ডিসেম্বরে সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি দেবে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিনিধি : বিএনপি সরকারবিরোধী সর্বাত্মক আন্দোলনে নেমেছে। প্রথম পর্যায়ে বিভাগীয় পর্যায়ে মহানগরগুলোতে সমাবেশ করছে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও সমাবেশগুলোতে বিপুল জনসমাবেশ হয়েছে। বাস-লঞ্চ মালিকদের দিয়ে ধর্মঘট করানোর পরও বিরোধী দলের সমাবেশে বিপুল জনসমাবেশ সরকারি শিবিরেও চিন্তার উদ্রেক ঘটিয়েছে। পাল্টা সমাবেশ করে বিপুল জনসমাগম দেখানো হচ্ছে। যদিও সরকারি দল থেকে বলা হচ্ছে, বিষয়টি পাল্টাপাল্টি নয়।
বিএনপি অবশিষ্ট বিভাগীয় শহরের সমাবেশগুলো শেষ করে ডিসেম্বরের মহান বিজয়ের মাসে ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। ১০ ডিসেম্বরের এই সমাবেশ থেকে সরকারকে চূড়ান্ত আলটিমেটাম দেওয়া হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান, তার আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন তাদের মুখ্য দাবি। কিন্তু সরকার তাদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা ভাবছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সরকার বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার কথা চিন্তাও করছে না। তাতে বিএনপি যদি নির্বাচনে নাও আসে, তাদের ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। তবে সরকার এমন কিছু নাটকীয় সিদ্ধান্ত নেবে, যা বিএনপিকেও তার অধিকাংশ নেতাকর্মীর কাছে প্রশ্নের মুখোমুখি করতে পারে। সরকারের সিদ্ধান্তের ফলে বর্তমানে বিএনপির সহযোগী মিত্রদেরও বিপাকে ফেলবে। তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্র প্রশস্ত করবে। কর্নেল ড. অলির লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, মেজর জেনারেল ইবরাহিমের কল্যাণ পার্টি, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ কয়েকটি বামপন্থী দল, এমনকি আ স ম রব, ডাকসুর সাবেক ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ আরো উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দল ও নেতা নির্বাচনমুখী হতে পারেন। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্টরা জোর তৎপরতা অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা যথারীতি যোগাযোগসহ যথাযথ প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপি সরকারবিরোধী সকল দলকে জোটবদ্ধভাবে বা দলীয়ভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে আন্দোলনে অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান অব্যাহতভাবে গত এক বছর ধরেই জানাচ্ছে। কিন্তু সেই আন্দোলনের দেখা মিলছে না। তবে নতুন করে বিএনপি সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বসতে যাচ্ছে। জামায়াত ও হেফাজতের নেতৃত্বে ইসলামি দলগুলো সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন প্রশ্নে বিভক্ত। তারা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তবে সরকারের পদত্যাগ চায় না। জামায়াতের তরুণ, যুবকেরা বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি নামে নতুন দল গঠন করেছেন। তারা নিবন্ধন চেয়েছেন। জামায়াতের একটা অংশ তাদের এ উদ্যোগের পক্ষে নয়। তারা জামায়াত নামেই নিজেদের অস্তিত্ব জাহির করতে চান। জামায়াত ও হেফাজতের মধ্যকার একটি অংশ বিএনপিন্থী এবং তারা সরকারবিরোধী আন্দোলনে অবতীর্ণ হতে আগ্রহী। বামপন্থী দলগুলো, আ স ম রবের নেতৃত্বাধীন সাতদলীয় জোটসহ সমমনা অপরাপর দলগুলোও বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে জোরালোভাবেই অংশ নেবে। বিভাগীয় সমাবেশগুলো শেষ করে আগামী ডিসেম্বরে বিএনপি ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে। এখান থেকে সংসদে বিএনপির ছয় এমপি পদত্যাগ করার কথা ঘোষণা করবেন। তবে তারা তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করবেন, নাকি পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে সরকারকে দাবি পূরণের জন্য এক মাসের আলটিমেটাম দেওয়ার পর স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন, সে ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
ছয় এমপির পদত্যাগের বিষয়টি আন্দোলনে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে বিএনপি প্রত্যাশা করলেও তা নাও হতে পারে। কারণ বিএনপির গত নির্বাচনে নাটকীয়ভাবে অংশগ্রহণ এবং ছয়জন সদস্যের সংসদ সদস্যপদ লাভের বিষয়টি বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সাধারণ মানুষের কাছেও প্রশ্ন হয়ে রয়েছে। বিএনপি সরকারবিরোধী তীব্র আন্দোলন গড়ে তুললেও জনমনের শতভাগ আস্থা তারা কীভাবে অর্জন করবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। ছয় এমপি পদত্যাগ করলেও তার কোনো প্রভাব সংসদ ও তার বাইরে জনমনে পড়বে না। আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চেও যদি তারা পদত্যাগ করেন, সরকার তাদের আসনে উপনির্বাচন করিয়ে নেবে। ঐক্যফ্রন্ট নেতা ড. কামাল হোসেনের পার্টিকে সরকার দুটি আসনে ছাড় দেয়। তকে বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ড. কামালের দুই এমপি পদত্যাগ করছেন না।
বিএনপির প্রত্যাশা জি এম কাদেরের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির এমপিরাও পদত্যাগ করবেন। বিএনপির সঙ্গে এরশাদের জাতীয় পার্টির এমপিরা পদত্যাগ করলেই কেবল একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। বিপুলসংখ্যক আসনে উপনির্বাচন করিয়ে নিয়ে সংসদ ও সরকারকে টিকিয়ে রাখা সহজ হবে না। জি এম কাদের জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা হতে চান। দলের সংসদ সদস্যরা তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে স্পিকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তাদের আবেদন অনুযায়ী পদক্ষেপ না নেওয়ায় তারা তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে অবিলম্বে কাদেরকে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের নেতা ঘোষণার জন্য স্পিকারের কাছে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সহসা স্পিকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন না বলেই জানা যায়। জি এম কাদেরকে নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে অবিশ্বাস রয়েছে। কাদেরের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিবের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ সম্পর্কে সরকারি মহল অবগত আছে। কাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে বলেও সরকারি মহল শঙ্কিত। এ কারণে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সরকারি মহল অনেক বেশি হিসাবি পদক্ষেপ নিচ্ছে।
ডিসেম্বরে ঢাকা সমাবেশ থেকে বিএনপি সরকার পতনের চূড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করবে। এতে হরতাল, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও সচিবালয় অবরোধ, রেলপথ-নৌপথ-রাজপথ অবরোধ, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর অবরোধের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে।