ডলারের নতুন দরে খরচ বাড়ল কার্ডেও

ঠিকানা অনলাইন : অভিন্ন দরে সব ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করবে, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রথম দিন থেকে কার্ডে ডলারের খরচ বাড়াল ব্যাংকগুলো। ফলে বিদেশে পড়াশোনা, সেমিনার ফি, অনলাইন কোর্সসহ বিভিন্ন সেবা ও পণ্য কেনায় অর্থ পরিশোধে কার্ডেও খরচ বাড়ল।

একদিনের ব্যবধানেই কার্ডে ডলার নেয়ার খরচ ব্যাংক ভেদে ১৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

সোমবার ও মঙ্গলবার কয়েকটি ব্যাংক কার্ডে ডলার নেয়ার খরচ বাড়িয়ে ১০৮ টাকা পর্যন্ত করেছে। গত রবিবার পর্যন্ত যা ছিল ৯৫ টাকা।

গত রবিবার অভিন্ন দরে ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন-বাফেদা এবং ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি, যা সোমবার থেকেই কার্যকর করেছে অনেক ব্যাংক।

এক বছর আগে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় দরে বিক্রি হওয়া ডলার বিভিন্ন কারণে এখন ঊর্ধ্বগতিতে। এক পর্যায়ে ব্যাংকেই বিক্রি হয়েছিল সর্বোচ্চ ১১১ টাকা। আর খোলা বাজারে তা ১২১ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল।

আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকও গত ৩০ জুন থেকে ডলারের দর নিয়ন্ত্রণে শিথিলতা আনে। তাতে টাকার বিপরীতে ডলার আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে।

গত ৭ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ৯৪ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করে। এরপর গত ৮ আগস্ট ডলারের দাম বাড়িয়ে ৯৫ টাকা করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এই সময়ে ব্যাংকগুলো আমদানি, রপ্তানি, নগদ ও রেমিটেন্সে ডলারের দর ১১১ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করে।

বাড়তি দরে ডলারের খরচ কমিয়ে আনতে গ্রাহকদের নগদ বা কাগুজে ডলারের পরিবর্তে কার্ডে নেওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত ৩০ জুনের পর থেকে এতদিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে দরে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে আসছিল, গ্রাহকদের সেই দরেই কার্ডে ডলার দিত ব্যাংকগুলো।

এতে ব্যাংক ও খোলা বাজার থেকে নগদ ডলার কেনার চেয়ে কার্ডের খরচে ২৬ টাকা পর্যন্ত ব্যয় সাশ্রয় হচ্ছিল।

কার্ডে যখন ডলারের দর ৯৫ টাকা ছিল, খোলা বাজারে তখন সর্বোচ্চ ১২১ টাকা ও ব্যাংক থেকে নগদে ডলার ক্রয়ে গ্রাহকদের গুনতে হয়েছিল ১১১ টাকা পর্যন্ত।

একটা সময়ে খোলা বাজার ও ব্যাংক থেকে নেওয়া নগদ ডলারের সঙ্গে কার্ডের দরের ব্যবধান কিছুটা কমে আসলেও তা ১২ টাকার নিচে নামেনি।

কিন্তু গত ১২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলোতে অভিন্ন দরে ডলার বিক্রির ঘোষণা দেয় বাফেদা ও এবিবি।

নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দেশে আসা রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে ডলারের বিনিময় হার হবে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা। রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা পাবেন ব্যবসায়ীরা।

আর আমদানির এলসি খোলার ক্ষেত্রে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হবে রেমিটেন্স ও রপ্তানির বিনিময় হারের ওয়েটেড গড় করে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ ওয়েটেড গড় হারের সঙ্গে অতিরিক্ত ১ টাকা বেশি নিতে পারবে; অর্থাৎ স্প্রেড সীমা হবে ১ টাকা।

এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রথম দিনই বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে আগের চেয়ে এক টাকা বাড়িয়ে ৯৬ টাকায় ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আর ব্যাংকগুলো নগদ অর্থে যে দরে ডলার বিক্রি করে আসছিল ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে, সেই দরেই কার্ডে বিক্রি শুরু করে দেয়।

মঙ্গলবারও সেই দরেই বিক্রি করতে দেখা গেছে বিভিন্ন ব্যাংককে। এতে এক লাফে কার্ডে ডলার প্রতি খরচ বেড়ে গেছে ১৩ টাকা পর্যন্ত।

ফলে বিদেশে পড়াশোনা, সেমিনার ফি, অনলাইন কোর্সসহ বিভিন্ন সেবা ও পণ্য কেনায় অর্থ পরিশোধে কার্ডেও খরচ বাড়ল।

ব্যাংকগুলোর ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক রপ্তানি বিল নগদায়ন করেছে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকায়। আমদানিতে ডলার বিক্রি করেছে ১০৭ টাকা ৫০ পয়সায়।

এসময়ে নগদে ডলার বিক্রি করেছে ১০৬ টাকা ৫০ পয়সায়, সোমবার যা ছিল ১০৭ টাকায়। আর কর্ডেও মঙ্গলবার ডলার বিক্রি করেছে ১০৬ টাকা ৫০ পয়সায়, সোমবার যা ছিল ১০৭ টাকায়।

ফলে সিটি ব্যাংক থেকে কার্ডে ডলার কিনতে এখন একজন গ্রাহককে অতিরিক্ত ১১ টাকা ৫০ পয়সা বেশি গুনতে হবে। কারণ গত রোববারও কার্ডের মাধ্যমে ডলার নিতে খরচ পড়ত ৯৫ টাকা।

আর ব্র্যাক ব্যাংকে এ খরচ ১০৭ টাকা, অন্য দিকে ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল) কার্ডে ডলার কেনার খরচ বেড়ে মঙ্গলবার হয়েছে ১০৪ টাকা।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক কার্ডে ডলার বিক্রি করেছে ১০৮ টাকায়, আবার ডাচ্‌ বাংলা ব্যাংক কার্ডে বিক্রি করছে ১০৫ টাকা দরে।

লেনদেন সহজ হওয়ায় দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিভিন্ন ধরনের কার্ড। অনেক ব্যাংকই এখন আন্তর্জাতিক কার্ডের পাশাপাশি সাধারণ ডেবিট কার্ডের মাধ্যমেও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ চালু করেছে।

এতে দিন দিন বাড়ছে কার্ডের মাধ্যমে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক লেনদেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, গত জুন মাসে কার্ডের মাধ্যমে ৩৯৭ কোটি টাকার সম পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন হয়েছে।

এ হিসাবে গত জুন মাসে দৈনিক গড়ে ১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়েছে কার্ডের মাধ্যমে। অন্যদিকে গত বছরের জুন মাসে যেখানে খরচ হয়েছিল ১২৫ কোটি ৩০ লাখ টাকার সম পরিমাণের। যেখানে দৈনিক গড়ে খরচ হয়েছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার সম পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।

এক বছরের ব্যবধানে কার্ডের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্র্রা খরচে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২১৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এদিকে খোলা বাজারে মঙ্গলবার ডলারের ঘোষিত বিক্রয় দর ছিল ১০৭ টাকা ৫০ পয়সা। আর ক্রয় দর ছিল ১০৬ টাকা।

কিন্তু রাজধানী ঢাকার মতিঝিল ও গুলশান এলাকার মানি চেঞ্জার প্রতিষ্ঠানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, ডলার বিক্রির সর্বোচ্চ দর ছিল ১১৪ টাকা ২০ পয়সা।

ঠিকানা/এসআর