ডান-বামে আ’লীগ-বিএনপির শিকার : ছোটদের বড় মিশন

বিশেষ প্রতিনিধি : নির্বাচন সামনে রেখে ছোট দলগুলোর বেশ সমাদর বড় দুই দলের কাছে। তা নামসর্বস্ব হলেও। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন না থাকলেও। তাদের পক্ষে টানার দাওয়াই ছড়ানো হচ্ছে বড় দুই দল থেকেই। কেবল বড় দুই দল নয়, ক্ষমতায় ম্যাটার করে এমন কয়েক জায়গা থেকে নিয়মিত দাওয়াত-খামও পেতে শুরু করেছে ছোটরা। এ সুযোগে ছোটরাও সমীকরণের দোকান খুলে বসেছে। ছোটদের কাছে টানার কৌশল ও প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছে ক্ষমতাসীনরা। ক্ষমতাহীন বিএনপি জোট ভেঙে
দৃশ্যত ছোটদের দূরে সরিয়ে দিলেও মিত্রতা ছাড়েনি। রাজপথের আন্দোলনে কিছুটা দূরবর্তী জায়গায় রেখে কাজে লাগাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসে মন্ত্রিসভায় মহাজোট ও ১৪ দলের শরিকদের জায়গা না দিলেও হাতছাড়া করেনি। নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বশ মানিয়ে রাখছে। অভিমান করে দূরে সরে গেলে পথেঘাটে মার খাওয়াসহ ভোগান্তিতে পড়তে হবে, তা বোঝাতে পেরেছে তাদের। আওয়ামী লীগের মিত্রদের মাঝেমধ্যে সরাসরি খোঁজ রাখছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিয়মিত ভালো-মন্দ দেখার বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমির হোসেন আমু, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বাম ঘরানার বোঝাপড়া ভালো হলেও ভোটের অঙ্ক মেলাতে ডানকে হাতে রাখার চেষ্টাও বেশ। ২০১৪ বা ১৮ সালের মতো না হয়ে শেষ পর্যন্ত ভোটের বিষয় নিশ্চিত হয়ে গেলে তাদের আয়ত্তে রাখা জরুরি মনে করছে আওয়ামী লীগ। সুশীল সমাজ ও শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনকে হাতে রাখতে তারা বাম ধারার দলগুলোকে কাজে লাগাচ্ছে। আর দক্ষিণপন্থীদের খাটাচ্ছে সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে। কারণ ইসলামি দলগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের একধরনের আগ্রহ রয়েছে। এ ছাড়া জামায়াতে ইসলামী, চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দলের কিছু মুসলিম রাষ্ট্রের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগের সুবিধায় ভাগ বসাতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুদিকেই ভীষণ মনোযোগ।
ইসলামি দলগুলো যেন বিএনপির দিকে একেবারে হেলে না যায়, তা নিশ্চিত করতে সরকারের কিছু অ্যাজেন্ডা রয়েছে। আয়ত্তে নিতে কোনোটির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে, কোনোটিকে দিচ্ছে বিস্তর সুবিধা। ইসলামি কিছু দলকে দিয়ে একটি জোট বা ফ্রন্ট করে দেওয়ার সরকারি আয়োজনও রয়েছে। ইসিতে নিবন্ধিত ৪০টি দলের মধ্যে ধর্মভিত্তিক ইসলামি দল ১০টি। এর মধ্যে ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও খেলাফত মজলিসসহ কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক দল ছয়টি। তারা নৈতিকভাবে জামায়াত-বিরোধী।
এ-সংক্রান্ত গুরুদায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কয়েক নেতাকে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার বিশেষ দায়িত্ব স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের। কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের কাছ থেকেও ভালো সহায়তার নিশ্চয়তা রয়েছে।
এদিকে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর দূরত্বকে কাজে লাগানোর ছকও রয়েছে সরকারের। বিএনপি নির্বাচনে না এলে বা বয়কট করলে জামায়াতকে ভোটের মাঠে কীভাবে রাখা যায়, তা নিয়েও কাজ চলছে। জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগের এ ধরনের অতি উৎসাহে বিরক্ত সরকারের সহযোগী ১৪ দল। চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের মতিগতিকেও ভালোভাবে নিচ্ছে না তারা। এতে অদূর ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ বড় রকমের ক্ষতির শিকার হবে বলে মত বাম মিত্রদের। তাদের পরামর্শ, চরমোনাই পীরের দলকে দিয়ে ধর্মভিত্তিক জোট তৈরি করে দেওয়া।
ভোট এবং মাঠ ধরে রাখতে বামপাড়াকে অগ্রাহ্য করছে না সরকার। এর নেপথ্যে বিশেষ আরেক কারণ ভারত-চীনের মতো বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর দৃষ্টি কাড়া। ভোট ব্যাংক না থাকলেও সাম্যবাদী দল, ওয়ার্কার্স পার্টির মতো দলগুলোর একটি সংযোগ রয়েছে এসব দেশে। জাসদের ওপরও একটি বন্ধুরাষ্ট্রের সমর্থন রয়েছে। বিদেশি সমর্থন প্রশ্নে র‍্যাঙ্কিং ভালো সিপিবি-বাসদের। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সঙ্গী পাততে নারাজ। তবে তারা যেন বিএনপির দিকে না ঝোঁকে, সেই পরিকল্পনা আছে সরকারের। রয়েছে কাদের সিদ্দিকীকে বাগে রাখার চেষ্টাও। ক্ষমতাসীনদের কাছ থেকে এমন কদর এবং বিএনপির দিক থেকে মিতালি গড়ার এ চেষ্টা ডান-বাম দুদিকের ছোট দলগুলোর জন্যই বেশ আনন্দময়। সেই দৃষ্টে আগামীতে ছোটর মাঝেই বড় খেলার বেশ আশা তাদের। এর আলোকে নির্বাচন সামনে রেখে তাদের পরিকল্পনাও এগোচ্ছে। যার সাফল্য-ব্যর্থতা নির্ভর করছে সরকারবিরোধী আন্দোলনের মাঠের ওপর।