ঠিকানার কবিতাগুচ্ছ

ঝড়ের কবলে পড়ে

জুলি রহমান

তখন চারটা
বিদ্যুৎ ঝাপটা
মেঘেরা পাগলা
হাওয়ার আলাপন
কবিতা কথন
কতোকাল পর
অতঃপর বর্ষণ?
এতোই কর্ষণ?
ছুটি সুখে
নদী বুকে
পাখি ডাকে
বৃষ্টির ঠোঁটের
আদরে আদরে
ঘোরে ঘোরে দূরে
বিএক্স বয়
স্রোতহীন নট ইন

উঠোনে বাটিতে
অজানা অচেনা
সিঁড়িকোঠা দেয় ঠাঁই
ভেজাদিন সুখিমন
মিলনের গানে সুরে
এমন সুখন?
মানুষেরা বোঝেনা
সময় থাকে না!
জীবন একটা
একবার হয়
ভোগে ত্যাগে
যশস্বী করেই
তোমার পরিচয়
সুখও তেমন
আটকে ফাটকে?
জীবন যেমন
যেখানে যখন
সুখের বোফিয়া খোলো
অতঃপর ঝড় যদি ওঠে
সামলাও তাকে
বাহুবলে সিক্ত সুঠাম

এঁকে যাও বিমূর্ত গ্রাফ
মননের পরিচয় একার
না পিতার ভ্রাতার।
মামার চাচার।
না রূপের গুণের শুধু
কর্মের স্বাক্ষর
নয় তক্ষকের!
ঝড় নাই ঝড়!
নাই ডর!
তুফান সাগর?
অতল সীমার?
কবলে পড়েছো কী?

বায়ুর প্রতাপ
মধুর প্রলাপ
সঙ্গমের মিলনের
পাতায় পাতায়
শাখায় শাখায়
জলের ভেতর জল
ঢেউয়ের ভেতর ঢেউ
ঝড়ের কবলে পড়ে
উড়ে মন বিপুল শাখায়
গতির টানে মাটির টানে
উধাও এখন
উড়ির হাওয়া!
ফরিপার্ক, ব্রঙ্কস।

লাইক!

হামিদ নেওয়াজ মজুমদার

‘লাইক’ দিলাম এই ছবিতে ঐ ছবিতে।
কতো কথার মন্তব্যে!
বিয়ে বাড়ির বরকে
বাসর রাতের ছবিতে।
পড়াশুনায় সিদ্ধহস্ত
দস্যি ছেলের বায়নাতে।

‘লাইক’ দিলাম পালের বাড়ির
মর্ডান, মর্ডান খালাম্মাকে।
লাইক দিলাম ঐ সে
ফেরিওয়ালা ভ্যান গাড়িতে
গানের সুরে বেচতো সে
নানা রকম জিনিস এনে।

‘লাইক’ দিলাম নাম না জানা মেয়েটাকে।
সব রকম ‘লাইক’ দিলাম
মনের মতন রঙ মিশিয়ে।
ভুলে গেলাম সবকিছু
চোখের জলে পড়ে নিলাম
তোমার লাইক ‘আমি যে।’
-ফ্লোরিডা।

রমাদানের ওই বাঁকা চাঁদ

লাবলু কাজী

রমাদান মাসের এই পহেলা
উঠেছে খুশির নতুন নিরালা
বাঁকা হাঁসির এক ফালি চাঁদ যেন সরলা
আলোর উজ্জ্বল ধলার মঙ্গলা ।
রোযার শুরুতে দেখিয়া তাহারে
কি আপন লাগে আহারে !
যেন বেহেশতের হুর পরী
জ্যোতির ভাস্বরে নেমেছে স্বর্গের অপ্সরী ।
সিয়াম সাধনা বড়ই কঠিন
পাক্কা ঈমানদারের ত্যাগ বিরামহীন ।
জীবন থাকিতে ছাড়িব না রোযা
এ ব্রত মুমিনের জান্নাতের সঞ্চিত রওযা ।
সেহরীর খানা পিনা বড়ই বরকতময়
দিনের শেষে ইফতারীতে করি মিলে আনন্দময় ।
আরবের খেঁজুর অম্ল-মধুর চাহিদা যুগ- যুগের
রাছুলুল্লার ছুন্নুত পালনে শোভিত সব আয়োজনের ।
তারাবীর নামাজ জামাতে পড়তে যেমন হয়
কষ্ট-সৃষ্ট সব আল্লাহর ধ্যানে বিলীন হয়ে রয় ।
তওফিক দাও হে খোদা পালনে আজ্ঞা
খুশি যেন বন্টন হয় গরীবে হোক নিজ প্রজ্ঞা ।
যাকাত- ফিতরা দিয়ে তাদের ভরো আনন্দে
ঈদের খুশী বিলাও সাথে আত্মীয়ে ভাল আর মন্দে।

নিউইয়র্ক।

কটি আলুর গল্প

জেবুন্নেছা জ্যোৎস্না

কেজি অথবা বস্তাতে নয়-
হালি ধরে গিয়েছিলাম
লোহার গেট পেরিয়ে এক বিশাল দালান বাড়ি।
চাকচিক্য আর ঐশ্বর্য সেখানে টাঙানো দেয়ালে,
ঢেকেছে ধুলোয়, যেন ইতিহাস আজ সবই।

জনা পাঁচেক শীর্ণ পোশাকের কঙ্কালসার লোকের,
জীর্ণ রান্নাঘরে হয়েছিল আমার ঠাঁই;
এক কেজি চালের সাথে ফুটাবে আমায়
আগুন ধরাবার মতো তেমন কিছু নাই।
তবু গিন্নি কাঁচা কাঁঠে চোখ ডলে ডলে
করলো সিদ্ধ আমায়-
হঠাৎ করে ছোট কন্যাটি
লুফে নিল আমায় প্রচন্ড ক্ষিধায়।
পিছু পিছু ভাই দুটি তার –
সেকি কাড়াকাড়ি–!
আমি সেই হতভাগ্য ছোট আলু
সাধ্য নেই যে ওদের সবার ক্ষুধা মেটাতে পারি।

হায়রে নগর জীবনের
দালান-কোঠার কাঠামোর আড়ালে লুকানো
ভাঙ্গা-চোরা অভিশপ্ত জীবন!
না পারে চাইতে, না পারে সইতে
মধ্যবিত্ত ভদ্রলোকের
পিষে পিষে মরার নিভৃত ক্রন্দন।।
নিউইয়র্ক।

আহামেরিকা

এম. আলমগীর

যাবো কি যাবো না
পড়েছি দোটানা
মন টানে যেতে মনটানা
ধানমন্ডি থেকে নরমান্ডি
গুলশান থেকে গোসেন
অনেকেই এসেছে আমিও আবুল হোসেন
আলো ঝলোমলো খানাপিনায় ভরপুর
আহামেরিকা
ফ্যাট বার্গার, বিফ্্ বার্গার, চিজ বার্গার
খেয়ে খেয়ে শুধু শরীর বাড়ছেই আমার
কখনো আমি পড়ি তো
কখনো চেয়ার পরে
কেউ এখন দেয় না দাওয়াত
বলে ছোট্ট বাসা, জায়গা নেই বসার ঘরে
ওজন আমার অনেকে বেড়েছে
চলাফেরাই দায়
ছোট্ট একটি ফিয়াট কিনেছি
অনেক কষ্টে ধার দেনায়
ছোট্ট গাড়ি আমায় দেখলেই রাগ ভারী
করে গড় গড় ঘড় ঘড়
যতোই বলি পঙ্খিরাজ আমার
তাতে কি তার রাগ কমে?
উঠে বসলে আরও রাগ
থামানোর আগেই যায় থেমে
খাবো না রিচ ফুড, একদম বাদ
পাট শাক, লাল শাক
শুকনো রুটি আর পানি
আড়চোখে দেখি ম্যাক দাদা আর
কেএফসি দেয় হাতছানি
একবার দুবার খেলে কিছু হয় না
এসো আমাদের ঘরে
স্পেশাল বার্গার দেবো ক্যালোরি কম করে
আহামেরিকা
সবকিছুই বেশ মানিয়েছে আমায়
শরীরটাই শুধু বেমানান বেজায়!