নাহিদ নজরুল :
মানুষ জীবের মাঝে প্রধান-গুণে-জ্ঞানে, কাজে-কর্মে পঞ্চ ইন্দ্রিয় সজাগসম্পন্ন সচল এক সামাজিক জীব। মানুষের জীবন থেমে যায় তখনই, যখন তার বেঁচে থাকার শেষ দিন অর্থাৎ মৃত্যু। মানুষ ব্যতীত আরও অনেক কিছু আছে, যেগুলো একদিন থেমে যায়, অচল হয়ে যায়, যদিও এগুলো জীবের পর্যায়ে পড়ে না। উদাহরণস্বরূপ বইপুস্তক শেষ হয়ে যায়। বড় বড় অট্টালিকা একদিন ধসে পড়তে পারে এবং এগুলোর অস্তিত্ব শেষ হয়ে যেতে পারে। প্রকৃতির গাছপালা, পাহাড়-সমুদ্র, জমি-বালি বিলীন হতে পারে, ধুয়েমুছে নতুন চর উঠতে পারে বৈকি, কে জানে। এসব প্রসঙ্গ এ জন্যই আসছে, আজ সাপ্তাহিক ঠিকানার ৩৪তম বছরে পদার্পণের দিন। বহু চড়াই-উতরাই পার হয়ে ঠিকানা আজ এই ক্ষণে এসে পৌঁছেছে। এর দাবিদার ঠিকানা পরিবারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই।
বিশেষ ধন্যবাদের দাবিদার এম এম শাহীন, যিনি পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা। মনে পড়ে খুব সম্ভব ১৯৯৭ সালে প্রয়াত বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী মান্না দে এসেছিলেন বস্টনে। ঠিকানার পক্ষ থেকে শিল্পীর একটা এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। মান্না দে বলেছিলেন, আমি প্রথমেই ধন্যবাদ দিই তাকে, যিনি এই নামটা রেখেছেনÑঠিকানা। এ নামটি বাস্তবিকই সকল লক্ষ্য পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এই উপযোগী নামই পত্রিকাজগতে সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছে। আরও ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য সাঈদ-উর-রব, যিনি বহুদিন ঠিকানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থেকে ঠিকানাকে যোগ্য ঠিকানায় পৌঁছাতে সক্ষম করেছেন। বর্তমানেও ঠিকানা চলছে সবল গতিতে, অন্য সহকর্মীদের সাহায্য-সহযোগিতা আর তদারকিতে।
আমি ঠিকানার সঙ্গে জড়িত ১৯৯৪ সাল থেকে। ফোবানা যখন দুই ভাগে বিভক্ত হলো, ওই সময়ে বস্টনে অনুষ্ঠিত ড. শাহজাহান মাহমুদের নেতৃত্বে ফোবানার সঙ্গে ঠিকানার নিউ ইংল্যান্ডের প্রতিনিধি এবং ফোবানার পাবলিক রিলেশন্সের দায়িত্ব পালন করেছিলাম। তার পরের ইতিহাস সোজা-বাঁকা টানাপোড়েনের মাঝে কখন শেষ পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছিলাম, তা নিজেরই মনে নেই। শুধু মনে আছে বহু ব্যস্ত ছিলাম প্রতি সপ্তাহে রিপোর্ট লেখা, বিভিন্ন জাতীয় দিবস নিয়ে লেখা ইত্যাদি কাজে। বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য কাজ করা, তাদের সম্পর্কে লেখা, প্রতিনিয়ত রিপোর্ট করা। যত সহজ ভাবা যায়, বাস্তবে তা মোটেই সহজ নয়।
সুতরাং লেখা-সংক্রান্ত বিষয়ে যেভাবে আমি কমিউনিটিতে পরিচিতি লাভ করেছি, একইভাবে মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে নিছক এমন ঘটনা নিয়ে অনেকের সঙ্গে অর্থাৎ তথাকথিত কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। অনেকে উপদেশ আকারে বলেছেন, সবার সম্পর্কে শুধু ভালো ভালো কথা লিখবেন। দোষ করলেও কারও সম্পর্কে খারাপ কিছু লিখবেন না। তাহলে আপনার বদনাম হবে, আপনি বিতর্কিত হবেন।
বলুন, কী করার আছে আমার, হাতের কলম আমাকেই দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। তবু পিছপা হইনি, এগিয়ে গিয়েছি, এখনো তা ই। এখন লিখি কম, লেখার বহু কিছু আছে, আবারও লেখা শুরু করব। বেঁচে থাকার শেষ দিন পর্যন্ত লেখার ইচ্ছা রইল। মনে সততার আলো জ্বললে তা মুছে ফেলার সাধ্য কার আছে। ঠিকানাকে আমার হৃদয়ের অন্তস্তল থেকে ধন্যবাদ, আমাকে সে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য, বস্টনের কমিউনিটির সাধারণ মানুষের পক্ষে দাঁড়িয়ে থেকে তাদের সেবার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।
বাংলাদেশ যেমন চিরজীবী হোক, একইভাবে সাপ্তাহিক ঠিকানাও চিরজীবী হোকÑআমিন।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট।