ডি ট্রেনে হেইট ক্রাইমের শিকার বাংলাদেশী বরুণ


ঠিকানা রিপোর্ট: ব্রুকলীনে হেইট ক্রাইমের শিকার হলেন বাংলাদেশী বরুণ কে চক্রবর্তী (৫০)। মারাত্মক আহত অবস্থায় বরুণ কে চৌধুরী এখন ম্যানহাটানের বেলভ্যু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ দিকে হামলাকারীকে ট্রানজিট পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বরুণ কে চক্রবর্তীর ছোট ভাই বিশ্বজিত চক্রবর্তী ঠিকানাকে জানান, আমার বড় ভাই বরুণ কে চক্রবর্তী অন্যান্য দিনের মত গত ১১ ফেব্রুয়ারি কাজে গিয়েছিলেন। তিনি কাজ করেন ব্রুকলীনের আলট্রানিক্স কর্পোরেশনে। মূলত: এটি একটি ইলেকট্রনিক্স কোম্পানী। ১১ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করে তিনি ম্যানহাটানের বাসায় ফিরে আসছিলেন। বাসায় আসার জন্য প্রথমে তিনি আর ট্রেনে উঠেছিলেন। এক সময় আর ট্রেন পরিবর্তন করে তিনি ম্যানহাটন বাউন্ড ডি ট্রেনে উঠেন। ডি ট্রেনে ওঠে তিনি একটি সিট খালি হলে সেই সিটে বসেন। তার পাশেই বসেছিলেন একজন স্প্যানিস। আমার ভাই বসার সাথে সাথেই ঐ স্প্যানিস আমার ভাইকে প্রশ্ন করে- তুমি মুসলিম নাকি? সেই সাথে বিশ্রি ভাষায় গালাগাল দিতে থাকে। প্রশ্ন শুনে আমার ভাই তাকে বলে তুমি আমাকে এই প্রশ্ন কেন জিজ্ঞেস করছো। ঝামেলা এডানোর জন্য আমার ভাই কিছু না বলে ব্যাগ থেকে একটি কমলা বের করে খেতে থাকে। এ সময় স্প্যানিস লোকটি আমার ভাই’র কমলার মধ্যে থু থু দিতে থাকে এবং কুনই দিয়ে পেটের মধ্যে গুতো দিতে থাকে। লোকটির এই ধরনের আচরণ দেখে আমার ভাই বলে তুমি এই রকম অচরণ করলে আমি পুলিশ কল করবো। তাতেও লোকটি শান্ত হয়নি, উল্টো আরো ক্ষেপে যায়। এই অবস্থায় আমার ভাই বরুণ কে চক্রবর্তী ফোন বের করে ঐ লোকটি ছবি তুলতে গেলেই সে আমার ভাই’র উপর হামলা চালাতে থাকে। আমার ভাইকে কিল- ঘুষি মারতে মারতে একেবারে বগির এক কোনায় নিয়ে যায়। আমার ভাই চিৎকার দিতে থাকে। বিষয়টি সব যাত্রী দেখছিলো কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছিলো না। এক সময় আমার ভাই একজন মহিলাকে পুলিশ কল করার জন্য অনুরোধ করে। আমার ভাই’র অনুরোধ পেয়ে মহিলাটি পুলিশ কল করে এবং ট্রেনের ইমার্জেন্সি চেইন টেনে ধরে। এরই মধ্যে ডি টেনটি গ্র্যান্ড এভিনিউ স্টেশনে এসে থেমে যায়। সাথে সাথেই ট্রানজিট পুলিশ এসে আমার ভাইকে উদ্ধার করে এবং স্প্যূানিস হামলাকারীকে গ্রেফতার করে। বিশ্বজিত চক্রবর্তী জানান, পুলিশ রক্তাক্ত অবস্থায় আমার ভাইকে ম্যানহাটানের বেলভ্যু হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং হামলাকারীকে থানায় নিয়ে যায়। তিনি বলেন, হামলাকারীর আক্রমণে আমার ভাই’র মাথা কেটে যায়, এলোপাথাড়ি কিলঘুষিতে তার শরীরের বেশ কয়েকটি স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়। তিনি বলেন, ডাক্তার বলেন, আমার ভাই’র মাথায় সেলাই দিতে হবে। ঠিকানার এক প্রশ্নের জবাবে বিশ্বজিৎ বলেন, এটা অবশ্যই হেইট ক্রাইম। আমার ভাই’র উপর হামলার আগে সে প্রশ্ন করেছিলো আমার ভাই মুসলিম কী না? মুসলমানদের ঘৃণা করে বলেই সে খাবারের উপর থু থু দিয়েছিলো। তিনি তার ভাই’র উপর হামলার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। তিনি আরো বলেন, আমরা এখনো পুলিশ রিপোর্ট পাইনি। পুলিশ রিপোর্ট পেলেই বিষয়টি জানা যাবে। তবে ডিটেকটিভরা আমার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। তিনি বলেন, এমন হামলায় আমরা হতবিহ্বল। দীর্ঘদিন ধরেই নিউইয়র্কে রয়েছি, এমন ন্যাক্কারজনক হামলার শিকার হইনি।
বিশ্বজিৎ আরো জানান, ২০০৭ সালে তারা দুই ভাই আমেরিকায় এসেছিলেন এবং ২০০৮ সাল থেকেই তারা ম্যানহাটানে বসবাস করছেন। তার ভাই বরুণ কে চক্রবর্তী স্ত্রী শুলগ্না ভট্টাচার্জকে নিয়ে থাকেন ম্যানহাটানের ওয়েস্ট ৩৯ স্ট্রিটে। পাশেই থাকেন তিনি। বরুণ কে চক্রবর্তীর দেশের বাড়ি সিলেটের মৌলভীবাজার জেলায়। তিনি আরো জানান, তার দুই ভাই আমেরিকায় থাকলেও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কানাডায় থাকেন।