এরিক লেরয় অ্যাডামস, আমেরিকান রাজনীতিবিদ এবং প্রাক্তন পুলিশ অফিসার। তিনি ২০২২ সাল থেকে নিউইয়র্ক সিটির ১১০তম মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণকারী অ্যাডামস ২০ বছরেরও বেশি সময় নিউইয়র্ক সিটি ট্রানজিট পুলিশ এবং নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিভাগের কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ক্যাপ্টেন পদে থাকাকালে তিনি অবসর নেন। ঠিকানার সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে মেয়র অ্যাডামস বলেন, ‘আমি বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য সত্যিই গর্বিত।’ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ঠিকানার সিওও মুশরাত শাহীন।
ঠিকানা : নিউইয়র্ক সিটির মেয়র হিসেবে আপনার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব কী বলে মনে করেন? এমন কোনো উদ্যোগ আছে কি, যা আপনি বাস্তবায়ন করতে চেয়েও পারেননি?
এরিক অ্যাডামস : আমি মনে করি, আমার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো জননিরাপত্তা। আমি বারবার বলেছি, সমৃদ্ধির পূর্বশর্ত হলো জননিরাপত্তা। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের এমন একটি শহর থাকতে হবে, যা সবার জন্য নিরাপদ এবং আমরা নিরবচ্ছিন্নভাবে এ কাজই করে যাচ্ছি। তাই আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান যে আমরা সত্যিই আমাদের জননিরাপত্তার দিকে মনোনিবেশ করেছি। আপনি সংখ্যার দিকে তাকান, তারা নিজেদের প্রতিফলিত করে। আমরা বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে গোলাগুলির ঘটনা প্রায় ২৫ শতাংশ এবং খুনের ঘটনা ১১ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছি। লোকজনও আমাদের সাবওয়ে সিস্টেমে ফিরে এসেছে। কিছু ঘটনা আমাদের স্থানীয় ট্যাবলয়েডগুলোতে তুলে ধরা হলেও এটি স্পষ্ট যে সাবওয়ে সিস্টেমে রাইডারশিপ বেড়েছে। খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, চুরি কমেছে। এ বছর আমরা যথাযথ ও নির্ভুলভাবে পুলিশিং করায় এ সাফল্য এসেছে। তাই আমরা এ ব্যাপারে খুবই খুশি।
ঠিকানা : আপনার দৃষ্টিতে কি নিউইয়র্কবাসীর জন্য অতিরিক্ত ফেডারেল সহায়তার প্রয়োজন? আপনার ধারণা অনুযায়ী কী পরিমাণ তহবিল দরকার এবং এটি পেতে আপনি কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
অ্যাডামস : আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ফেডারেল ডলার। আসলে আমাদের দুটি কাজ করতে হবে। এক. আমাদের লোকজনের যে সুবিধাগুলো রয়েছে, যেমন স্ন্যাপ, ইবিটি, আন-এমপ্লয়মেন্ট বেনিফিট এবং ফুড স্ট্যাম্পসÑএগুলো সম্পর্কে তাদের সচেতন করা প্রয়োজন। এটা স্পষ্ট যে লোকজন এই সুবিধাগুলো ব্যবহার করছে না। আমরা ফেডারেল সরকারকে অনেক বেশি অর্থ ফেরত পাঠাই। কারণ, লোকজন এই সুবিধাগুলো সম্পর্কে সচেতন নয়। সত্যি কথা বলতে, এসব সুবিধা বাস্তবে অ্যাক্সেস করা কখনো কখনো খুব কঠিন। এ কারণেই আমরা মাইসিটি কার্ড নামে পরিচিতি স্থাপন করছি। এটি এমন একটি উদ্যোগ, যা কোন মানুষ কোন সুবিধা পাওয়ার যোগ্য, তা শনাক্ত করতে পারে। আমরা আশা করছি, এটি আমাদের স্বয়ংক্রিয়ভাবে লোকজনকে ‘সাইন আপ’ করার অনুমতি দেবে। কিন্তু একই সঙ্গে আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসীদের জন্য আমাদের সবচেয়ে বড় ফান্ডিং স্ট্রিম প্রয়োজন। এটা একটা জাতীয় সমস্যা এবং এই মুহূর্তে আমাদের যে খরচ করতে হচ্ছে তার বেশির ভাগ শুধু নিউইয়র্ক সিটির বাসিন্দাদের ট্যাক্স রাজস্ব থেকে আসছে। গভর্নর এই উদ্যোগের মাধ্যমে এক বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা জানি, আমাদের ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে আরও অনেক বেশি অর্থ সহায়তা প্রয়োজন। এসব খাতে আমরা সত্যিই ফেডারেল সরকারের কাছ থেকে আরও বেশি সাহায্য কামনা করি।

ঠিকানা : সম্প্রতি সিটি প্রশাসন আমাদেরসহ এথনিক (জাতিগত) মিডিয়া আউটলেটগুলোর বিজ্ঞাপনের হার কমিয়ে দিয়েছে-বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন কমিউনিটির সঙ্গে যোগাযোগ এবং সেবা প্রদানে এথনিক মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা এই আউটলেটগুলোর টিকে থাকা নিয়ে সন্দিহান। আমাদের প্রাণবন্ত এই শহরে এথনিক মিডিয়ার কার্যকারিতা অব্যাহত রাখতে আপনার অফিস বিবেচনা করতে পারে, এমন কোনো কৌশল বা উদ্যোগের বিষয়ে আপনার কোনো মতামত আছে কি?
অ্যাডামস : এথনিক মিডিয়াকে সহায়তা করার ক্ষেত্রে আমরা খুবই বিশ্বাসী ও আন্তরিক। আমরা জানি, এসব মিডিয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আপনারা এখন দেখতে পাচ্ছেন, আমরা অনেক এথনিক মিডিয়ার সঙ্গে জড়িত হয়েছি। কারণ, আপনারা অনেক বৈচিত্র্যময় কমিউনিটিকে সমর্থন করেন এবং এই শহর শুধু ইংরেজি ভাষাভাষী শহর নয়। মূলধারার বড় বড় নেটওয়ার্ক ও টেলিভিশন নেটওয়ার্ক এবং প্রধান প্রধান সংবাদপত্রগুলো সব কমিউনিটির কথা বলে না। আমি বিশ্বাস করি, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই আমি এথনিক মিডিয়ার একটি অফিস করার জন্য স্থানীয় আইন স্পনসর করেছি। আমাদের কাছে আর ফেডারেল স্টিমুলাস ডলার নেই। এই তহবিল থেকে এথনিক মিডিয়াতে আরও বেশি খরচ করার সুযোগ ছিল। এর পরও আমরা এখনো আমাদের বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে এথনিক মিডিয়াকে সমর্থন করে যাচ্ছি, কারণ আমরা বিভিন্ন কমিউনিটির কাছে পৌঁছাতে চাই। আমরা যখন আমাদের বিভিন্ন নিয়োগ হল বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলি, তখন আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের শহরের শক্তি এথনিক মিডিয়াতে নিহিত এবং আমরা এতে বিনিয়োগ চালিয়ে যাব।
ঠিকানা : আমরা বাংলাদেশের বিজয় দিবস (১৬ ডিসেম্বর) বা স্বাধীনতা দিবসে (২৬ মার্চ) কুচকাওয়াজ আয়োজনের সম্ভাবনা নিয়ে উচ্ছ্বসিত। আপনি কি আমাদের সঙ্গে থাকবেন এবং এটি আয়োজন করতে আমাদের কমিউনিটিকে সমর্থন করবেন?
অ্যাডামস : বাংলাদেশি কমিউনিটি ক্রমবর্ধমান এবং এটি ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। সেখানে থাকা এবং সত্যিই আপনাদের সঙ্গে দিবস উদ্যাপন করার ইচ্ছা আছে আমার। আমি বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য সত্যিই গর্বিত। তারা পরিবারে বিশ্বাস করে। তারা জননিরাপত্তায় বিশ্বাসী। তারা ছোট ব্যবসায় বিশ্বাসী। আমার বিশ্বাস ও প্রিয় জিনিসগুলোর প্রতিও তাদের সমর্থন রয়েছে। এ জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।
ঠিকানা : আমাদের কমিউনিটি নিম্ন আয়ের লোকদের সহায়তা প্রদান এবং কমিউনিটির বিভিন্ন প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে একটি বাংলাদেশ সেন্টার (কমিউনিটি হাব) প্রতিষ্ঠার আশা করে। আপনি কি দয়া করে এমন কোনো সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনা করতে পারেন, যার মাধ্যমে আপনার প্রশাসন এই উচ্চাভিলাষী প্রকল্পটিকে সহায়তা করতে পারে?
অ্যাডামস : কেন্দ্র করার চিন্তাভাবনাকে আমরা পছন্দ করি এবং আমরা এটি দেখতে চাই। তবে মানুষ যখন সেন্টার, কমিউনিটি সেন্টার বা কমিউনিটি হাব সম্পর্কে চিন্তা করে, আমি তখন তাদের উৎসাহিত করতে চাই। আমি বলতে চাই, এসব সেন্টারে অডিটোরিয়াম, জিমনেসিয়াম, পুল, ক্লাসরুম ও কিছু খালি জায়গা থাকবে। তাদের অন্যান্য জিনিসও থাকবে। আমরা যখন নতুন ভৌত কাঠামো তৈরি করব, তখন আমাদের এমন একটি জায়গা থাকতে হবে, যেখানে সেসব জিনিস থাকে এবং সেগুলো হলো স্কুল ভবন। শিশু এবং পরিবারগুলোকে সেই স্কুল ভবন, অডিটোরিয়াম, জিম এবং শ্রেণিকক্ষগুলো ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই স্কুল ভবনগুলো খুলে দিতে হবে। আমরা একটি বর্ধিত যুব সম্প্রদায়কে ব্যবহারের উদ্যোগে বলতে চাই, আমরা কোর্স বাছাই করব। আমরা স্কুল সেফটি এজেন্ট, ইন্স্যুরেন্স এবং কাস্টডিয়াল ক্লিনিংয়ের জন্য কোর্স বাছাই করব।
এটি অলাভজনক এবং গোষ্ঠীগুলোকে এমন কিছু ব্যবহার করার অনুমতি দেয়, যা সম্পর্কে সবাই ইতিমধ্যে পরিচিত। প্রতিটি শিশু এটির সঙ্গে পরিচিত। প্রত্যেক বাবা-মা এর সঙ্গে পরিচিত। আমরা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের জন্য নতুন ভৌত কাঠামো তৈরির তহবিল সংগ্রহের সময় এটি করতে পারি। জনগণ যাতে সরকারে প্রবেশ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য কি আমাদের কাছে চমৎকার অনুবাদ পরিষেবা রয়েছে? আমাদের লক্ষ্য সে রকম কেন্দ্র খুঁজে বের করা। আমরা যখন এটি করি, তখন আমাদের লক্ষ্য হলো অনুবাদ পরিষেবা এবং অফিস অফ ইমিগ্র্যান্ট অ্যাফেয়ার্স ব্যবহার করে সরকারকে নেভিগেট করতে লোকেদের সহায়তা করা। সেখানে থাকবে এমন কিছু নতুন প্রযুক্তি, যা ব্যবহার করে বিভিন্ন ভাষায় যোগাযোগ করতে এবং মানুষকে সরকারের কাছে অ্যাক্সেস করতে সহায়তা করা যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অনেক ভাষায় কথা বলতে পারে। আমরা এর সম্প্রসারণ করতে চাই।
ঠিকানা : আপনাকে ধন্যবাদ।
অ্যাডামস : আপনাকেও ধন্যবাদ।