ঢাকার সড়কের সৌর বাতি প্রকল্প ব্যর্থ

পয়সা হজম, খেইল খতম

রাজধানী ডেস্ক : বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে রাজধানীর সড়কগুলোয় সৌর বাতির ব্যবস্থা করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু চাহিদা মতো আলো না পাওয়ায় এই প্রকল্পকে ‘ব্যর্থ’ অভিহিত করে সৌর বাতির পাশাপাশি এলইডি বাতি লাগানো হয়। কিন্তু সৌর প্যানেলগুলো খুলে নেয়া হয়নি। ফলে রক্ষাণাবেক্ষণের অভাবে এসব প্যানেল বিকল হওয়ার পথে। সূত্র জানায়, সড়কে সৌর বাতি লাগানোর কিছু দিন যেতে না যেতেই প্রয়োজনীয় আলো পাওয়া যেত না। রাস্তা অন্ধকারই থাকত। একপর্যায়ে স্থানীয়দের অনুরোধে সোয়া দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রকল্পটি অপসারণ করে সেখানে বসানো হয় এলইডি বাতি। কিন্তু এলইডি বাতির পোলগুলোর ওপরে এখনও রয়েছে সৌর প্যানেল।

সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, প্যানেলগুলো খুলে নিয়ে সিটি কর্পোরেশন অন্য কাজে ব্যবহার করতে পারে। এতে কর্পোরেশনের কিছুটা হলেও বিদ্যুৎ খরচ কমবে। কর্পোরেশন যদি অতি অল্পসময়ের মধ্যে কাজটি না করে তাহলে কোটি টাকা মূল্যের এসব প্যানেল বিকল হয়ে পড়বে।

তবে এজন্য সংস্থার বিদ্যুৎ সার্কেল থেকে কর্তৃপক্ষের কাছে একটি প্রস্তাবনাও পেশ করা হয়েছে। তবে প্রকল্পের মাধ্যমে সৌর প্যানেলগুলো সড়কে স্থাপন করায় সেখান থেকে খুলে নিয়ে তা অন্য কাজে ব্যবহারে জটিলতা দেখছে সংস্থাটির শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। এ জন্য ফাইলটি অনুমোদন করা হচ্ছে না। জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরীক্ষামূলকভাবে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয় রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ থেকে নটর ডেম কলেজ পর্যন্ত সড়কে। এ প্রকল্পটি সফল হলে পরে আরামবাগ, বাংলামটর, গুলশান, হাতিরঝিল, নাবিস্কো এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু প্রকল্পের ফলাফল পর্যালোচনার আগেই এসব এলাকায় এটি বাস্তবায়ন করা হয়। সূত্র জানায়, পরীক্ষামূলক বাস্তবায়িত কাকরাইল-নটর ডেম কলেজ প্রকল্পে ৬১টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে। প্রতিটি পোস্টের ওপর বসানো সাড়ে ৫ ফুট আয়তনের এক জোড়া সোলার প্যানেল। ৬১ পোলে মোট ১২২টি বাতির এই প্রকল্প বাস্তবায়নে বরাদ্দ ছিল ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। তবে দরপত্রে সর্বনিম্ন ২ কোটি ২৪ লাখ ২১ হাজার ৬৫০ টাকার দরদাতা পাওয়ায় পুরো টাকার আর প্রয়োজন হয়নি।

অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান প্রকল্পে বরাদ্দের অর্ধেক টাকায় দরপত্র পাওয়ায় নিম্নমানের জিনিসপত্র দিয়ে কাজ শেষ করেছে। প্যানেলের বাতিগুলো ছিল মাত্র ৬০ ওয়াটের। অথচ এই সড়কে আগের সোডিয়াম বাতিগুলো ছিল ১৫০ ওয়াটের। প্রকল্পে বলা হয়, সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সূর্যের আলো সংরক্ষণ করে রাজধানীর সড়কে বাতিগুলো জ্বলবে। এতে জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না। পরিবেশবান্ধব এ প্রকল্পটি নগরীর সৌন্দর্য বাড়ানোর পাশাপাশি কর্পোরেশনের খরচও কমাবে। কিন্তু প্রকল্পটি স্থাপনের পর থেকেই বাতিগুলোতে স্বল্প আলো, বারবার নষ্ট হওয়া, সামান্য ঝড়ে পোলগুলো ভেঙে পড়া, সৌর প্যানেলে ময়লা জমে থাকাসহ নানা ত্রæটি ধরা পড়ে। অথচ এসব বিষয়ে বুয়েট থেকে বিস্তারিত পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয়েছিল। বুয়েটও তখন প্রকল্পটির পক্ষে সমর্থন দিয়েছিল। প্রকল্প এলাকার দোকানিরা জানান, প্রকল্প এলাকাজুড়ে সন্ধ্যা হলেই ভয়াবহ অন্ধকার নেমে আসত। কিন্তু সম্প্রতি এলইডি বাতি লাগানোর কারণে শহরের অন্য সড়কের মতো এই এলাকার সড়কগুলোও আলোকিত থাকে। নতুন করে এলইডি বাতি লাগানো হলেও আগের প্যানেলগুলো সরিয়ে নেয়া হয়নি।