পোড়ামাটির দেয়ালে।
নিউজার্সী।

দূরত্ব

যীশু বড়ুয়া

হৃদয়ে আগুন মনে জ্বালা
প্রাণে উঠেছে ঢেউ,
মন আকাশে মেঘ জমেছে
বুঝার মানুষ কই।
কৃষ্ণ চুড়ায় রং লেগেছে
দুলছে রজনী গন্ধা,
মনের টানে চলছি এখনো
জীবনে আজও সন্ধ্যা।
মনের মানুষ কাছের মানুষ
আপন মানুষ তুমি,
আশা নিয়ে বেঁচে আছি
তুমি ভালবাসার ভূমি।
স্বদেশ ছেড়ে বিদেশ ঘুরছি
সোনার হরিণ খুঁজতে,
আসল সোনা ত্যাগ করে
নকল সোনা ধরতে।
জীবন যুদ্ধে নামছে মানুষ
ছুটছে আকাশ পথে,
সুখের খোঁজে দিন রাত্রি
দুঃখী পথে পথে।
স্বদেশ ছেড়ে বিদেশ আসে
অর্থ নেশার মমত্ব,
টাকার লোভে সংসার নষ্ট
বাড়ছে শুধু দূরত্ব।

দুঃসময়

মামুন জামিল

এখন আর বেরুবার সখ নেই,
তামা রঙ হয়ে গেছে চামড়া।
সবুজের গৃহে আজ সুখ নেই,
জলপাই গাছে ধরে আমড়া।
বালি হাঁস ভীতু ডুব সাঁতারে
তেলচিটে পালক আর পাখনা!
পেঙ্গুইন উদাসীন খাবারে,
চাতকীর চোখে মেঘ ঢাকনা।
তেল জল মিশে হলো একাকার,
শিশিরের বুকে লাগে খরতাপ!
বাগানের ফুলগুলো কদাকার,
মালিনীর দেহে নাই উত্তাপ !
-নিউইয়র্ক।

কবিতাই আমার আনন্দ

ডক্টর ওয়াল্টার দিলু বিশ্বাস

হে আমার সর্বাঙ্গসুন্দরী কবিতা-কপোতী!
এই নিঃসঙ্গ-অবসরকালে তোমাতেই পাই
কেবল অব্যক্ত আনন্দ সূর্য উদয়-অস্ত অবধি।
হে আমার অনন্ত-আনন্দদায়িকা-কবিতা,
যখন আমি পত্রিকায় দেখি তোমার উজ্জ্বল
স্মিত হাসি, তখন অলৌকিকভাবে আমার হৃদয়
হতে উপচেপড়া আনন্দ-স্রোতে হতাশা নিরাশা
পালায় আমার দেহ মন ছেড়ে, ফলে আমি
হই একজন মুক্ত-শান্ত-সুস্থির-মানবিক কবি।
অকস্মাৎ অনুভব করি এ পরম সত্যটি,
আমি ত তোমাতেই প্রত্যহ আরোগ্য হই,
তাই, হে কবিতা! তুমিই আমার আরোগ্যদায়িনী।
হে সুপ্রিয়া-কবিতা! এই কাব্যকুঞ্জে তোমাকেই
কেবল পবিত্র চুম্বনে আলিঙ্গন করি বক্ষে চাপি
প্রতিদিন অহরহ শয়নে স্বপনে দিবস রজনী।
হে শুদ্ধমতি-অনন্ত-যৌবনা কবিতা,
তুমিই আমার বার্ধক্যের যৌবনানন্দ,
আমি তাই সদা তোমাতে তৃপ্ত ও প্রীত।
হে অতি নিকটতম-প্রিয়তমা-কবিতা,
তুমিই কেবল আমার প্রেম পতাকাবাহী
ও গভীর অন্তরে ঝর্ণাধারার মতন
কল্ কল ্ছল্ ছল্ হর্ষ ধ্বনি!

কবে উঠবে জেগে

সুরাইয়া হক

দেশের মানুষগুলোর রক্ত কি পানি হয়ে গেছে
দেশের মানুষগুলোর চোখ কি অন্ধ হয়ে গেছে
দেশে কি কোন রক্তমাংসের মানুষ নেই
দেশের মানুষজন কি প্লাস্টিকের পুতুল হয়ে গেছে
দেশে যদি রক্তমাংসের মানুষ থাকে
তবে কি তারা বোবা
তবে কি তারা অন্ধ
নাকি তারা বিবেকহীন
নাকি তারা মনুষ্যত্বহীন
কোথায় দেশের সেই তেজদীপ্ত যুবকেরা
তারা কি ভুলে গেছে বায়ান্নর বীর শহীদদের কথা
যাদের শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত ছিল বাংলাদেশ
নির্ভয়ে নির্বিঘ্নে যারা বিলিয়ে দিয়েছিল নিজেদের প্রাণ
মাতৃভাষা বাংলার জন্য
তারা কি ভুলে গেছে সে সব যুবকের আত্মদান
যাদের বজ্রদীপ্ত সাহসিকতায়
বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহান স্বাধীনতা।
কোথায় দেশের সে সকল যুবক-যুবতী
তারা কি দেখেনা দেশের এ মাৎস্যন্যায় দশা
নাকি কালো হাতগুলো তাদের
অন্ধকার জগতের বদ্ধ ঘরে আটকে রেখেছে।
তাদের হাত-পা-মুখ অচল করে রেখেছে
হে দেশের আপারম জনতা জেগে উঠ সবলে
ভিনদেশীদের কালোথাবা থেকে
দেশকে মুক্ত করতে হবে তোমাদের
তাই ঘুমিয়ে থেকোনা আর
জেগে উঠ যুবসমাজ।
নিউইয়র্ক।

স্বপ্ন

শফিক জামিল

স্বপ্ন আমার স্বপ্ন রে
তোর সাথে ঘর বেঁধেছি
লালন করেছি হৃদয়ে যতনে
স্বপ্ন আমার স্বপ্নে রে……..

স্বপ্ন আমার স্বপ্ন রে
কেমন করে ডানা মেলে
উড়ে চলিস দিক বিদিকে
ময়ূর পঙ্খীই ভর করে ?

স্বপ্ন আমার স্বপ্ন রে
ঝিমুনি বা ঘুমের ঘোরে
কি কথা বলে গেলে হায়রে
ভুলতে পারি না কিছুতে;

স্বপ্ন আমার স্বপ্ন রে
আশায় আশায় দিন কাটে
ধরে ফেলবো ইস এই নারে,
তবু ধরা তো হয় না তোরে;

স্বপ্ন আমার স্বপ্ন রে
ছুটছি তোর পিছে ছুটছি জোরে
খানাখন্দ আর দূর বহুদূরে
শেষ কি নেই এর কোনস্থানে ?

স্বপ্ন আমার স্বপ্ন রে
কানামাছি খেলা শেষ হবেই হবে,
তোকে ঠি ক পোষ মানাবো
সত্যি পূরণ হবে মোর স্বপ্ন যে;

স্বপ্ন আমার স্বপ্ন রে
তোর সাথে ঘর বেঁধেছি,
লালন করেছি হৃদয়ে যতনে
স্বপ্ন আমার স্বপ্ন রে….।
নিউইয়র্ক।

স্বাগতম রমজান

নূরুন্নেছা চৌধুরী রুনী

এসো হে রমজান তুমি এসো
ধরণীর যত কালিমা, সব তুমি মুছ,
সব মুছ।
যত পাপ-তাপ, ধুয়ে মুছে করো সাফ
শ্রান্তি-ক্লান্তি, দুঃখ বেদনা সকল
তুমি নাশো।
সংযম ইবাদত, পুণ্যের ইমারত,
মুসলিম চাহে যে নাজাত, তুমি এসো
-হে রমজান।
তুমি আসবে তাই
উদ্বেগ উল্লাসী-মুসলিম প্রাণ,
জানাই স্বাগতম, হে রমজান।

ভ্রাতৃত্ব
Brotherhood

Octavio Paz (Mexican)
(Homage to Claudius Ptolemy)
Translated in English by Eliot Weinberger

বাংলা অনুবাদ দলিলুর রহমান

আমি একজন মানব সন্তান চিরন্তন নই
এ বিশাল রাতে – আমি উপরে তাকিয়ে দেখি
তারারা লিখছে
অজান্তেই আমি বুঝেছি আমাকেও লেখা হয়েছে
এবং এই মুহূর্তে
কেউ একজন আমার কথা বলছে /

Octavio Paz (১৯১৭-১৯৯৮) ছিলেন একজন কবি, লেখক, সমালোচক, সম্পাদক, অনুবাদক এবং প্রথম মেক্সিকান যিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান (১৯৯০)/ ১৯৬৮ সনে অক্টাভিও পাজ (Octavio Paz) ইন্ডিয়াতে মেক্সিকোর অ্যাম্বাসাডর ছিলেন- ঐসময় মেক্সিকো সিটিতে এক ছাত্র আন্দোলনে মেক্সিকোর সরকার ছাত্রদের উপর গুলি চালিয়ে তাদের হত্যা করে / এর প্রতিবাদ করে পাজ (Paz) চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।

কবি ও কবিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি মনে করি কবিতার উদ্দেশ্য হল মানুষের মধ্যে গভীর আগ্রহ, রহস্য ও শ্রদ্ধাভক্তির মাধ্যমে এই অনুভূতির সৃষ্টি করা যে- জীবন একটি বিস্বয়কর অলৌকিক ব্যাপার। যখন বলছ জীবন একটি বিস্বয়কর অলৌকিক, তুমি এও বলছ জীবন নগণ্য। কবিতার কাজ হল জীবনকে বিস্বয়কর অলৌকিক ব্যাপার করে তোলা। কবিতার উপর আমি গভীর বিশ্বাস ও আ¯থা রাখি কিন্তু কবিদের ওপর নয়। কবিরা হল শব্দতরঙ্গের প্রেরক যন্ত্র, নালীর মত। তাঁরা সাধারণ মানুষের উর্ধে কেউ নয়। কবিরা শিরা বটে তবে আমাদের অনেক গলদ আছে। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে আমরা মানুষ এবং আমাদেরকে বিনয়ী হতে হবে। কবিতা অবশ্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিন্তু কবিরা নয়।
নিউজার্সী।

সকালের ভ্রান্তি পরিণাম

রওশন জাহান

সূর্যদহনে একটি সকাল আড়াল হলো পুরো দিনের জন্য
এ ভ্রম ভ্রাম্যমাণ পদচারণায় মুখর হলো কি?
আলোর হলকায় গড়িয়ে পড়লো চেতনা আমার
আমি অতীত থেকে আজ অবধি
নতুন ফুলপর্বেও বীজাণু বহন করে চলেছি কেবল
কোনটা মৃত, জ্বরাক্লিষ্ট কোনটা প্রস্ফুটিত সে দায়ভার নয় আমার
জলমগ্ন একগুচ্ছ আকাঙ্খার একান্ত পরিতাপ। পরিণাম আকড়ে
সঞ্চয় করেছি নাগালবদ্ধ ভস্ম অথবা আঁচ।
নির্মল অলৌকিকতা পথরোধে ব্যাসার্ধ সাধে সুমন্দ বাতাসে
ঝরে পড়া পাতারা মাটির জায়নামাজে সেজদারত
কোথাও কে যেন নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে নিয়মমাফিক
এ নিদারুণ সময়ে সুখদুঃখ সমান্তরাল দাঁড়িয়ে
সবই সুস্বাদু, শোক অসুখের বিজয়
সদ্যজাত কবিতায় বাকবিভোর, নীলদুগ্ধের বিদ্রোহে।

কোন কোন সোনালি বর্ণমালা জানালায় কথা বলে
আকাশের অর্গল খুলে ঘাসে পতিত বায়বীয় পাতন
আঁজলাভর্তি জুড়ে দেওয়া অক্ষরগুলো একেকটি
নিরাকার প্রবন্ধ, উপন্যাস অথবা গল্প
মেঘের আস্তিনে ডালপালার মত বেড়ে ওঠে
আমি পথিক শুষে নেই শেকড়ের ঘ্রাণ ঈশ্বর সঙ্গমে।
-নিউইয়র্ক।

রক্ত রঞ্জিত বাংলা ভাষা

নিখিল কুমার রায়

স্মৃতি তর্পণ ঐ শহীদ স্মরণে, বাংলা ভাষা তরে
ক্রান্তিলগ্নে ধীমানের জন্ম, বঙ্গ জননীর ঘরে।
ঊনিশ শ বাহান্নের সংগ্রাম মাতৃবুলি রক্ষায়
সালাম রফিক জব্বার, বরকতের প্রাণ যায়।

ধিক! পাকিস্তানী আগ্রাসনের, হয়েছে অবসান
বাংলা ভাষার অমর বিকাশ, জগতে মহিয়ান।
জননী জঠরের মুক্তি লগ্নে, কাঙ্খিত মাতৃবাণী
অত্র আমাদের বাংলা ভাষা, জগত বাঙালি জানি।

রক্ষিতে স্বীয় মাতৃভাষা, উৎকর্ণ দুনিয়াবাসী
জাতি ধর্মের উর্ধ্বে স্থিতি, জীবের কাছে অবিনাশী।
মহাবিশ্বে অগণন ভাষা, বাংলা ষষ্ঠ স্থান
রক্ত সাগরে একুশে ফেব্রুয়ারি, রবে যে অম্লান।

বিশ্ব সভায় আসন লভেছে, নন্দিতে বাংলা ভাষা
ভাব বিনিময় মুখ্য ভূমিকা, চির অমর খাসা।
স্বদেশ-স্বজাতি-স্বভাষা, অনন্তকাল পেতে চাই
দুর্লভ মানবের স্বতন্ত্র ভাষা, শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি তাই।

ভাষা শহীদ বিশ্বে বিরল, দৃষ্টান্তে চিরবরেণ্য
নন্দিত ক্ষণে পুপাঞ্জলি দানে, বাঙালি হবে ধন্য
পাক সংসদে প্রাক উক্তি, বাংলা ভাষা চাই প্রাধান্য
একুশে পদক ধীরেন্দ্র দত্ত নামে, স্বীকৃতি কাম্য।

মুক্তিযোদ্ধা, নিউইয়র্ক।