ঠিকানা ॥ বিশ্ব শান্তি, মৈত্রী ও সৌহার্দ্যরে সেতুবন্ধ

কানিজ ফাতেমা :

ঠিকানা প্রবাস-প্রবাসীদের কথা বলে। কথা বলে দেশ ও দশের। কাজ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। প্রবাসীদের সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক কেন্দ্রবিন্দু ঠিকানা। ঠিকানা তার নিজ মহিমায় সদা উজ্জ্বল। প্রবাসে আলোকিত সমাজ গড়ার একমাত্র হাতিয়ার ঠিকানা। সমাজ ও জাতি গঠনে ঠিকানার অবদান আকাশচুম্বী। ঠিকানা-ই আমাদের ঠিকানা। প্রবাসে বৃহত্তর বাংলাদেশি নাগরিকদের চাওয়া-পাওয়া অনেকটাই ঠিকানা নির্ভরশীল। প্রবাসে ঠিকানাই বলে দিতে পারে আমাদের ঠিকানা ও গন্তব্য। ঠিকানা উত্তর আমেরিকা থেকে প্রচার ও প্রকাশিত হলেও বাংলাদেশের সকল বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পাই এই পত্রিকার মাধ্যমে। বস্তুনিষ্ঠ, স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ সংবাদ প্রকাশের কারণে এটি পাঠকহৃদয়ে স্থান পেয়েছে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একুশের চেতনাকে ধারণ ও লালন করে ফেব্রুয়ারি মাসে আজ থেকে ৩৩ বছর আগে সাপ্তাহিক ঠিকানার যাত্রা শুরু। ঠিকানা উত্তর আমেরিকাসহ বিশ্বের সব দেশে যেখানে বাংলাদেশি, বাংলা ভাষাভাষী রয়েছেন, তাদের সবার কাছে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সাপ্তাহিক পত্রিকা।

এই পত্রিকাটি বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রচার করে পাঠকহৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। প্রবাসীদের আয়োজনে বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠান : পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, পিঠা উৎসব, সাহিত্য আসর ইত্যাদি অনুষ্ঠানের খবর ছবিসহ চমৎকারভাবে প্রকাশিত হয়; যা আমাদের বাংলাদেশিদের জীবনে বাংলা ভাষা, বাংলা সংস্কৃতি, শিল্প ও সাহিত্যের বিকাশে সেতুবন্ধ হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রাম-বাংলার রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রশাসনের সকল খবরই স্থান পায় এই সংবাদমাধ্যমে। বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, খবরাখবরসহ ধর্ম, বিজ্ঞান, শোবিজ-জগতের সকল বিনোদনের খবর ছাপা হয়। প্রবাসীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের খবরও যত্নসহকারে প্রকাশ করা হয়। আমাদের বাংলাদেশি সংস্কৃতি, বাংলা ভাষার চর্চা, প্রচার, প্রসার এবং ভাষাশহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে ঠিকানা। ঠিকানার এই পথচলা শুভ হোক।

আমাদের সবার ভালোবাসার মুখপত্র ঠিকানা। ঠিকানাই পৌঁছে দিতে পারে আমাদের সাফল্যের গন্তব্যে। সোশ্যাল মিডিয়ার এই যুগে ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপের দৌড়ে সাপ্তাহিক ঠিকানা সমতালে চলছে। চৌত্রিশ বছরে যাত্রার শুভক্ষণে আমরা বলতে পারি, এই পত্রিকাটি বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসার, বাংলা ও আমাদের বাংলাদেশি শিল্প-সংস্কৃতি, সাহিত্যের বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। বাংলা বানান, শব্দচয়ন, বাক্য গঠন, লেখার মান, বাস্তবতার সঙ্গে মিল রেখে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সারা বিশ্বের বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে এক জনপ্রিয়তার শীর্ষে ঠিকানার অবস্থান। এই সাফল্য শুধু ঠিকানার একা নয়; এই সাফল্য লেখক, পাঠক, আমাদের সবার। এই সাফল্যের পেছনে একঝাঁক সাংবাদিকের নিরলস পরিশ্রমের পাশাপাশি রয়েছেন একজন বটবৃক্ষ। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক ও ঠিকানার সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি সাবেক এমপি জনাব এম এম শাহীন, যার দূরদর্শী চিন্তাচেতনা ও সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ঠিকানা হয়েছে সাংবাদিকতার তীর্থভূমি। আমার লেখালেখির হাতেখড়ি নব্বইয়ের দশকে দৈনিক সংবাদ হলেও ঠিকানার কল্যাণে আজ আমি কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

এই সাফল্যের একমাত্র দাবিদার ঠিকানা এবং শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ঠিকানার বটবৃক্ষ এম এম শাহীন। ঠিকানা কবি, সাহিত্যিক, কলামিস্ট তৈরির কারিগর। এই প্রবাসে আমরা শ্রমজীবী হয়েও ঠিকানার কল্যাণে আমাদের নামের পাশে একটি সুন্দর পদ-পদবি লিখতে পারি। বাংলাদেশি কমিউনিটিতে কোনো দৈনিক পত্রিকা নেই। সাপ্তাহিক ঠিকানা ‘দৈনিক ঠিকানা’ হিসেবে প্রকাশিত হবেÑএটাই আমাদের প্রত্যাশা। জয় হোক ঠিকানার। মুক্তি পাক গণতন্ত্র। নিপাত যাক স্বৈরাচার। স্বচ্ছ, বস্তুনিষ্ঠ, নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশনের জন্য ঠিকানার নাম পাঠকহৃদয়ে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। চৌত্রিশতম জন্মক্ষণে সম্পাদকমণ্ডলীর সভাপতি, সম্পাদক, সহ-সম্পাদক, উপ- সম্পাদক, ব্যবস্থাপনা কমিটি, সকল কলাকুশলী, লেখক, পাঠকসহ সবার প্রতি রইল নিরন্তর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

লেখক : কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।